ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি ॥ ও কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি ॥ ও কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলেও গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশের আগে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিবহন ভাড়া বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম এই দুই মহানগরীতে সিএনজিতে চলা পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। এর বাইরে অন্য কোন রুটে গণপরিবহনের ভাড়া যেন কোন অবস্থাতেই না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এ আর খান গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন। গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা করা হয়েছে। গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। যা মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। গ্যাস ও বিদুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর পরই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবি ওঠে। যদিও সর্বশেষ ২০১৩ সালে তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গণপরিবহনের নির্ধারিত ভাড়ার হার কেউই মানছে না। বলতে গেলে ভাড়া নিয়ে রীতিমতো অরাজকতা চলছে। চলছে ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি। এসব বন্ধে সরকারের কোন পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নেই। বিআরটিএর পক্ষ থেকে বাড়তি ভাড়া রোধে নেই কোন কার্যকর ব্যবস্থা। এদিকে সড়ক ও জনপথ অধিফতরের (সওজ) আওতাধীন টোলের হার বাড়ায় বাস ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশ দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। নির্দেশের পর দূরপাল্লার ৩৮০ রুটে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিআরটিএ। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর গাবতলী থেকে ৬১, মহাখালী থেকে ৬০ এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ৮৭ গন্তব্যে বাস চলাচল করে। এ ছাড়া আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস মিলে মোট রুটের সংখ্যা ৩৮০। সব রুটে টোলসহ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত তুলে ভাড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত গণপরিবহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যারা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ৫ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট দু’টি কমিটি আলোচনা করে এবং বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে এ বিষয়ে সুপারিশ করবে। সুপারিশের পর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। কমিটির সুপারিশ ছাড়া ভাড়া বাড়ানো যাবে না। আগের হারে ভাড়া নিতে হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর যারা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলা হবে। যারা ভাড়া বাড়িয়েছেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্টে যাব। আইনে যা আছে, তাই হবে। যাত্রীবাহী মোটরযানের ভাড়া পুনর্নির্ধারণে সুপারিশ করতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণেও রয়েছে ৮ সদস্যের আরেকটি কমিটি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিসি, বিআরটিএ, ডিটিসিএ, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) কোম্পানি লিমিটেড, সড়ক পরিবহন সমিতি, বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং কনজুমার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে এই দুই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি জারি করা গেজেট অনুযায়ী এ দু’টি কমিটি গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে থাকে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক সমিতি ভাড়া পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে কোন নির্দিষ্ট হার উল্লেখ করেনি তারা। এ বিষয়ে কমিটিও এখন পর্যন্ত কোন সুপারিশ করেনি। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য ভাড়া পুনর্নির্ধারণ প্রয়োজন।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, এ প্রেক্ষাপটে আমরা স্পষ্ট জানাতে চাই, এখন পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত আগের হারেই ভাড়া কার্যকর থাকবে। মন্ত্রী বলেন,‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর খুবই প্রেসারে আছি। বারবার সাংবাদিকরা নানা কথা জিজ্ঞাসা করছেন।’ সিএনজির অতিরিক্ত ভাড়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিআরটিএকে দায়িত্ব পালন করতে বলব। ‘আগের ভাড়া না মেনে আবারও যদি ভাড়া বাড়ানো হয় তাহলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে’- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যদির কথা নদীতে ফেলুন’। ‘বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নেই, গণপরিবহনে এখনও শৃঙ্খলা আনতে পারিনি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ দেশের ২২ মহাসড়কে অনেকটা কার্যকর হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটু ওয়েট করেন। আমরাও চাই গণপরিবহনের সমস্যার সমাধান হোক। এ সময় অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকারী ঘোষণা না আসার আগে কেউ যেন বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য পরিবহন সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তবুও আমরা আশাবাদী আগামী সপ্তাহের মধ্যে হয়ত পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হতে পারে। বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমছে তখন বাংলাদেশে বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি অযৌক্তিক বলে মনে করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের সরকার নির্ধারিত পরিবহন ভাড়া মানা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
×