ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক ॥;###;দখল উচ্ছেদে জনগণের সমর্থন কামনা

আগামী বছর থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ৭০ ভাগ বর্জ্য দেখা যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আগামী বছর থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ৭০ ভাগ বর্জ্য দেখা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাস্তা ও ফুটপাথসহ নগরজুড়ে এখন দখলের শেষ নেই। দখলের কারণেই যানজট আর জলাবদ্ধতা। এ নিয়ে নগর পিতাদের শুনতে হয় নানা কথা। তাই সড়কে দখল উচ্ছেদে ‘মাস্তানি’ করার ঘোষণা দিয়ে তাতে নগরবাসীর সমর্থন চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। আগামী বছর থেকে প্রতি ওয়ার্ডে প্রায় ৭০ ভাগ বর্জ্য দেখা যাবে না বলেও অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন নবনির্বাচিত এই মেয়র। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি। আনিসুল হক বলেন, রাস্তা দখল করে ট্রাক রেখে দিয়েছে, মাস্তানি করে। কেউ কথা শোনে না। কথা রাখে না। যাদের কথা রাখার কথা, তারাও অবাধ্য। কোথায় যাব। তিনি বলেন, আমি কি এখন তাদের সঙ্গে মাস্তানি করব? আমি ব্যবসায়ী মানুষ, তবে মাস্তানি করতেই এখানে এসেছিÑ এ কথা বলে নিজের কাজে রাজধানীবাসীর সমর্থন চান। আনিসুল হক বলেন, নগর ভবন সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির তদন্ত কিছু শুরু করেছি। তিন দিনের বেশি ফাইল ধরে রাখতে পারবে না, এমন নিয়ম করেছি। চার দিনও যদি কোন ফাইল রেখে দিতে হয়, সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে ফাইলের কোণায় এবং এতে কিছুটা কাজ হচ্ছেও। কাজে গতি এসেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক হেসে বলেন, নিজের কবরের জায়গা কিনতে পারিনি। আমার কবরের জায়গা আমার বাবা কিনে রেখেছেন। যাই হোক, রায়েরবাজারে বিশাল কবরস্থান করেছি। এর পুরোটুকু ভরতে অন্তত ১৫ বছর লাগবে। অনুষ্ঠানে রাজধানীর জলাবদ্ধতা, যানজট, খাল দখল, বর্জ্য, পশুর হাট, অবৈধ বিলবোর্ড নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এক সময়ের টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিত আনিসুল হক। রাজধানীর যে কোন সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও ‘ব্যুরোক্রেটিক অথরিটি’ নিয়ে একটি সমন্বিত কাঠামো ঠিক করার সুপারিশ করেন আনিসুল হক। বক্তব্যের শুরুতে আনিসুল হক বলেন, বাঙালী খুব সহজে ভুলে যায়, সহজে মাফ করে দেয়। পাঁচ বছর আগের কী সমস্যা ছিল। তা খুব কম মনে আছে। আবার গত তিন দিনে যা আছে, তা স্মৃতিতে জাগরুক। তিনি বলেন, জলকে কোথাও যেতে হবে। জল নদী, খাল ও জলাশয়ে যাবে। কী করে যাবে? সবই তো দখল আর ভরাট। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে না, পাইপের মধ্য দিয়ে যাবে। এখানেই সমন্বয়ের সমস্যার কথাটি তুলে ধরেন তিনি। পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ১৪ জন অথরিটি। মেইন অরথিটি আমরা ডিএনসিসি ও ওয়াসা। ডিএনসিসি-ওয়াসা মিলে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি পাইপ আছে। ওয়াসার পানি খালে যায়, নদীতে যায়। কিন্তু এখন নদীর কী অবস্থা! খাল আর খাল নেই। এসব খাল উদ্ধারের দায়িত্বটি ওয়াসার বলে মনে করিয়ে দিয়ে মেয়র বলেন, আমি চাইলেও কোন খরচ করতে পারব না। আমি খরচ করলে দুদকে মামলা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, শহরজুড়ে বর্জ্য, যেখানে যাবেন বর্জ্য। ট্রান্সফার স্টেশন কেউ তৈরি করেনি। এ জন্য আপনার বাড়ির সামনে ফেলে, আমার বাড়ির সামনে ফেলে। আমি বর্জ্য ফেলার ৭০টি জায়গা ঠিক করেছি। তার মধ্যে ১৪টি জায়গা আমার। বাকিগুলোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে যাচ্ছি। আগামী বছরের মধ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বর্জ্য দেখা যাবে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, অনেক জায়গায় অথরিটি নেই। তারপরও আমি আমার অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। তিন লাখ গাড়ির ধারণক্ষমতার স্থানে ১১ লাখ গাড়ি চলার হিসেব দেখিয়ে তিনি উত্তরার একটি অভিজাত ক্লাবে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরের মতো গাড়ির নম্বর প্লেটে অড এবং ইভেন নম্বর করেনÑ যানজট কমে যাবে। সেখানে উপস্থিতদের বলেছিলাম, নিজের মন স্থির করুন। পাঁচ মিনিট পর একটা প্রশ্ন করব। যানজট নিয়ে আমার প্রশ্ন শুনে বিশ্বাস করবেন কিনাÑ হাজার লোকের মধ্যে ৩০ জনও হাত তোলেননি। আগামী সপ্তাহ থেকে প্রত্যেক এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার ঘোষণাও দেন নতুন মেয়র। কাওরানবাজার থেকে পাইকারি বাজার সরিয়ে নেয়া, বাস মালিকদের চার হাজার বাসা কিনে দেয়ার মতো পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাহায্য চাইছি। ঢাকা শহরের ৪৭টা ফুটপাথ সিঙ্গাপুরের মতো ফুল দিয়ে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান আনিসুল হক। পশু কোরবানির জন্য ৪৯৩টি জায়গা ঠিক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যত পশু কোরবানি হবে তার তুলনায় তা যথেষ্ট নয়, তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
×