ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদী ভাঙন একটি নীরব ক্যান্সার ॥ পানিসম্পদমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

নদী ভাঙন একটি নীরব ক্যান্সার ॥ পানিসম্পদমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম বলেছেন, নদী ভাঙন একটি নীরব ক্যান্সারের মতো। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। ফলে সরকার নদীর তীর প্রশস্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বক্ষ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তাকে প্রশস্ত করা হবে। এক্ষেত্রে নদীর পাড়ের মানুষদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ বা কাউলিয়া থেকে যাদের সরানো হবে, তাদের কর্মসংস্থান এবং পুর্নবাসনের দায়িত্বও নেবে সরকার। মঙ্গলবার রাজধানী গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ‘পিপল অব ম্যানি, রিভারস, টেলস্ ফ্রম দ্যা রিভার ব্যাংকস’ নামক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বইটিতে পদ্মা ও তিস্তা তীরবর্তী জনপদের ৩২ টি পরিবারের জীবন সংগ্রামের কাহিনী ওঠে এসেছে। বইয়ের গল্প ও ছবি সংগ্রহ করেছেন একশন এইড বাংলাদেশের কর্মীরা। আর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বন্যায় ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমরা বন্যার পানি সরানোর জন্যে যে জায়গা রেখেছি, সেখানেও মানুষকে বাস করতে হচ্ছে। তাদের সরানোর উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নদী ভাঙনের গল্প বহু পুরানো বিষয়। নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনের নিখুঁত চিত্র তুলে আনাও কষ্টসাধ্য। বহুক্ষেত্রেই তাদের জীবনের সঠিক চিত্র উপেক্ষিত। দিনশেষে নদী ভাঙন একটি চলমান পক্রিয়া। নদীভাঙন রোধে প্রতিরক্ষামূলক কাজে কোনভাবেই শতভাগ গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের কর্মকান্ডের কারণে বহু নদী মরে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে নদী পাড়ের মানুষের উপর। সমস্যা আসলে পানি বা নদীর নয়, সমস্যা আমাদের। আমরা সব জানার পরও এমন কাজ করি যার ফলে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সম্পদ কম, সমস্যা বেশি। তার উপর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু করার থাকে না। নদী ভাঙন রোধে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন, পনি দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতেও মানুষ সব হারাচ্ছে। এই সব হারানো মানুষের জন্য সরকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মারগারেথা চুয়েলিনায়ের বলেন, নদীর পাশে যাদের বসবাস তাদের প্রত্যেকেই নদী বিশেষজ্ঞ। ভাঙন মোকাবেলায় প্রতিরক্ষামূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে আপনাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষির উন্নতি, দারিদ্র সীমার নিচে থাকা নারীদের উন্নয়নে সাহায্য করছে নেদারল্যান্ড সরকার। এসময় দেশের নদী রক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচীতেও অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। ভারতের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক ড. সঞ্জয় হাজারিকা বলেন, এ অঞ্চলের জনপদ গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। এখানে নদীর স্রোতের সঙ্গেই জীবন বয়ে গিয়েছে। তাই নদী রক্ষায় সকলকেই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ নদীগুলো একটি দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, নদীগুলো কেন্দ্র করে বসবাস করা মানুষগুলো দারিদ্র। নদীগুলোকে বোঝার জন্যে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে ফলপ্রসু পদক্ষেপ নিতে হবে। একশন এইডের দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপাক ইমতিয়াজ আহমেদ। এছাড়া পদ্মা ও তিস্তা পাড়ে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানো দুজন ব্যক্তি তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বইটি সর্ম্পকে বলা হয়, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নদী বিষয়ক বিভিন্ন নীতি থাকলেও তা ত্রুটিপূর্ণ। বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযোগকারী নদীগুলোতে অফুরন্ত পানি সম্পদ রয়েছে এমন ধারণার উপর তৈরি বিদ্যমান নীতিগুলো। যেন নদীর প্রবাহকে বাধা গ্রস্ত করলেও নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। পিপল অব ম্যানি রিভারস-টেলস্ ফ্রম দ্যা রিভার ব্যাংকস বইটিতে এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সর্বশান্ত হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনের বাস্তব উপাখ্যান যার উপজীব্য।
×