ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনা সোয়ানসন

সেই যুগান্তকারী প্রযুক্তি আপনার ঘরেই

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

সেই যুগান্তকারী প্রযুক্তি আপনার ঘরেই

ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে যুগান্তকারী প্রযুক্তি নিয়ে কথাবার্তা শুনলে আমরা সাধারণত সিলিকন ভ্যালি থেকে বেরিয়ে আসা সর্বশেষ কোন পণ্যের কথাই মনে করি। বাস্তবেও বিষয়টা তাই। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তিগুলো সত্যিই আমাদের জীবন ও কাজের ধারা বদলে দিয়েছে নাটকীয়ভাবে। এগুলো হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি কিন্তু পেছনে ফেলে আসা বিংশ শতাব্দীর এমন-ই যুগান্তাকারী প্রযুক্তি কোনটি? ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডটা’ নামে একটি ওয়েবসাইট আছে। সাইটটির পরিচালনাকারী গবেষক ম্যাক্স রোজার বিংশ শতকের সেই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী প্রযুক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, সেটা এমন কিছু যা আপনাদের কাছে প্রত্যাশিত বলে মনে হবে না। সেই প্রযুক্তিটা আপনাদের বাড়িতেই রয়েছে। বহুল ব্যবহৃত সেই প্রযুক্তির একটি হলো রেফ্রিজারেটর। এছাড়াও আছে ওয়াশার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনান, হিটার ইত্যাদি। তবে রেফ্রিজারেটরের ভূমিকা অনেক বড়। বিদ্যুতের আবির্ভাব ও ব্যবহার ভোগ্যপণ্যের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়। মানুষের জীবন ও কাজের ধারায়ও পরিবর্তন ঘটে। ১৯২০-এর দশকে আমেরিকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গৃহে ওয়াশার কিংবা ভ্যাকুয়াম ছিল। রেফ্রিজারেটর তখনও ছিল অপেক্ষাকৃত বিরল। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পর রেফ্রিজারেটরের মালিকানা অতিসাধারণ হয়ে ওঠে। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আমেরিকান বাড়িতে একটা করে রেফ্রিজারেটর শোভা পেতে থাকে। রেফ্রিজারেটরের ব্যবহারে যে জোয়ার আসে তাতে আমেরিকানদের রান্নাবান্নার ধারা সম্পূর্ণ বদলে যায়। রেফ্রিজারেশনের ব্যবহারের আগে রান্না করা ও খাবার সংরক্ষণ করার ব্যপারটা মোটেই তেমন পার্থক্যযোগ্য ছিল না। তরল উপকরণে ভিজিয়ে রেখে, ধোঁয়া দিয়ে কিংবা টিনজাত করে খাবার সংরক্ষণের কৌশলগুলো আমেরিকার প্রায় প্রতিটি রান্নাঘরে অতিপ্রচলিত ছিল। আইসবক্স এবং তারপর রেফ্রিজারেটরের আগমনের ফলে খাবার এখন সংরক্ষিত রাখা এবং একই অবস্থায় কয়েকদিন ধরে খেতে পারা সম্ভব হলো। আমেরিকানদের এখন একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে পনির, হুইস্কি ও হার্ড সাইভার তৈরি করে রাখা ও তা খাওয়ার দরকার পড়ল না। গোটা শীতকালে খাদ্যসামগ্রীকে আহারযোগ্য করার এগুলোই ছিল একমাত্র কৌশল। পনির তৈরি থেকে শুরু করে মাংস ধোঁয়াজারিত করা, ডিম তরল উপাদানে ভিজিয়ে রাখা ও কিচাপ তৈরি পর্যন্ত ঘরে খাবার সংরক্ষণের সমস্ত পদ্ধতি এক প্রজন্মের মধ্যে দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। অন্যান্য প্রযুক্তির আবির্ভাব আরও ধীরে ধীরে ঘটল। তথাপি সেগুলোও জীবনযাপন ও কাজের ধারা রূপান্তরে ভূমিকা রাখল। ওয়াশার ব্যবহারকারী বাড়ির সংখ্যা ১৯২০ সালে ছিল ৪০ শতাংশ। ১৯৯০ সালে তা বিস্ময়করভাবে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ শতাংশ। ভ্যাকুয়ামের প্রচলনও ধীরে ধীরে শুরু হয়। তারপর ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে তা অনেক বেশি প্রচলিত রূপ ধারণ করে। ফ্রিজার, ওয়াটার হিটার, ডায়ার, ডিশ ওয়াশার এগুলো সবই ছিল অপেক্ষকৃত অপ্রচলিত। তবে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে তা বাড়িতে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এর আগে বিদ্যুতের ব্যবহারই ছিল এক বিস্ময়কর বিপ্লব। বিদ্যুত, ট্যাপের পানি, ফ্লাশ টয়লেট ও সেন্ট্রাল হিটিং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনকে ব্যাপক করে তুলেছিল। ১৮৯০ সালে আমেরিকার মাত্র এক-চতুর্থাংশ বাড়িতে ট্যাপের পানি ছিল। সেন্ট্রাল হিটিং কোন বাড়িতে ছিল না। তার মানে গড় পরিবারকে প্রতি বছর ৭ টন কয়লা ও ৯ হাজার গ্যালন পানি বাড়িতে নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু বিদ্যুত, ট্যাপের পানি, ফ্লাশ টয়লেট ও সেন্ট্রাল হিটিং যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। কারণ এগুলোর বদৌলতে ঘর-সংসারের কাজে ব্যয়িত সময় বহুলাংশে কমে যায়। খাবার তৈরি, কাপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি করা, ঘর ঝাড়ু দেয়া, থালা-বাসন ধোয়ার কাজে লোকে যত ঘণ্টা সময় ব্যয় করত ১৯০০ সালে তা ছিল ৫৮ ঘণ্টা। ১৯৭০ সালে সেটাই মাত্র ১৮ ঘণ্টায় নেমে আসে এবং তারপর থেকে আরও কমেছে। এই পরিবর্তনের ফলে আমেরিকানদের বিশেষত মহিলাদের পক্ষে আরও বেশি সময় ব্যয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে। ফলে মহিলারা যারা ঘর-সংসারের প্রায় যাবতীয় কাজে নিয়োজিত থাকত এখন তাদের পক্ষে চাকরি-বাকরি করা এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা সম্ভব হয়। মাত্র ১০০ বছর আগে আমেরিকার বেশিরভাগ বিবাহিত মহিলা ঘর-সংসারের কাজে নিয়োজিত থাকত। তারা ছিল স্রেফ গৃহিণী। আজ কাজের উপযোগী বয়সী প্রায় ৫৭ শতাংশ মহিলা কর্মজীবী। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন সেই ১৯১২ সালে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের প্রযুক্তি মহিলাদের জীবন সহজ করবে। সংসারের কাজে তারা কম মনযোগ দেবে। গৃহশ্রমিক হওয়ার বদলে সে হবে ঘরোয়া প্রকৌশলী। কারন সবক্ষেত্রে বিদ্যুত তার সেবায় নিয়োজিত থাকবে।’
×