ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

লেন-দেনের স্লোগান ও ঈমানী স্লোগান

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

লেন-দেনের স্লোগান ও ঈমানী স্লোগান

পাকিস্তান পুনরায় ভারতীয় নগ্ন হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই ভারত এটাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। এক শতাব্দীরও বেশি সময় খ্যাতনামা মুসলিম নেতারা ভারতীয় হিন্দুদের সাথে পাশাপাশি বসবাস করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতাদের জন্য তা বাস্তবে পরিণত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহ আজিজ এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও বিবৃতি দিতেন। গতকালের পর আজ পড়ুন শেষ কিস্তি... ॥ তিন ॥ পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামক একটি দেশেই এমনটি ঘটেছে। এবং বাংলাদেশ নামক দেশেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে কথিত মানুষজন তা মেনে নিয়েছে। তা হলে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের তফাৎটি কী? খুলনায় খান এ সবুরের নামে শুধু রাস্তাই নয়, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজও হয়েছে। পারলে খুলনাবাসী তার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও করত। এবং তাতে নিশ্চয় আওয়ামী লীগের নেতারা সহায়তা করতেন। সবুর খানের নামে যে মহাবিদ্যালয় তার সভাপতি হিসেবে একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক গর্ববোধ করছেন। এবং এই নামেই মহাবিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হতে চলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বা এসব কেন প্রশ্রয় দেয়? হাইকোর্টের রুল জারি হয়েছে শিক্ষা সচিবের ওপরও। দেখা যাক, হাইকোর্টকে তিনি গ্রাহ্য করেন কিনা। যে প্রশ্নটি করেছিলাম শুরুতে সেটি আবার করছি। বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা বাদ দিলাম, ১৪ দলের আমলেও কেন, ১৪ দলের কোন নেতা, ছাত্র সংগঠন, এমপি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এর বিরোধিতা করেনি? একমাত্র নির্মূল কমিটি ছিল এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। আসলে ১৪ দলও বলতে হয়, এখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন উৎসুক নয়। জয়বাংলা বা জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগান যে দেয়া হয় তা মতলব হাসিলের জন্য। এই সেøাগানের ভিত্তি চাওয়া-পাওয়া, ঈমান বা বিশ্বাস নয়। একটি হচ্ছে চাওয়া-পাওয়ার সেøাগান, অন্যটি হচ্ছে বিশ্বাসের সেøাগান। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, ১৪ দল বিশ্বাস করে, সবুর খানের বিরুদ্ধে কিছু করলে ভোট কমবে। উদাহরণ দিই। ২০১২ সালে হাইকোর্ট যখন রায় দেয় তখন খুলনার মেয়র ছিলেন জনাব খালেক। তিনি এ বিষয়ে নিস্পৃহতা দেখিয়েছেন। তিনি আবার মেয়র প্রার্থী হয়ে বিএনপির কাছে হারলেন কেন? তার ‘ইসলামী’ ভোট কী হলো? তিনি যদি নাম বদল করার কারণে হারতেন তা হলে বলা যেত ‘ইসলামী ভোট’ তার পক্ষে যায়নি। কিন্তু তাতো নয়। আবার প্রমাণিত হলো ‘ইসলামী ভোট’ আওয়ামী লীগের পক্ষে যায় না, যাবেও না। যদিও আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করেন, এই সব পাকিস্তানীদের তোষামোদ করলে পাকিস্তানীরা তাদের ভোট দেবে।’ এ রকম একটি চিন্তা করতেও তারা লজ্জা বোধ করেন না। যে দেশ বঙ্গবন্ধু ভেঙ্গেছেন সে দেশের সমর্থকরা বাঙালীদের ভোট দেবে? এরা আবার গলাবাজি করে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলেন। ট্র্যাজেডি এখানে। ॥ চার ॥ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মেয়র এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেয়াতে আমাদের আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। ব্যারিস্টার রাশেদুল হক আমাদের পক্ষে সম্পূরক আবেদন করেছিলেন। আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব নাম ব্যবহার করা যাবে না। এবং এ নির্দেশ সারাদেশের জন্য প্রযোজ্য। এখনও যারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি অনুগত তাদের অনুরোধ জানাব, দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের নাম দেয়া থাকলে আমাদের জানাতে। আরও ভাল হতো যদি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সব পৌর/সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হতো। কিন্তু এ ধরনের নির্দেশ মন্ত্রণালয় থেকে বের করা যে কত দুরূহ তা সবাই অনুমান করতে পারেন। হাইকোর্টে গিয়ে আদেশ আনায় আমরা যে খুব উল্লসিত তা নয়, বরং খানিকটা লজ্জিত। এ কাজ তো করা উচিত ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিবিদদের। তারা সে কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মান রক্ষায় আদালতে যেতে হয়েছে। তারা শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। শুনেছি বিচারকদের অভিনন্দন জানানো যায় না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি মতলববাজ ছাড়া যে নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ এখন শহীদদের কথা মনে করেন তারা নিঃশব্দে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আমরা যে মতলববাজ এবং লেন-দেনের সেøাগানে বিশ্বাসী হাইকোর্টের রায় তাই প্রমাণ করল মাত্র। এবং আরও বলি, রায় হওয়ার এতদিন পরও, আমার জানা মতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন বা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারীভাবে কোন কিছু জানাননি। তবে, পত্রিকায় দেখলাম ডজনখানেক ছাত্রলীগ কর্মী সবুর খানের নামফলক তুলে ফেলছে। তারা যে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ থেকে আলাদা সেটি বোঝা গেল মাত্র। এসব দেখে-শুনেই, প্রথমেই প্রশ্নটি রেখেছিলাম আমাদের জাতিরাষ্ট্র প্রক্রিয়া কি সম্পূর্ণ হয়েছে? হয়নি। এবং এ কারণেই এক যুগ আগে লিখেছিলাম, বঙ্গবন্ধু এক অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এটিই বাঙালীর ট্র্যাজেডি।
×