ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভার্সিটি শিক্ষকদের কর্মবিরতির যৌক্তিকতা নেই ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভার্সিটি শিক্ষকদের কর্মবিরতির যৌক্তিকতা নেই ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের এই কর্মবিরতির কোন যৌক্তিকতা নেই। তারা জানেনই না পে-স্কেলে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই। স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবি ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির প্রতিক্রিয়ায় এখন ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী। তবে নতুন পে-স্কেল ঘোষণায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মুহিত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নতুন পে-স্কেল ঘোষণার একদিন পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রায়ই শোনা যায় যে, সরকারী চাকুরেদের বেতন কম, তাই তারা ঘুষ-টুস খায়। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাল বেতন না পাওয়ায় দুর্নীতি বেড়ে গিয়েছিল। নতুন পে-স্কেলে বেতন দ্বি-গুণ হওয়ায় এখন দুর্নীতি অনেকটা কমে যাবে। তবে যারা দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাদের কথা আলাদা। সেটা কোনদিনই বন্ধ হবে না। নতুন পে-স্কেলে কী ভাবে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি হয়েছেÑ সে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বরে বেতন কমিশন অষ্টম পে-স্কেল সুপারিশ করার পর থেকেই আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, সপ্তম বেতন কাঠামোতে সচিব, মেজর জেনারেল ও সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকরা একই গ্রেডে থাকলেও নতুন কাঠামোতে তাদের পদাবনতি হয়েছে। এ অভিযোগে মঙ্গলবারও দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। তাদের এই আন্দোলনের সমালোচনা করে মুহিত বলেন, শিক্ষকদের করাপট প্রাকটিস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। দুর্নীতির উদাহরণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেমন প্রত্যেকটি শিক্ষক প্রফেসর হয়। এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসর (পদে) তাদের ইচ্ছামতো প্রমোশন দেয়। তিনি বলেন, অসংখ্য প্রফেসর হয়েছে দেশে। প্রফেসর, এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও লেকচারার। এদের মধ্যে লেকচারার সবচেয়ে কম। নিচে ১০ জন হলে উপরে এক হাজার। এটা কোন সার্ভিস হলো? শুধু উপরে পদোন্নতি হবে। এটা ঠিক করা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি পে-স্কেল দেব, যেটা বাজারের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য হবে। বাজারের সমান হবে না। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নামছে, এটা নামতে থাকবে। আবার বাজারে উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু দাম বাড়ানো এখানকার ব্যবসায়ীদের পেশা হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাজ প্রফিট মার্জিন বাড়ানো। বাংলাদেশে যত প্রফিট মার্জিন, অন্য কোন দেশে নেই। তিনি বলেন, সরকারী চাকুরেদের জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণার একটা প্রভাব বেসরকারী খাতেও পড়বে। তবে বেসরকারী চাকুরেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারী চাকুরেদের চেয়ে বেশি বেতন পান। এছাড়া যারা শ্রমিক তাদের জন্য ন্যূনতম বেতন সরকার মাঝে মাঝেই নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষিত পে-স্কেলকে যুগান্তকারী আখ্যায়িত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, স্থায়ী কোন পে-কমিশন হবে না। ঘোষিত পে-স্কেলে কোন পরিবর্তন কিংবা সংযোজন-বিয়োজন দরকার হলে এ সংক্রান্ত একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি প্রতিবছর মন্ত্রিপরিষদে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন। সেই আলোকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের সঙ্গে তুলনা করলে নতুন পে-স্কেলই গ্রহণযোগ্য হবে। জাপানের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল ॥ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে তাঁর নিজ দফতরে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সময় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জাপানকে জমি বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে পাওয়ার প্ল্যান্টসহ অন্যান্য যে স্থাপনা করতে যাচ্ছি সেখানে বড় উদ্যোক্তা জাপান। আমাদের সার কারখানার অধিকাংশ জাপানের করা। তাই আমরা যদি জাপানকে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন দেই সেক্ষেত্রে চট্টগ্রামে জাপানকে জমি বরাদ্দ দেয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে জাপানীরা তাদের অনেক শিল্প আমাদের এখানে পুনঃস্থাপন করতে পারবে। এজন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা আমরা তাদের করব। বর্তমানে বাংলাদেশে জাপানের ২৩০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাপানে গত পাঁচ বছরে রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি বছর রফতানির পরিমাণ বেড়েই চলছে। আগামী তিন বছরে জাপানে বাংলাদেশের রফতানি দুই বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। স্পেশাল ইকোনমিক জোনে জাপান আরও বেশি বিনিয়োগ করবে। জাপানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও চামড়ার চাহিদা অনেক। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
×