ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একেকটি সেবার ফি একেক স্থানে একেক রকম, জনগণের দুর্ভোগ;###;ঝুঁকিতে পড়ছে চিকিৎসাসেবা;###;চিকিৎসাসেবা মেটাতে গিয়ে মোট জনগোষ্ঠীর ৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে;###;জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মধ্যবিত্তরা দরিদ্র এবং দরিদ্ররা নিঃস্ব হচ্ছে

আইনের তোয়াক্কা নেই ॥ সাধারণের নাগালের বাইরে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

আইনের তোয়াক্কা নেই ॥ সাধারণের নাগালের বাইরে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়

নিখিল মানখিন ॥ হাঁটুর নিচের দুটি হাড় ভেঙ্গে গেছে মোঃ আবুল কালামের (৪৩)। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার বাঘাইতলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। পঙ্গু হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল না পেয়ে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন কালামের অভিভাবকরা। পঙ্গু হাসপাতালের কাছেই মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি ক্লিনিকে রোগীর লোকজন যোগাযোগ করলে অপারেশন ফি ৬০ হাজার টাকা চেয়ে বসেন চিকিৎসকরা। দর কষাকষি করে ৫০ হাজারে নেমে এলেও তা যোগান দিতে পারেননি আবুল কালাম। আরেকটি ক্লিনিকে গেলে চাওয়া হয় ৪৫ হাজার টাকা। দর কষাকষির এক পর্যায়ে সেখানে ৩৬ হাজার টাকায় অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান আবুল কালাম। এভাবে মানুষের জীবন বাঁচানোর শেষ আশ্রয়স্থল অনেক বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র যেন হয়ে যাচ্ছে কাঁচাবাজারের মতো দর কষাকষির জায়গা! একেকটি সেবার ফি একেক স্থানে একেক রকম। ফলে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ঝুঁকিতে পড়ছে চিকিৎসাসেবা। এ বিষয়ে তিন দশকের পুরনো একটি আইন আছে। তবে তা কেউ মানে না। আর সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের মানুষের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে ২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে খরচ করেন। ২৬ শতাংশ ব্যয় বহন করে সরকার। বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ব্যবসায়িক বীমা কোম্পানি বহন করে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা ॥ বেসরকারী হাসপাতালসমূহের চিকিৎসাসেবার খরচ অনেকটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিটি অপারেশনে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। প্রতিদিন সিসিইউ সেবা পেতে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আইসিইউ সেবা পেতে লাগে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এভাবে করোনারী এনজিওগ্রামে ১৫ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, এমআরআই ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা, ইসিজি ৩০০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, এক্সরে ৫০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ১ থেকে ৩ হাজার টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ১৫ হাজার টাকা, ইউরিন ২০০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ৪৫০ টাকা। একেক প্রতিষ্ঠানে একেক ফি ॥ বেসরকারী চিকিৎসার প্রতিষ্ঠান ভেদে একই রোগের প্যাথলজি বা ল্যাব পরীক্ষার ফি একেক রকম। রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ইকোকার্ডিওগ্রাম (সাদাকালো) করতে ৭০০ টাকা নেয়। একই পরীক্ষা করাতে কমফোর্ট হাসপাতালে ১ হাজার টাকা, স্কয়ার হাসপাতালে ১২২৭ টাকা, ল্যাবএইডে ১ হাজার টাকা নেয়া হয়। আলট্রাসনোগ্রাম (ফুল এ্যাবডোমেন, রঙিন) করাতে কমফোর্ট হাসপাতালে নেয়া হয় ১২০০ টাকা, ল্যাবএইডে ১২০০ ও স্কয়ারে ১৪৩২ টাকা। এই পরীক্ষাটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮০০ টাকা, গ্রীন রোডের সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬০০ টাকায়ও করানো যায়। ইটিটি (এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট) করতে ল্যাবএইডে খরচ হয় ২ হাজার টাকা ও স্কয়ার হাসপাতালে ২১৭৩ টাকা। ল্যাবএইড হাসপাতালে ব্রেনের সিটিস্ক্যান করতে ৪ হাজার টাকা নেয়া হয়। এ পরীক্ষাটি করাতে পপুলার হাসপাতালে সাড়ে ৩ হাজার ও স্কয়ার হাসপাতালে ৪ হাজার ৯০ টাকা নেয়া হয়। ব্রেনের এমআরআই করাতে ল্যাবএইড সাড়ে ৬ হাজার টাকা, স্কয়ার ৭ হাজার ১৫০, পপুলার ৬ হাজার টাকা নিচ্ছে। সিগমা মেডিক্যাল, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স, সন্ধি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফেইথ ল্যাব লিমিটেডÑ এ চারটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের অবস্থান মোহাম্মদপুরে। একই মানের হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যে পার্থক্য রয়েছে। রক্তের বিলিরুবিন পরীক্ষা করাতে সিগমা মেডিক্যালে ১৫০ ও ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে ১শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। একই পরীক্ষার জন্য ফেইথ ল্যাব লিমিটেড এবং সন্ধি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিচ্ছে ২০০ টাকা। রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষাটি করাতে পপুলার হাসপাতালে ৪০০ টাকা নেয়া হয়, স্কয়ার হাসপাতালে লাগে ৪১০ টাকা। আবার একই পরীক্ষা মোহাম্মদপুরের ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করানো যাচ্ছে ২০০ টাকায়। ভর্তি ফি ও বেড ভাড়া ॥ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তি ফি ও বেড ভাড়ায়ও পার্থক্য আছে। রোগী ভর্তির আগে অগ্রিম জমা (ডিপোজিট) রাখতে হয় ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১০ হাজার টাকা, পপুলার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৫ হাজার এবং এ্যাপোলো হাসপাতালে ৩০ হাজার টাকা। স্কয়ার হাসপাতালে কক্ষের মান অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ডিপোজিট দিতে হয়। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশনসহ ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা। পপুলার হাসপাতালে দিতে হয় ৫০০ টাকা। ল্যাবএইড হাসপাতালের শয্যার সর্বনিম্ন দৈনিক ভাড়া ১৮০০ টাকা। ডিলাক্স ক্যাবিন ৫ হাজার টাকা। স্কয়ার হাসপাতালে সর্বনিম্ন বেড ভাড়া ২ হাজার টাকা, টুইন শেয়ার কক্ষে প্রতি শয্যার ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার টাকা, সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ড ৫৫০০ টাকা, সিঙ্গেল ডিলাক্স ক্যাবিনের ভাড়া ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এ্যাপালো হাসপাতালে স্ট্যান্ডার্ড বেডের দৈনিক ভাড়া ২৫০০ টাকা, সেমি-প্রাইভেট ৩ হাজার ৭৫০ টাকা, সিঙ্গেল প্রাইভেট ক্যাবিনের ভাড়া ৬ হাজার ৭৫০ টাকা। ডিলাক্স ক্যাবিনের দৈনিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। পপুলার হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেও বেড ভাড়া দেড় হাজার টাকা। পুরনো আইন মানে না কেউ ॥ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সেবার ফি নির্ধারণ করা আছে ‘মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস এ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’-এ। বেসরকারী হাসপাতাল মালিক ও চিকিৎসকরা বলছেন, আইনটি ‘অবাস্তব’, ‘অচল’। তাই তা মানা যায় না। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরকারী একটি রেট চার্ট দেয়া আছে। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮০ ও সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা, মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড ইমিউনোলজিতে সর্বনিম্ন ১৫০ ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রিতে সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা, হিস্ট্রোপ্যাথলজিতে সর্বনিম্ন ৫০০ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা, ড্রাগ এবিউজে সব ধরনের পরীক্ষা সাড়ে ৫০০ টাকা, থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ও ভাইরোলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ ও সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নির্ধারিত তালিকামূল্যের তুলনায় কয়েক বেশি ফি নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। সরকারী চিকিৎসা ব্যয় ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক মোঃ ডাঃ সামিউল ইসলাম সাদি জনকণ্ঠকে জানান, দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো বিভাগীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। কেন্দ্র থেকে নাড়া দিলে স্বল্প সময়েই সারাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের চিত্র পাওয়া সম্ভব। ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩১টি হাসপাতালে মোট ৪৯০টি রোগী শয্যা রয়েছে। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় নরমাল ডেলিভারি, মেডিসিন এবং সার্জারির সাধারণ সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। উপজেলা পর্যায়ের ৪৬৫টি হাসপাতালে মোট রোগী শয্যার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার ৩০১টি। