ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিরল হতে চলেছে শিকারি পাখি চিল

‘এই ভিজে মেঘের দুপুরে আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে...’

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘এই ভিজে মেঘের দুপুরে আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে...’

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়... হয়তো মানুষ নয়, শঙ্খ চিল শালিকের বেশে’। তারই লেখা ‘হায় চিল’ কবিতায় তিনি লিখেছেন- হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে- উড়ে ধানসিঁড়ি নদীর পাশে। যেসব পাখি খাদ্য সংগ্রহের জন্য প্রখর ইন্দ্রিয় শক্তি ব্যবহার করে তাদের শিকারি পাখি বা ‘বার্ডস অব প্রে’ বলা হয়। এরা প্রধানত মেরুদণ্ডী প্রাণী শিকার করে। এমনকি অন্য পাখিও শিকার করে খায় এরা। এসব শিকারি পাখির শারীরিক গঠন অন্যসব পাখির তুলনায় একদম ভিন্ন। এদের থাকে মজবুত শক্তিশালী নখর ও ঠোঁট। এর সাহায্যে শিকারের চামড়া ও মাংস খুব সহজেই ছিঁড়তে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় আকারে একটু বড় হয়। শিকারি জীবনযাপনের কারণে বেশিরভাগ সময়ই এরা বাস্তুতন্ত্রে সর্বোচ্চ খাদক হিসেবে পরিচিত। পাখির জগতে বহু পাখি আংশিক বা পুরোপুরি শিকারি, কিন্তু পাখিবিজ্ঞানে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট বর্গ ও গোত্রের পাখিদের শিকারি পাখি বলা হয়। মাত্র ছয়টি গোত্রের পাখি শিকারি হিসেবে পরিচিত। এদের আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দিবাচর ও নিশাচর শিকারি পাখি। এদের মধ্যে শঙ্খচিল, ভুবন চিল, কালো ডানা চিল, কালো কাঁধ চিল, সাদাগলা চিল, বাঁকা ঠোঁট চিল ও বাজপাখি অন্যতম। মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, শক্ত, বাঁকানো, মজবুত ঠোঁট শিকারি পাখিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শঙ্খচিল দৈর্ঘ্য ৭৬-৮৪ সেমি, গড়ে ৮৪ সেমি। নদীনালা, জলাশয়ের আশপাশে এদের দেখা যায় বেশি। শঙ্খের মতো সাদা এদের মাথা, ঘাড়, বুক, পেটের তলার পালক যার ওপর মরিচার মতো খাড়া ছোট রেখা থাকে। এবং কেবল প্রাথমিক পালক কাল; ঠোঁট ছোট, লেজ সবসময় গোলাকার ডগাযুক্ত ডানায় থাকে লাল, বাদামী এবং কালো আর দেহের নিচের দিকে বহু রেখা সংবলিত, সবসময় লেজ ও ডানা একই দৈর্ঘ্যরে তাই এদের নাম হয়েছে শঙ্খ চিল। কিন্তু ডানা দুটি ও শরীরের অন্যান্য অংশ খয়েরী। এরা জীবিত মাছ এবং জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। ছোট সাপ, হাঁস-মুরগীর বাচ্চা এদের প্রিয় খাদ্য। গ্রামে এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। বড় বড় জলাশয়ের পাশে এবং সুন্দরবনে বড় বড় ঝাঁকে বাস করে। সুযোগ পেলে জেলে নৌকা বা ট্রলার অনুসরণ করে। ডানা মেলে শূন্যে ভেসে থাকে। ডিসেম্বর-এপ্রিল হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শঙ্খ চিলের প্রজনন ঋতু। দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় আগস্ট-অক্টোবর আর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় এপ্রিল-জুন। এরা উঁচু স্থানে বাসা বাঁধে ছোট ছোট ডাল ও শুকনো পাতা দিয়ে। একই বাসা এরা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। শঙ্খ চিল দুটো করে ডিম দেয়, মা বাবা দু’জনে মিলে বাচ্চা বড় করে। তবে ডিমে ‘তা’ দেয় শুধু স্ত্রী পাখিটি। ভুবন চিলের বৈজ্ঞানিক নাম : গরষাঁং সরমৎধহং আর ইংরেজী নাম ইষধপশ করঃব. দুই মেরু আর আমেরিকা মহাদেশ বাদে প্রায় পৃথিবীজুড়ে এদের বিস্তৃতি। পৃথিবীতে এ প্রজাতির চিলের সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ৬০ লাখ বলে বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলাদেশ, পূর্বভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোচীন ও মালয় উপদ্বীপ এদের প্রধান আবাস। গফরগাঁও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনসুর বলেন, প্রতি বছরই এই জাতীয় কিছু চিল আমার বাড়ির উঁচু রেইন্ট্রি কড়ই গাছে বাসা বাঁধে। তবে শিকার হিসেবে পুকুরের মাছ, হাঁস-মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়। গাছের মগডালে থাকে বলে এদের তাড়ানো যায় না। দৃষ্টিনন্দন এই শিকারি পাখিটি আজকাল আর আগের মতো দেখা যায় না।
×