ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সকারুদের বিরুদ্ধে ময়দানী লড়াইয়ের আগে নৈতিক জয় বাংলাদেশের

আসছে অস্ট্রেলিয়া, অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

আসছে অস্ট্রেলিয়া, অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শঙ্কার কালো মেঘ কেটে গেছে। নির্ধারিত সূচী অনুযায়ীই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া (এফএফএ) ফিফা ও এএফসি’র কাছে ভেন্যু পরিবর্তনের আবেদন করেছিল। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সকারুদের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। যে কারণে নবেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল। এদিকে ম্যাচ সামনে রেখে গতকাল বুধবার থেকে অনুশীলন শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের। আবাসিক ক্যাম্পের বাইরে রয়েছেন শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবলে অংশ নেয়া ঢাকা মোহামেডান ও চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়রা। টুর্নামেন্ট শেষে যোগ দেবেন তাঁরা অনুশীলনে। তবে শুরু হওয়া ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশী ফুটবলার জোসেফ নূর রহমান। অসিদের এই সিদ্ধান্তের পর প্রচলিত একটি প্রবাদ সামনে এসে যায়- ‘সেই তো নাচ দেখাইলি, তবে কেন লোক হাসাইলি।’ চলতি মাসে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে অপ্রত্যাশিতভাবে দুই বিদেশী হত্যার ঘটনা ঘটলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সফর স্থগিত করে। অথচ বাংলাদেশ সরকার তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল। ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করার পর স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের আসা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়। অনুমিতভাবেই ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া সেই কাজটি করে বসে। তারাও ফিফা ও এএফসির কাছে নিরাপত্তা ইস্যু সামনে রেখে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার আবেদন করে। কিন্তু সংস্থা দুটি বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি খুঁজে পায়নি। বরং এদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছে। এরপরই ফিফা ও এএফসি’র তরফ থেকে ছাপ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশে গিয়েই বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলতে হবে। ‘ঠেলার নাম বাবাজি’র মতো তাই লাল-সবুজের এই দেশে আসতে বাধ্য হচ্ছে সকারুরা। অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর আরেকবার স্পষ্ট হয়েছে ফিফা ও আইসিসির মধ্যে প্রশাসনিক শক্তির পার্থক্য। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিজেদের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে। কিন্তু এফএফএ’র এমন করার ক্ষমতা নেই। তারা চাইলেও ক্রিকেট বোর্ডের মতো একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে না। যে কারণে এফএফএ ফিফা ও এএফসির দারস্থ হয়। কিন্তু তাদের চিঠি পাত্তাই দেয়নি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ও বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সংস্থা দুটি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশে আসা নিশ্চিত করে সকারুরা। কেননা সফরে না আসলে মহাবিপদে পড়তে হতো তাদের। এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বকাপ বাছাই ও এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়তে হতো অস্ট্র্রেলিয়াকে। আর বাংলাদেশও পেয়ে যেত তাদের বিপক্ষে হোম ও এ্যাওয়ে ম্যাচের জন্য ৬ পয়েন্ট। এসব ভেবেই বাংলাদেশে খেলতে আসতে বাধ্য হচ্ছে সকারুরা। ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া (এফএফএ) বাফুফেকে পাঠানো ই-মেইলে জানিয়েছে, ১৪ নবেম্বর বাংলাদেশে আসছে তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ের ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে আগামী ১৭ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, আমরা তাদের (অস্ট্রেলিয়া) সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়া দলের ম্যানেজার জোয়েল ফ্রিমি ফিরতি মেইল পাঠিয়েছেন। তারা জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খুশি। বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচ খেলতে নির্ধারিত সময়ে আসছে অস্ট্রেলিয়া। তিনি আরও বলেন, তারা (এফএফএ) খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও অন্যান্য প্রতিনিধিসহ মোট ৭৫ জনের তালিকা পাঠিয়েছে আমাদের কাছে। ফিফার কাছ থেকে রেফারিদের তালিকাও আমরা পেয়েছি। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ক্রিকেট দলের মতো অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলও যখন বাংলাদেশে আসা নিয়ে তাটবাহানা করতে থাকে তখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। দৈনিক জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। অস্ট্রেলিয়া ফিফা কিংবা এএফসিতে আবেদন করেনি। তারা আবেদন করুক, তখন ভেবে দেখা যাবে কি করা যায়’। পরবর্তীতে এফএফএ’র আবেদনের পর কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা সমস্যা নেই। এর অনেক প্রমাণ আছে। বিগত চার মাসে ছয়টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা ও সিলেটে হওয়া আসরগুলোতে কোন সমস্যা হয়নি। ঢাকায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ হয়েছে দুটি। এখানে এসে সব দলই নির্বিঘেœ অনুশীলন, খেলা করেছে। কোন সমস্যা হয়নি।’ এফএফএ আবেদন করার পর এই বিষয়গুলোই এএফসি ও ফিফার কাছে তুলে ধরেন বাফুফে সভাপতি। শেষ পর্যন্ত কাজী সালাউদ্দিন বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশে কোন নিরাপত্তা সমস্যা নেই। অস্ট্রেলিয়ার এমন ডিগবাজির পর ময়দানী লড়াইয়ের আগে তাই নৈতিক জয় হয়েছে বাংলাদেশের। ফুটবল সংশ্লিষ্টরা এমনই মনে করছেন। সেই সঙ্গে ফিফা ও এএফসিতে কাজী সালাউদ্দিনের প্রভাব ও দাপট কতটা সেটাও আরেকবার প্রমাণ হয়েছে। বাফুফে সভাপতি বর্তমানে ফিফার ফিন্যান্স কমিটির সদস্যা। শুধু তাই নয় মাহফুজা আক্তার কিরণও এএফসির মহিলা সাব কমিটির সদস্য। ফিফার গুরুত্বপূর্ণ পদে এই দু’জনের থাকাটাও অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে প্রভাব ফেলেছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। বাংলাদেশে আসার জন্য ইতোমধ্যে দলও ঘোষণা করেছে ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া। সকারু কোচ এ্যাঞ্জে পোস্টেকোগলু দলে ফিরিয়ে এনেছেন নিয়মিত অধিনায়ক মাইল জেডিনাক ও গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানকে। সকারু কোচ পূর্ণশক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশ আসছেন। এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্বের ‘বি’ গ্রুপে বর্তমানে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে জর্দান। ৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়া। বাছাইপর্বে এ পর্যন্ত খেলা পাঁচ ম্যাচে চারটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। তাজিকিস্তানের সঙ্গে ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ পাঁচ দলের মধ্যে সবার নিচে। উল্লেখ্য, বাছাইপর্বের আগের ম্যাচে গত ৩ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-০ গোলে হেরেছিল অতিথি বাংলাদেশ।
×