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী ও প্রসূতিসেবা এবং বেসিক অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা ও হৃদরোগের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ১৩২টি উপজেলা হাসপাতালে ২৪/৭ সমন্বিত প্রসূতিসেবা এবং সকল হাসপাতালে নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। জেলা পর্যায়ের ৬৪টি হাসপাতালে মোট রোগী শয্যার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৩০০টি। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী ও প্রসূতিসেবা এবং অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা, হৃদরোগসেবা প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশে ২০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালু রয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন পর্যায়ে। মোট রোগী শয্যার সংখ্যা ১২ হাজার ৫৭৩টি। এখানে সকল বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, সিসিইউ ও আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগী শয্যার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৮৪টি। এসব হাসপাতালে সকল বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়। যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগের চিকিৎসা দিতে সারাদেশের ১৩ হাসপাতালে রয়েছে প্রায় ৮১৬টি রোগীশয্যা এবং সংক্রামক ব্যাধি, কুষ্ঠ ও অন্যান্য রোগের জন্য ১৪টি হাসপাতালে ৬১৫টি রোগী শয্যা রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে সারাদেশে রয়েছে ১২ হাজার ৫৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন সাব সেন্টার এবং রয়েছে ৮৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সকল বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ৭টি জেলা হাসপাতালে মোট ২০৯টি আইসিইউ বেড রয়েছে। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ এবং ১২টি জেলা হাসপাতালে সিসিইউ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ক্যান্সার রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে । সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারী হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেয়া যাবে না। তবে বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সরকারী ফি বেসরকারী হাসপাতালের ফি’র তুলনায় অনেক গুণ কম। সরকারী হাসপাতালে করোনারী এনজিওগ্রামে ২ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ২ হাজার টাকা, এমআরআই ৩ হাজার টাকা, ইসিজি ৮০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ২০০ টাকা, এক্সরে ২০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ৩০০ টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ২ হাজার টাকা, ইউরিন ৩০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা। চিকিৎসাব্যয়ের ওপর গবেষণা ॥ আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআর’বি, হেলথ ইকোনমিকস এ্যান্ড ফাইন্যান্সিং রিসার্চ গ্রুপের সমন্বয়কারী ড. জাহাঙ্গীর এ এম খান জানান, সম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার ও শ্রীলঙ্কার একটি সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষের প্রায় ২০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ যোগান দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে সর্বশেষ এক গবেষণা অনুসারে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সীমিত আয়ের মানুষ। আয়ের তুলনায় অনেকগুণ বেশি বেড়েছে চিকিৎসা ব্যয়। এই ব্যয়ের শতকরা ৬২ ভাগ নিজেদেরই বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মধ্যবিত্তরা দরিদ্র এবং দরিদ্ররা হয়ে যাচ্ছে নিঃস্ব। অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সমস্যা যেন দরিদ্রদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ কারণেই দরিদ্র অনেক মানুষ অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। আইসিডিডিআরবির গবেষক ড. জাহাঙ্গীর এ এম খান জানান, রাষ্ট্র বা সরকারের ওপর দেশের নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায় থাকলেও বাস্তবে নাগরিকদের চিকিৎসার পেছনে সরকারের খরচ থাকে মাত্র ২৬ শতাংশ। এছাড়া ৮ শতাংশ আসে দাতাদের কাছ থেকে, মাত্র ১ শতাংশ করে দেয়া হয় প্রাইভেট ও এনজিও খাত থেকে। বাংলাদেশ সরকারের ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি গরিব পরিবারে চিকিৎসা খরচের ৬৯ শতাংশ আসে আয় থেকে, ২১ শতাংশ আসে জমানো টাকা থেকে, ৪ শতাংশ আসে জমিজমা বিক্রি করে, ১১ শতাংশ চলে ধারদেনা করে, ৭ শতাংশ চলে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য বা চাঁদা নিয়ে, ৩ শতাংশ আসে অন্যান্য প্রক্রিয়ায়।
×