ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফ ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছে একটি মহল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

টেকনাফ ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছে একটি মহল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফ উখিয়ার দুটি ক্যাম্প ও বস্তিতে এবং কক্সবাজার শহর, উখিয়া, টেকনাফ ও পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়িতে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছে একটি মহল। ইতোপূর্বে সরকারবিরোধী ব্যর্থ আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পাওয়ায় ওই মহলটি বর্তমানে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা ও আরএসও জঙ্গীদের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের মাঠে নামিয়ে গত বছর কক্সবাজারে কয়েকটি জায়গায় নাশকতা চালিয়েছিল ওই মহলটি। হামলা চালিয়েছিল র‌্যাব-পুলিশ ও আনসারের ওপর। নাশকতাকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছিল তিনজন পথচারী-গ্রামবাসী। শহরের হাসেমিয়া মাদ্রাসার সামনে ও খুরুশকুল রাস্তার মাথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে অভিযান চালানো শুরু করলে ওই সময় পিছু হটে নাশকতাকারীরা। পালানোর সময় শহরের বাসটার্মিনাল এলাকা থেকে ২৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। অহেতুক ও অযৌক্তিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ জনগণের সমর্থন না পেয়ে ওই মহলটি বর্তমানে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের ওপর আস্থা রাখছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ জন্য দেশে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের বিভিন্ন স্টাইলে ট্রেনিংসহ নাশকতা সৃষ্টির কাজে দক্ষ করে তুলছে তারা। মৌলবাদী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন একাধিক এনজিও সংস্থার মাধ্যমে কোরবানি উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাওয়া অনুদানের বিপুল অর্থ বিভিন্ন স্থানে তারা জঙ্গী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যয় করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার ভোরে সদর থানা পুলিশ শহরের রোমালিয়ারছড়া এলাকা থেকে দুইজন নাশকতাকারীকে গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। নাশকতাকারীদের পাকড়াও করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা। গোপনে খবর পেয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়াছড়া এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরকসহ দুই রোহিঙ্গা জঙ্গীকে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত দুই রোহিঙ্গা জঙ্গী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। র‌্যাবের হাতে ধৃত মিয়ানমারের মংডু শহরের উকিলপাড়ার মোহাম্মদ ইউনুছ ও মংডু জামবইন্না এলাকার মোহাম্মদ রফিক র‌্যাবকে জানিয়েছে, ৪ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে পটিয়ায় অবস্থান নেয় তারা। ছয় মাস আগে কক্সবাজার শহরে আসে এবং ওই ভাড়া বাসায় ওঠে। এদিকে নাশকতার ছক তৈরি করে জনমনে ভীতি সঞ্চার সৃষ্টি ও অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারায় বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট ব্যবহার করে বিজিবির চোখে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের দেশে অনুপ্রবেশ করিয়ে চলছে ওই বিশেষ মহলটি। বিজিবি সদস্যদের নজরে পড়লে তাদের ধরে প্রতিদিন মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে ওই সব অনুপ্রবেশকারীদের। কিছুদিন আগেও মিয়ানমার থেকে অন্তত দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদের গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি বাধা দিলে বিএনপি-যুবদলের ক্যাডাররা বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলে পড়ে। ওই সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন বিজিবির একজন নায়েব সুবেদার। বর্তমানে ওই মহলের ইন্ধনে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা জনৈক আবদুল মান্নানের সহযোগিতায় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা যুবকরা অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিচ্ছে টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ওই মান্নানের বাড়ি সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় তার স্বজনরা বিজিবির চোখে ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের সহজে পৌঁছে দিচ্ছে শরণার্থী ক্যাম্প ও তৎসংলগ্ন রোহিঙ্গা বস্তিতে। দেশে নাশকতা সৃষ্টি এবং জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি করতে তারা তৎপর হয়ে উঠেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। বর্তমানে দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গী রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। ওই মহলটির পরামর্শে এবং বিদেশী অর্থায়নে তারা রাতে ক্যাম্প অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের নাশকতায় দক্ষ করে তুলছে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে।
×