ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় প্রথম রাজাকার ক্যাম্পের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক স্থাপনে বাধা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

খুলনায় প্রথম রাজাকার ক্যাম্পের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক  স্থাপনে বাধা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনায় প্রথম রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল ‘ভূতের বাড়ি’ বলে পরিচিত মহানগরীর টুটপাড়া কবরখানা এলাকায়। জামায়াতের নেতা মাওলনা একেএম ইউসুফ (প্রয়াত) রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা ও এই ক্যাম্প স্থাপন করেন। স্বাধীনতা লাভের পর ওই বাড়িকে ঘিরে আনসার ও ভিডিপির দফতর স্থাপিত হয়। এখানে একাত্তরে রাজাকারদের কার্যক্রম ও নির্যাতন-নিপীড়নের কথা মানুষ ভুলতে বসেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালের সেই দুঃসহ স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রবিবার খুলনা আনসার ও ভিডিপি পরিচালকের দফতরের গেটের পাশে স্মৃতিফলক স্থাপনের কাজ করতে যান ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘরের কর্মীরা। ওই দফতরের কর্মকর্তাদের বাধাদানের ফলে স্মৃতিফলক স্থাপন করা যায়নি। আগামী ২৯ অক্টোবর বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনের এটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। স্মৃতিফলক স্থাপনে বাধা দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ তদারককারীর দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, নগরীর আনসার ভিডিপি রেঞ্জ ও জেলা কমান্ড্যান্ট খুলনা দফতরের সামনে স্মৃতিফলকটি স্থাপনের জন্য রবিবার সকালে ইট, বালি ও সিমেন্ট আনা হয়। সেখানের প্রাচীরঘেঁষে মাটি খুঁড়তে গেলে কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে পরিচালকের সঙ্গে দেখা করা হলে দুপুরের পর কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে পরিচালক আবার এসে কাজ বন্ধ করে দেন। তিনি আমাকে জানান, ‘উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এখানে কোন স্মৃতিফলক স্থাপন করতে দেয়া যাবে না। আপনারা লিখিত আবেদন করুন।’ ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম বলেন, গত ২০ অক্টোবর পরিচালকের সঙ্গে আর্কাইভের পক্ষ থেকে দেখা করা হয়। তিনি নিজে এসে জায়গা নির্ধারণ করে দেন। অথচ রবিবার কাজ করতে কেন দেয়া হল না এটি বোধগম্য নয়। পরিচালক আকবার আলী জানিয়েছেন, জেলা এ্যাডজুট্যান্ট কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তাই আপনারা জেলা আনসার এ্যাডজুট্যান্ট বরাবর লিখিত আবেদন করুন। ডাঃ বাহারুল আলম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকালীন নেতৃত্বদানকারী দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তাছাড়া সরকারপ্রধান ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের এই উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কিভাবে জেলা এ্যাডজুট্যান্ট এই কাজ বন্ধ করার ধৃষ্টতা দেখালো সেটি ভেবে আমি অবাক হচ্ছি।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, স্মৃতিফলক স্থাপনে বাধা দেয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। এটা মহান মুক্তিযদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর ইউনিটের কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, একাত্তরের গণহত্যাস্থলসহ নির্যাতন কেন্দ্রগুলো ইতিহাসের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। স্মৃতিফলক স্থাপনে বাধা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
×