ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আরও আলো চাই

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আরও আলো চাই

জাতি শিক্ষিত হবে, দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেবে, এমন চাওয়াটাই স্বাভাবিক, নিরক্ষরতার করালগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে নয়া সমাজ বিনির্মাণ করতে সহায়ক হবে, প্রত্যাশা তেমনই থাকে। কিন্তু শিক্ষার গোড়ায় যদি থাকে গলদ, তবে সংশয় বাড়ে। যারা শেখাবেন, তাদের জানার পরিধি যদি থাকে সীমিত, তবে শেখাটা হবে নামমাত্র। লেখাপড়া করার আগ্রহ দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপকতা পেয়েছে বর্তমানকালে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় শিক্ষিতের হার মানসম্পন্ন নয়। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে পড়ছে সার্টিফিকেট প্রদান কেন্দ্র। পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও বাস্তবে সুশিক্ষিত মানুষ বাড়ছে না। সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর পর শিক্ষার দৈন্যদশা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই সব পর্যায়ে এই পদ্ধতি চালু হিতে বিপরীতই হচ্ছে বলা যায়। বিকল্প তাদের সামনে দাঁড়িয়েছে গাইড বই, কোচিং সেন্টার। যেখানে শিক্ষার স্বরূপ কেঁদে বেড়ায় যেন। দেশের স্কুল, কলেজ পর্যায়ে অনেক বিষয়ের শিক্ষক অপ্রতুল। বিশেষ করে ইংরেজী ও গণিতের। সেই সঙ্গে মাতৃভাষা বাংলাও ভাল জানেন, এমন শিক্ষক মেলে কম। আর বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকও দুর্লভ। এমনিতে বিজ্ঞান ও গণিতের মৌলিক বিষয়গুলো যদি কারও আয়ত্তে না থাকে তাহলে পরিণত বয়সে তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। পদে পদে বোকা তো হতে হয়ই, সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায়ও বুদ্ধির পরিচয় দিতে পারে না। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সবারই বিজ্ঞান ও গণিত শেখা জরুরী। যার মাধ্যমে একটা বিজ্ঞ জাতি গড়ে তোলা সম্ভব। এমনটাই মনে করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ডেম ডোনাল্ড। তার মতে, বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহের অভাবের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ভাল শিক্ষকের অপ্রতুলতাই দায়ী। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় ১৪ বছর বয়সেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বা মানবিক বিষয় বেছে নেয়াটাকে মনে করেন, এর মাধ্যমে জাতি ভেড়া আর ছাগলে, বিজ্ঞান মানব আর মানবিক মানবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত ইংরেজী ও গণিতের শিক্ষক দুর্লভপ্রায়। সৃজনশীলে স্বল্প প্রশিক্ষিতরা অন্য বিষয়ে পাঠদানে সক্ষম হলেও এই দুটি বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছে। নিজেদের যোগ্যতায় যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন গণিত ও ইংরেজীর শিক্ষকরা। কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরিতে পারদর্শী নন অধিকাংশ শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা গণিত সহজে বুঝতে পারে না। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই সৃজনশীল ইংরেজী পড়ানো হচ্ছে। এই পাঠের জন্য প্রতিটি ক্লাসে লিসেনিং, স্পিকিং, রিডিং, রাইটিংসহ সব ক্ষেত্রে ইংরেজীর ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারণ, বেশিরভাগ শিক্ষকই এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদানে সক্ষম করে গড়ে তোলা না গেলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটানো দুরূহ। কারণ শিক্ষকরা এখনও আগের পদ্ধতিতে অভ্যস্ত। সৃজনশীল পদ্ধতি প্রণয়নের ছয় বছর পরও শিক্ষার্থীরা সহজেই গাইড বই হাতে পাচ্ছে। বাজারে এখনও গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। আর যতদিন তা বাজারে পাওয়া যাবে, ততদিন শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ে মনোনিবেশ করবে না। আর গাইড বই না পেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই অনুসরণ করবে। পরিশ্রমী হয়ে পাঠ তৈরি করবে। দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজী ও গণিতের পাশাপাশি বাংলা শিক্ষাও উন্নত নয়। এই তিনটি বিষয়ে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে, একটি অর্ধশিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে। আরও অন্ধকার, কুশিক্ষা, কুসংস্কারের বিস্তার ঘটবে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যত দ্রুত উদ্যোগী হবেন, ততই শিক্ষার জন্য মঙ্গল বয়ে আসবে। আরো আলোকিত মানুষ তৈরি হবে।
×