ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক মাসের বেশি পাট মজুদ করলে শাস্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এক মাসের বেশি পাট মজুদ করলে শাস্তি

কাওসার রহমান ॥ এক মাসের বেশি কেউ পাট মজুদ করতে পারবে না। কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বেশি মুনাফারা আশায় কেউ পাট মজুদ করে রাখলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাট বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় গত রবিবার পাট অধিতফরকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভায় ভেজা পাট কেনাবেচার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কাঁচাপাট রফতানির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যাচাই-বাছাই করে আগামী এক মাসের মধ্যে দেশে পাটের প্রকৃত উৎপাদনের হিসাব নিরূপণ করতে পাট অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা সাময়িকভাবে ‘আনকাট’ কাঁচাপাট রফতানি বন্ধের প্রস্তাব করে। তবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কাঁচাপাট রফতানিকারকরা। ফলে সভায় পাট রফতানি বন্ধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পাট মন্ত্রণালয় জানায়, এবার পাটের ফলন ভাল। ফলে এ বছর দেশে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদিত হবে। তবে পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা সরকারের এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, পাট আবাদ এ বছর খড়ার কবলে পড়ে। এতে পাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং ফলন অনেক কম হবে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর পাটের উৎপাদন ৫৫ লাখ বেলের বেশি হবে না। আবার দেশে গত বছরের মজুদ পাটও বেশি নেই। মৌসুমের শেষ দিকে ভারত বেশ কিছু পরিমাণ পাট আমদানি করেছে। এ বছরের প্রারম্ভিক মজুদ কম। অন্যদিকে পাট শিল্পের পাট পণ্য উৎপাদনের জন্য বছরে প্রায় ৫৪ লাখ বেল কাঁচাপাটের প্রয়োজন হয়। আর রফতানির জন্য প্রয়োজন আরও ১০ লাখ বেল। ফলে পাট শিল্প ও রফতানির জন্য এ বছর ৬৪ লাখ বেল পাটের প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে এ বছর দেশে ১৪-১৫ লাখ বেল কাঁচাপাটের ঘাটতি দেখা দেবে। দেশের পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই শিল্পে পাটের যোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে যে কাঁচাপাট রফতানি হচ্ছে তার মধ্যে ২৮ শতাংশই ‘আনকাট’ অবস্থায় রফতানি হয়। রিজেকশনের নামে লংজুট রফতানি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দেশের পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাট অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে বিটিআর ও বিডব্লিউআর গ্রেডের কাঁচাপাট রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। পাট শিল্পের উদ্যোক্তাদের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন পাট রফতানিকারকরা। তারা পাট শিল্পের উদ্যোক্তাদের দেয়া পাট উৎপাদনের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের মতে, দেশে এ বছর অন্তত ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে। পাট অধিদফতরের হিসাব বাদ দিলেও গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি পাট উৎপাদিত হয়েছে। আর পাট অধিদফতরের হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর দেশে ৫২ লাখ বেল পাট ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়া গত বছর শেষে পাটের ক্যারিওভার ছিল ১০ লাখ বেল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শিপার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, গত বছরের সমাপনী মজুদ (১০ লাখ বেল) ও এ বছরের উৎপাদন (৭৫ লাখ বেল) মিলিয়ে এবার পাটের প্রাপ্যতা দাঁড়ায় ৮৫ লাখ বেল। অথচ দেশে পাটের চাহিদা হচ্ছে ৫২ লাখ বেল। ফলে এ বছর ঘাটতি নয়, বরং ৩০ লাখ বেলের মতো পাট উদ্বৃত্ত থাকে। যদি কম করেও ধরি, তাহলে ২০ লাখ বেল পাট উদ্বৃত্ত থাকবে। কারণ এখন কাঁচাপাটের রফতানি বাজার হ্রাস পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ১০ লাখ বেলের বেশি পাট রফতানি হয় না। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ করে দিয়ে পাট ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফা পাট রফতানি বন্ধ করে দিয়ে রফতানিকারকদের আর্থিক মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সে দফায় কাঁচাপাট রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। যদিও ওই বছর মৌসুমের শেষদিকে এসে ডিসেম্বরে পাট রফতানি বন্ধ করা হয়েছিল। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা এবং যাচাই-বাছাই করে এ বছর পাট উৎপাদনের প্রকৃত হিসাব তুলে আনার প্রস্তাব দেন। তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। রেজাউল করিম বিটিআর ও বিডব্লিউআর গ্রেডের নামে ভাল পাট রফতানির অভিযোগ নাকচ করে দেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কম দামে ভাল পাট রফতানির প্রশ্নই আসে না। সভায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এক মাসের মধ্যে দেশে পাট উৎপাদনের প্রকৃত হিসাব প্রদানের জন্য পাট অধিদফতরকে নির্দেশ দেন। সম্প্রতি পাট মন্ত্রণালয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাট অধিদফতর কর্মকর্তারা ছাড়াও সরকারী জুট মিলগুলোর সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি), বেসরকারী জুট মিলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিলস এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এবং কাঁচাপাট রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ভারতেও এ বছর পাট উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে প্রতিবেশী দেশেরও পাটের ফলন অনেক কম হবে। এ বছর ভারতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ বেল। কিন্তু খড়া ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেদেশেও ৭৫ থেকে ৭৭ লাখ বেলের বেশি পাট উৎপাদিত হবে না। আর তাদের গত বছরের ক্যারিওভার রয়েছে প্রায় ১০ লাখ বেল। ফলে ভারতে এ বছর পাটের প্রাপ্যতা দাঁড়াবে ৮৫ থেকে ৮৭ লাখ বেল। অথচ এই দেশটিতেই প্রতি বছর পাটের প্রয়োজন ৯০ লাখ বেল।
×