ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ বর্বরতার অবসান হোক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এ বর্বরতার অবসান হোক

সভ্যতার পাশাপাশি নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, নির্দয়তা পাল্লা দিয়ে একই সঙ্গে এগোচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে গত ও চলতি সপ্তাহে অন্তত কয়েকটি ঘটনায়। গৃহবধূকে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন, চুরির অপবাদে শিশুকে নির্যাতন, শিকলে বেঁধে শিশুকে আটকে রাখা, কথিত চুরির অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাগুলোর মধ্যে কি প্রকাশ পায় না মানুষের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতা, অসহিষ্ণুতা, আইন হাতে তুলে নেয়া, সর্বোপরি সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র? এমন বাস্তবতায় যে কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। যদিও অতি সম্প্রতি নড়াইলের এক উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, সিলেট ও খুলনায় বর্বরোচিত কায়দায় দুই শিশু হত্যার ঘটনা বোধ করি কারও মন থেকে মুছে যাওয়ার কথা নয়। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দিনাজপুরের গৃহবধূ রেহেনা বেগমের ওপর নির্যাতনের ঘটনা শুধু দুঃখজনক বললে কম বলা হয়। তার ওপর এ ন্যক্কারজনক ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়, সন্দেহ নেই। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের এই গৃহবধূর চরিত্র হনন, তার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শ্লীলতাহানি করেই দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত হয়নি, একই সঙ্গে পরিবারকেও করা হয়েছে একঘরে। তার পিতা ও স্বামীকেও গুরুতর আহত করা হয়েছে। মামলা তুলে না নেয়ায় গাছে বেঁধে করা হয়েছে পুনরায় নির্যাতন। এসব করেছে এলাকার প্রভাবশালী এক পরিবার। এখানে স্পষ্টত প্রচলিত আইনের প্রতি দেখানো হয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুল। সমাজে একঘরে করার মূলত কোন আইনগত ভিত্তি তো নেই-ই, অধিকার ও প্রয়োগের ক্ষমতার প্রশ্নই ওঠে না। মামলার পর পুলিশের আশানুরূপ সহায়তা না পাওয়াটাও অনভিপ্রেত। পুলিশের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই নির্যাতিত নারী ও পরিবারের ওপর যেরকম দুর্দশা নেমে এসেছে তাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতিও অনেকাংশে দায়ী। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা প্রত্যাশী। সম্প্রতি শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলোÑ অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় অন্য অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহী হয়ে উঠছে। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আছে বিশেষ আইন। তবে আইনের প্রায়োগিক দিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা সমালোচনার উর্ধে নয়। তাদের আইন প্রয়োগের দুর্বলতা ও অদক্ষতার কারণে অনেক সময় অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। ফলে ভিকটিম আবার নির্যাতন-অত্যাচারের শিকার হয়। এমন দৃষ্টান্ত খুঁজতে বেশি দূর যেতে হয় না। উল্লিখিত ঘটনাই এর সাক্ষী। জামিনে ছাড়া পেয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তার ও পরিবারের ওপর যে পৈশাচিক হামলা ঘটেছে তা নিরাপত্তাহীনতার বহির্প্রকাশ নয় কি? নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা আর নয়- এমন কথা অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু এ সহিংসতা যেভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তাতে এখন শক্ত হাতে এসব দমন ও প্রতিরোধের বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি প্রয়োজন সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি তথা সামাজিক আন্দোলন।
×