ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কথা ও গানে কলিম শরাফীকে শ্রদ্ধা জানাব ॥ তপন মাহমুদ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

কথা ও গানে কলিম শরাফীকে শ্রদ্ধা জানাব ॥ তপন মাহমুদ

বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী কলিম শরাফীর পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী আগামী ২ নবেম্বর। সঙ্গীত জগতের এই মহান ব্যক্তির স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হবে এ অনুষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি শিল্পী তপন মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়। আজকের আয়োজন নিয়ে বলুন তপন মাহমুদ: আনুষ্ঠানিক ধারাবাহিকতায় নয়, আমরা হৃদয়ের গভীরতা থেকে সঙ্গীত জগতের এই মহান ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করতে চাই। তিনি আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। গান আর স্মৃতিকথা দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাব। প্রধান আলোচক থাকবেন সংস্কৃতিকর্মী কামাল লোহানী ও সৈয়দ হাসান ইমাম। শুরুতে সংস্থার শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত পরিবেশিত হবে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার’ এ দুটি গান। পরে কলিম শরাফীর জীবনভিত্তিক ১০ মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হবে। এরপর ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পীদের কথা ও গান দিয়ে শ্রদ্ধা জানাব এই শিল্পীকে। কাছ থেকে দেখা কলিম শরাফী সম্পর্কে কিছু বলুন তপন মাহমুদ: আমি কলিম শরাফীকে পেয়েছি তাঁর যৌবন পার করার পর। আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় ১৯৬৯ সালে এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায়। এতে আমি ছিলাম প্রতিযোগী, তিনি ছিলেন বিচারক। সে প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হওয়ার সুবাদে আমি তাঁর স্নেহভাজন হয়ে গেলাম। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৮৮ সালে যখন সংস্থা প্রতিষ্ঠা হয় তখন তিনি ছিলেন সভাপতি আমি ছিলাম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বহুমুখী সৃষ্টির তেমন কিছুই আমরা দেখতে পাইনি। তিনি একাধারে গায়ক, পরিচালক, স্বাধীনতা সংগ্রামী সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন সংস্কৃতি জগতের এক মহীরুহ। তাঁর ছিল না কোন অহঙ্কার, খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়ার প্রবণতা ছিল। তবে তাঁর বর্ণাঢ্য অধ্যায় আমি পাইনি, পেয়েছি শেষটুকু। বাংলা গানে কলিম শরাফীর অবদান সম্পর্কে বলুন তপন মাহমুদ: সব বড় মাপের শিল্পীদের এক অভিমান থাকে, কলিম ভাইয়ের মধ্যেও তা ছিল। তাঁর আলোকিত সময়ের কোন সৃষ্টি আমরা পরবর্তিতে পাইনি। তাঁর ভেতরে সে অসাধারণ ক্ষমতা ছিল রক্ষণের অভাবে আমরা নিতে পারিনি। তখন কোন রেকর্ড ছিল না। মূল কথা হলো তাঁর শ্রেষ্ঠ সময়ের শ্রেষ্ঠ কর্মগুলো আমরা পাইনি। তবে গান বা সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তাঁর যে ক্ষমতা ছিল সেটা আমরা পরবর্তিতে শুনেছি। আপনার মতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা কেমন গাইছেন? তপন মাহমুদ: অনেকেই খুব ট্যালেন্ট এবং তারা মূল ধারার গানই করছেন। তবে খুব কম সংখ্যক আছেন যারা এই ধারা থেকে সরে যাচ্ছেন। তাছাড়া বেশিরভাগ শিল্পীরা খুব ভাল গান করছেন এবং তারা অনেক শিক্ষিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন কতটা সময়োপযোগী ? তপন মাহমুদ: সব অবস্থায়ই রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ধরা যায় রবীন্দ্রনাথের ‘দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস’ বর্তমান সময়ে এটা বেশি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ গানটির মূল তাৎপর্য হলো হে প্রভু তুমি আমাকে শান্ত করে দাও। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে। শুধু গান নয়, তাঁর কবিতা ও বিভিন্ন লেখা সব সময়ই আমাদের পথ চলার সাথী। রবীন্দ্রনাথের গান কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বিকৃতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এটাকে কিভাবে দেখবেন ? তপন মাহমুদ: এ বিকৃতি রবীন্দ্রনাথের জীবিত অবস্থায়ও ছিল। কিন্ত কোন বিকৃতিই টিকে থাকেনি। আমার কথা হলো রিমেক্স করতে হলে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আরও প্রতিভাধর বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোন প্রয়োজন নেই। গান নিজে লিখে যত ইচ্ছে রিমেক্স করুন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে নয়। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাঁর গুরুদেবকেও ছাড় দেননি। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে যথেচ্ছভাবে উপস্থাপন হচ্ছে কলকাতাতে বেশি। কোন একটি মডেলকে দোলায় বসিয়ে দিয়ে ‘আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও দোলাও’ যিনি প্রয়োগ করছেন, হয় তিনি না বুঝে করছেন, না হয় তিনি কিছুই বোঝেন না। -গৌতম পা-ে
×