ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুসান্না সাজ্জিল

জেব বুশের মনোনয়ন পাওয়া অনিশ্চিত!

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

জেব বুশের মনোনয়ন পাওয়া অনিশ্চিত!

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থিতা লাভের লড়াইয়ে প্রথমদিকে জেব বুশকে প্রবল শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন তার সম্ভাবনায় যথেষ্ট ভাটা পড়ে গেছে। তার প্রবল প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে তার প্রার্থিতা পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন সে তার প্রার্থিতা পাওয়া না পাওয়ার সম্ভাবনা এখন অর্ধেক অর্ধেক। ফ্লোরিডার প্রাক্তন গবর্নর জেব বুশ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের মেঝ ছেলে এবং ওবামার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অনুজ। গত বছরের হেমন্তে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য ১০ কোটি ডলারের তহবিল নিয়ে মাঠে নামেন। আর কোন প্রার্থী এত বড় অংকের তহবিল নিয়ে প্রচারণা শুরু করেননি। রিপাবলিকান প্রার্থিতা লাভের জন্য ইতোমধ্যে ১৫ জন দাঁড়িয়েছেন। তার মধ্যে জেব বুশসহ শীর্ষ পাঁচ প্রার্থী হলে- মার্কো রুবিও, ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেড ক্রুজ এবং জন কাশিজ। এদের পর স্কট ওয়াকার ও র‌্যান্ড পলও আছেন। আপাতত মার্কো রুবিওর জোর প্রতাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি তিনি বুশের চেয়েও এগিয়ে আছেন। প্রার্থিতা লাভের লড়াইয়ে নামবার সময় জেব বুশ বলেছিলেন যে সাধারণ নির্বাচনে জিতার লক্ষ্যে তাকে প্রাইমারিতে হারার জন্য প্রস্তত হতে হবে। প্রাইমারির ফলাফলের দিকেই সবার সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি পড়ে। তবে মনে রাখতে হবে প্রাইমারির সাফল্য ব্যর্থতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের প্রথম পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। প্রাইমারিতে সত্যিই আসলে কে জয়ী হতে যাচ্ছেন সেটা নির্ভর করছে ‘ইনভিজিবল প্রাইমারি’র উপর যেখানে প্রার্থীরা দলীয় রাজনীতিক, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও ডোনারদের সমর্থন আদায়ের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। এই অদৃশ্য প্রাইমারিতে যে প্রার্থী জেতেন সচরাচর তিনিই দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। ফ্লোরিডার প্রাক্তন গবর্নর ও ব্যবসায়ী হিসাবে জেব বুশের নিজস্ব প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। তার পরিবার এখন আমেরিকার এক নামে পরিচিত পরিবার যেখান থেকে দুই-দুইজন প্রেসিডেন্টে এসেছেন। দলের উপর এই পরিবারটির প্রভাবও আছে এবং মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে বুশ একটা ‘ব্র্যান্ড নেম’-এ পরিণত হয়েছে। প্রবল প্রতিপক্ষের উত্থানে জেব বুশ এখন এই ব্র্যান্ড শেষের উপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রাইমারিতে তহবিল সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন ভাই জর্জ ডব্লিউ বুশ, মারভিন বুশ ও বোন ডরোথি। এমনকি নবতিপর বাবা-মা বুশ ও বারবারাও প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছেন। ব্র্যান্ড নেমের একটা আলাদা জোর থাকার পরও জেব বুশের প্রাইমারির ফলাফল ভাল নয়। প্রতিযোগিতায় নামার পর বেশির ভাগ জরিপে তার জনসমর্থন ছিল ডাবল ডিজিটে। এখন তা সিঙ্গেলে নেমে এসেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যা যা করবেন বলে ঘোষণা করেছেন সেগুলো রিপাবলিকান দলের বিঘোষিত নীতির সঙ্গে যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। কাজেই নিজের নীতিনির্ধারণী কর্মসূচীর কারণে তার জনসমর্থন কমেছে মনে করার কারণ নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন কারণটা অন্যত্র। বুশ পরিবারের ব্র্যান্ড নেমটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন আইওয়ার ইন্ডিয়ানোমায় এক ভোটার জেব বুশকে জিজ্ঞেস করেছিল নেতা হিসেবে তার সবচেয়ে বড় ভুল কোনটি? জেব কিছু বলার আগেই আরেক ভোটার মন্তব্য করে বসেন, ‘নামের শেষ অংশটা না বদলানো’ রিপাবলিকান দলের ভেতরে ও বাইরে একাংশের মধ্যে এমন একটা মনোভাব আছে যে ‘বুশ পরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়।’ প্রাইমারির তহবিল সংগ্রহ অভিযানের বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে পর্যবেক্ষকদের কারও কারও মনে হচ্ছে রিপাবলিকান দলের সর্বস্তরের ডোনারদের সমর্থন বলতে গেলে একেবারেই না থাকায় জেব বুশের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে তহবিল সংগ্রহের যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, টেড ক্রুজ প্রার্থিতা লাভের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অবস্থানে আছেন। মার্কো রুবিওর সম্ভাবনাও ভাল। কিন্তু বাকিদের কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই বলে এ কথা বলার পর্যায় এখনও আসেনি যে জেব বুশ প্রার্থিতা লাভের প্রতিযোগিতা থেকে ঝরে গেছেন বা যাচ্ছেন। সবকিছুই নির্ভর করছে আসলে ‘ইনভিজিবল বা অদৃশ্য প্রাইমারির উপর যেখানে দলের রাজনীতিক, নেতৃবৃন্দ ও ডোনাররা মিলে ঠিক করবেন কে দাঁড়াবেন বা দাঁড়াবেন না। সূত্র : টাইম ও অন্যান্য
×