ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

আবরারের স্কুল ব্যাগ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

আবরারের স্কুল ব্যাগ

আবরার ঢাকার নামী একটা স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। বড় ভাইয়ার সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে। খোলা মাঠে দৌড়ে বেড়াতে ভালবাসে। কিন্তু কোনটাই আবরার করতে পারে না অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপের জন্য। ক্লাসে প্রথম সারির ছাত্র, কিন্তু আজকাল স্কুলের নাম শুনলে ওর মন খারাপ হয়ে যায়। স্কুলে যেতে একদম ইচ্ছে হয় না। ব্যাগটার দিকে তাকালেই কান্না পায়। ব্যাগটা এত্ত ভারি! এই ব্যাগটা কাঁধে নিতে আবরারের খুব কষ্ট হয়। মাকে বলেছে এই কথা। কিন্তু মা বলেছে, সবাই যদি পারে তুমি কেন পারবে না? আবরার বলেছে, সবাই পারে না তো মা। সবার কষ্ট হয়। মা সেটা একদম মানতে চায় না। সবাই যেহেতু ভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যেতে পারে, আবরারকেও পারতে হবে। সবাই যেহেতু এত এত পড়াশোনা করে, আবরারকেও করতে হবে। সে একবার ক্লাসে সেকেন্ড হলেই মা বকাবকি করে। ফার্স্টই হতে হবে তাকে। আবরারের ক্লাসে সাতটা বিষয়। বাংলা, ইংরেজী, গণিত, ধর্ম, সমাজ, বাংলা হাতের লেখা, ইংরেজী হাতের লেখা। এতগুলো বিষয় পড়তে খুব কষ্ট হয় তার। প্রতিদিন তার পাঁচটা করে ক্লাস থাকে। পাঁচটা ক্লাসের জন্য তাকে পাঁচটা বই আর প্রতিটা বিষয়ের একটা করে ক্লাসওয়ার্ক আর একটা করে হোমওয়ার্ক খাতা নিতে হয়। সবকিছু মিলে তার ব্যাগে প্রতিদিন পনেরোটা বইখাতা থাকে। সঙ্গে আছে ডায়েরি, টিফিন বক্স, পানির বোতল। ব্যাগটা কাঁধে নিলেই আবরারের মনে হয় যেন তার পিঠে একটা পাহাড় চেপে বসেছে। তার আজকাল খুব মাথাব্যথা করে। পিঠে ব্যথা আর কাঁধে ব্যথা করে। কিছুই ভাল লাগে না। সে কারোর সঙ্গে কথাও বলে না। একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। বাবা ব্যাপারটা খেয়াল করে আজকে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার আংকেল তার সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ গল্প করলেন। জানলেন তার মাথা, ঘাড় আর পিঠে ব্যথার কথা। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বুঝি খুব কার্টুন দেখো বাবা? আবরার কথা বলল না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। বাবা বললেন, না। ও তেমন কার্টুন দেখে না। গেইমও খেলে না। যা একটু দেখত, খেলত, আজকাল তাও ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মনমরা হয়ে বসে থাকে। ডাক্তার আংকেল জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে ও কী কাজ করে যাতে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, বা পিঠে-কাঁধে চাপ পড়তে পারে? বাবা বলল, ওর মা সারাদিন শুধু পড়তেই বলে। ও পড়াশোনা করে। আর হ্যাঁ, ওর স্কুল ব্যাগটাও অনেক ভারি। ডাক্তার আংকেল বললেন, এই জন্যই তো ওর মাথাব্যথা হচ্ছে। কাঁধে-পিঠে ব্যথাও এই কারণেই হচ্ছে। ওর ওপর বেশি চাপ দেয়া হচ্ছে। এত চাপ নেয়ার বয়স ওর হয়নি। বেশি চাপের কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে। ভারি ব্যাগ আর সারাদিন বসে পড়ার জন্য কাঁধে-পিঠে ব্যথা হচ্ছে। বেশি মানসিক চাপের কারণেই সে মনমরা, চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ও মাঠে খেলতে যায়? বাবা বললেন, না। ওর মা বলে পড়াশোনার ক্ষতি করে মাঠে খেলার দরকার নেই। ডাক্তার আংকেল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, ওকে মাঠে খেলতে দিন। বুক ভরে শ্বাস নিতে দিন। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে দিন। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিলে ও ঠিক হয়ে যাবে। নইলে ওর সমস্যাটা আরও বাড়বে। ওর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধা পাবে। বাবা আবরারের দিকে তাকালেন। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বাবা তাকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেন। বাসায় গেলেন না। সোজা পার্কে চলে গেলেন। আবরারকে কোল থেকে নামিয়ে বললেন, চলো বাবা, আমরা খেলি। আবরার কিছুক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। বাবা আবার বললেন, চলো খেলি। ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। তুমি দৌড়াবে আর আমি তোমাকে ধরতে চেষ্টা করব। আবরার একবার বাবার দিকে তাকাল। তারপর বলল, ধরো আমাকে। কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। সামনের দিকে দৌড়াতে শুরু করল। তার প্রাণবন্ত হাসিতে তখন মুখরিত শেষ বিকেল। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ৯ম শ্রেণী (ইংলিশ ভার্সন)
×