ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইরান পাইপলাইনে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহে আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ইরান পাইপলাইনে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহে  আগ্রহী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইরানের গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্র্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। এছাড়া চট্টগ্রামের তেল শোধনাগার আধুনিকায়নে সহায়তা দেবে ইরান। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েঝি এ সব তথ্য জানান। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরান। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ইরানের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের রাষ্ট্রদূত। জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েঝি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ড. আব্বাস ভায়েঝি বলেন, ইরান থেকে ভারতে গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন বসানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে সেখানে যুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ আগ্রহী হলে ভারত হয়ে পাইপলাইন এখানেও আসতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ পাকিস্তান পর্যন্ত শেষ হয়েছে। এরপর পাইপলাইনটি পাকিস্তান থেকে ভারতে আসবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদকে এ বিষয়ে আলাপের জন্য ইরানে সফরের আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশে ইরানের সহায়তায় তৈরি একমাত্র তেল শোধনাগারটির উন্নয়নের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রী ইরান সফর করলে সেই সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হতে পারে। বাংলাদেশের তেল শোধনাগার আধুনিকায়নে ইরান সহায়তা দেবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশের অভিবাসীদের ইরানে যাওয়ার নতুন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব অবরোধ তুলে নেয়ায় ইরানে বেসরকারী খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। ইরানের টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তিসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা কাজ করছেন। অবরোধ তুলে নেয়ায় এই সুবিধা এখন আরও বৃদ্ধি পাবে। আব্বাস ভায়েঝি বলেন, ইরান অনেকবারই সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি সম্পাদন করে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছি। তালেবান বা নতুন গজিয়ে ওঠা আইএস, কাউকেই ছাড় দেবে না ইরান। ইরান সব সময়ই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ভবিষ্যতেও সেই অবস্থানেই থাকবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্সসহ জার্মানির সঙ্গে মাসখানেক আগে আমরা পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। ওই চুক্তির ফলে উভয়পক্ষেরই বিজয় হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। চুক্তি কার্যকর হওয়া ইরানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে ভায়েঝি বলেন, পরমাণু ইস্যু কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের আরোপিত অবরোধের মধ্যে ছিল ইরান। এই সময়ে আমরা বহির্বিশ্বের সঙ্গে তেমনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারিনি। তবে বর্তমান যুগে বিশ্বের কোন দেশই একা পথ চলার সামর্থ্য রাখে না। আমাদের পক্ষেও তা সম্ভব নয়। এ চুক্তির ফলে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে মুক্তি পেতে চলেছি। এক প্রশ্নের জবাবে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী ইরান। বাংলাদেশ থেকে আমরা পোশাক শিল্প পণ্যও নিতে চাই। দুই দেশের মধ্যে আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাাড়তে চাই। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও লিবিয়ায় চলমান অস্থিরতার ব্যাপারে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ভায়েঝি বলেন, এগুলো আসলে বিদেশীদের সৃষ্টি। এতে ওইসব এলাকার সাধারণ মানুষরা ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এটা অত্যন্ত অমানবিক। তবে এ সব দেশে অস্থিরতার ব্যাপারে কোন কোন বিদেশী শক্তি দায়ী, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেননি তিনি। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারে ইরান রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে ইরানের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ-ইরান সরকার একযোগে কাজ করছে বলেও তিনি জানান। ইরানের নির্মিত মুহম্মদ (স) সিনেমা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা সিনেমাটি আগে দেখুন। সিনেমাটি কেমন হয়েছে সেটা নিজেই বিচার করুন। রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করা এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ইরান ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। সে কারণে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর বলেও তিনি জানান। অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইরানের ফার্সি ভাষা এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। কবি নজরুলের সাহিত্যেও এই ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ইরানের কোন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এবারই প্রথমবারের মতো ‘ডিক্যাব টক’ আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
×