ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয়প্রার্থী বিষয়ে ইইউ আইন মেনে চলার আহ্বান জার্মানির

বুদাপেস্ট স্টেশনে চরম বিশৃঙ্খলায় অভিবাসীরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বুদাপেস্ট স্টেশনে চরম বিশৃঙ্খলায় অভিবাসীরা

জার্মানিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবিতে শত শত ক্রুদ্ধ অভিবাসনকামী মঙ্গলবার বুদাপেস্টের ইস্টার্ন রেলওয়ে টার্মিনালে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে গমনের জন্য অভিবাসীদের বৃহত্তম ঢল ইইউর রাজনৈতিক আশ্রয়ের নীতিমালাকে অকার্যকর করে দিয়েছে। এদিকে হাজার হাজার অভিবাসনকামী গ্রীসের মূল ভূখ-ে প্রবেশ করছে। গ্রীক সরকার সে দেশের উপকূলে পৌঁছানো বিপুলসংখ্যক লোকদের মোকাবিলায় ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর ইয়াহু নিউজ ও বিবিসির। প্রায় ১ হাজার লোক স্টেশনের বাইরে সমবেত হয়ে টিকিট নাড়িয়ে, হাততালি ও দুয়োধ্বনি দিয়ে, জার্মানি! জার্মানি! বলে চিৎকার করছিল। পরে প্রবেশপথে পুলিশের অবরোধ লক্ষ্য করে তারা বসে পড়ে। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট দলের মধ্যে একটি কিশোরের তুলে ধরা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী কাগজে জার্মানি ভাষায় লেখা ছিলÑ ‘প্লিজ, আমরাও মানুষ।’ ৯০ দশকের বলকান যুদ্ধের সঙ্গে তুলনীয় এই শরণার্থী সঙ্কট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কট এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিভ্রান্ত ও বিপরীতমুখী শিবিরে বিভক্ত করে ফেলেছে; লাখ লাখ দরিদ্র ও বেপরোয়া মানুষের আগমন মোকাবিলায় যার কোন পদ্ধতি নেই। জার্মানি তুলনামূলকভাবে শরণার্থীদের বৃহত্তম অংশটিকে গ্রহণ করতে পারে। সিরীয় গৃহযুদ্ধ থেকে পলায়নপর মানুষদের ক্ষেত্রে দেশটি কার্যকরভাবে ইইউর আইনও স্থগিত রেখেছে, যেখানে বলা আছে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের অবশ্যই প্রথমে তারা ইইউর যে দেশে পৌঁছবে সেখানেই তাদের আবেদন করতে হবে। তবে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি থেকে ট্রেনবোঝাই হয়ে মিউনিক ও রোজেনহাইমে যখন স্রোতের মতো শরণার্থী প্রবেশ করছে সে সময় মঙ্গলবার জার্মানি জোর দিয়ে বলেছে, এসব সত্ত্বেও ওই আইন এখনও বলবত আছে। দেশটি অন্যান্য ইইউ দেশকেও আইনটি মেনে চলতে বলেছে। যে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী সংঘাত-সহিংসতা থেকে পালাচ্ছে এবং দারিদ্র্য এড়াতে যারা অভিবাসী হচ্ছে, তারা ইউরোপের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে পৌঁছেছে। তবে তারা আরও উত্তর ও পশ্চিমে সম্পদশালী দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং দৃঢ়সঙ্কল্প প্রকাশ করেছে। এর অর্থ অবৈধভাবে কোন রাষ্ট্র জোটের সীমান্ত আইনকে লঙ্ঘন করা, যেখানে তাদের থামানোর জন্য কোন অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নেই। হাঙ্গেরি বলকান উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে স্থলপথে ইইউতে যাওয়ার জন্য একটি প্রধান প্রবেশপথ হওয়ায় দেশটি সঙ্কটের একটি প্রধান উত্তেজনা ও ক্ষোভের এলাকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বুদাপেস্ট রেলস্টেশন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় এবং পরে পুনরায় খুললেও অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। সোমবারের পর এটি একেবারে বিপরীত সিদ্ধান্ত। সেদিন হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়া থেকে ট্রেনবোঝাই অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জার্মানিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। সরকারী মুখপাত্র জোলতান কোভাক্স বলেন, ইইউ আইন বলবত করার প্রচেষ্টার এই বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে। স্টেশনের বাইরের চত্বরে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রায় ২ হাজার লোকের ক্যাম্পে অবস্থান পরিস্থিতি কত দুর্বিষহ হতে পারে সে চিত্রই তুলে ধরে। সিরিয়ার আলেপ্পোর ২০ বছর বয়সী তরুণী মারাহ বলেন, ‘আমরা এখানে হাজারও মানুষ, কোথায় যাব আমরা?’
×