ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবীর নন্দী-কান্তার গানে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ আগস্ট ২০১৫

সুবীর নন্দী-কান্তার গানে মুগ্ধ শ্রোতা

গৌতম পাণ্ডে ॥ শিল্পী এবং শ্রোতার সঙ্গে আত্মিক মিলনেই পূর্ণতা শিল্প সৃষ্টিতে। এমনই এক শিল্পক্ষেত্র তৈরি হলো শনিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গলের ‘প্রাণের খেলা’ শীর্ষক গানের আসরে। স্বনামধন্য শিল্পী সুবীর নন্দী গাইতে গাইতে এক সময় বলেই ফেললেন, এমন বৈঠকী গানের আসর এখন আর তেমন হয় না। বহুদিন পর একটা ভাল গানের আসর পেলাম। সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক একবার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নিবেদিত সুবীর নন্দী’র ‘ভালবাসার তরী’ এ্যালবামের মুখবন্ধের এক অংশে লিখেছিলেন- ‘সুবীর, আমার প্রিয় হবিগঞ্জের সুবীর নন্দী, খুবই অগায়কসুলভ বিনয়ী, বিনম্র, ভদ্র মানুষ। দেখলে মনটা ভরে ওঠে। কিন্তু তিনি তো এক গীতিময় প্রাণ। জানি না, তবুও ভাবতে চাই, গানটা তার ভালবাসার ধন, কেবল বেচবার সামগ্রী নয়। তার গানের আকুতি সে কথা স্পষ্ট করে বলে, সারাক্ষণ বলে।’ ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এদিন বিকেল থেকেই শ্রোতাদের উপস্থিতি ছিল সরব। সঙ্গীত পিপাসুদের জন্য আসরটি ছিল অন্যরকম একটি মুহূর্ত। অনেকের চোখে-মুখে গানের রস আস্বাদনের এক অবয়ব ফুটে ওঠে এসময়। আসরের প্রথম শিল্পী ছিল ফারহানা কান্তা। তার গানের পূর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের ধারাবাহিক এ আয়োজনে নবীন প্রতিভাবান শিল্পীর সঙ্গে একজন জনপ্রিয় শিল্পী অংশ নিয়ে থাকেন। রাগাশ্রয়ী বাংলা গানের এ আসরে গান পরিবেশন করবেন বেঙ্গল প্রতিভা বিকাশ থেকে উঠে আসা নবীন শিল্পী ফারহানা কান্তা এবং আমাদের সবার প্রিয় সুবির দাÑ শিল্পী সুবীর নন্দী। মঞ্চে আসেন কান্তা। ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় তাকে। বিনয়ী ও নম্রতায় শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার গান যদি বিন্দুমাত্রও আপনাদের ভাললাগে তাহলে আমার চেষ্টা সার্থক। ‘যামিনী হবে কি ভোর নবারুণ রাগে’ গানটি দিয়ে শুরু হয় তার পরিবেশনা। কিরওয়ানী রাগে তার এ মৌলিক গানটির কথা ও সুর ওস্তাদ বাসুদেব ঘোষালের। কলতাকায় কান্তাকে গানটি শিখিয়েছিলেন বাসুদেব নিজেই। শিল্পী ধীরে ধীরে হালকা পর্যায়ের রাগাশ্রয়ী গানের দিকে অগ্রসর হন। গাইলেন বেগম আখতারের বিখ্যাত গান ‘জোছনা করেছে আড়ি’। এরপর বিদুষী শিপ্রা বসুর গাওয়া পর পর দুটি গান গাইলেন। একটি হলো ‘বিনি সুতোয় গাঁথা মালা’ (কথা সুনীল বরণ, সুর বরুণ দে বসু) অন্যটি ‘যমুনা কি বলতে পারে কতবার কেঁদেছে রাধা’ (কথা সুনীল বরণ, সুর সুকুমার মিত্র)। শিল্পী কান্তার শেষ গান, গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের কথায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্রের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘দোলে দোদুল দুলে ঝুলনায়।’ মঞ্চে আসেন শিল্পী সুবীর নন্দী। ফুলের শুভেচ্ছার পাশাপাশি শ্রোতাদের বিপুল করতালিতে অভিনন্দিত হন তিনি। শুরুতে তিনি বলেন, এখনকার গান শুনলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কান্তার গান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রজন্মের কোন শিল্পী যদি ভাল গান গায়, মনটা খুশিতে ভরে যায়। ভাল শিল্পীর পাশাপাশি ভাল শ্রোতাও চাই। মূলধারার বাংলা গানের ভাটা পড়ে গেছে। সেখান থেকে বেঙ্গল পরম্পরায় কান্তার মতো নবীন শিল্পী তৈরি হচ্ছে এটা আশার সঞ্চার করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গাইলেন ‘কথা কও কও কথা থাকিওয়া চুপ করে।’ এরপর শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ‘ওই মহাসিন্দুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে।’ পরের পরিবেশনায় ছিল ওস্তাদ আমানত আলী খাঁর বিখ্যাত গজল ‘ক্যায়া পুছতে হো ইশ্ক মে হাম ক্যায়সে লুট গ্যায়ে’ অবলম্বনে একটি বাংলা গান ‘কতদিন যেন দেখা হয়নি, তবু তার স্মৃতি আমি যাই বইয়ে।’ হিন্দি উচ্চারণের মিশেল দিয়ে বাংলা গানের অসাধারণ উপস্থাপনা ছিল এ পরিবেশনায়। এরপর গাইলেন মান্নাদের গান ‘সেইতো আবার কাছে এলে, এতদিন দূরে থেকে বলনা কি সুখ তুমি পেলে।’ পরের পরিবেশনায় ছিল ‘বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’ গানটি। পরে গাইলেন রাগেশ্রীর ওপর মান্না দে’র গান ‘ওগো সারাটি যামিনী জাগি।’ এরপর পরিবেশন করেন সাইফুল হোসেন মুকুলের কথা ও নিজের সুরে রূপক তালের গান ‘কি যে ব্যথা বাজে আমার বুকে।’ পরের পরিবেশনায় ছিল মোঃ রফিকুজ্জামানের কথা ও খন্দকার নুরুল আলমের সুরে গান ‘পাহাড়ের কান্না দেখে।’ এরপর পরিবেশন করেন প্রদীপ গোস্বামীর কথা ও সুজেয় শ্যামের সুরে গান ‘তুমি তো আমার আপনও না পরও না।’ শিল্পীর সব শেষ পরিবেশনা ছিল জনপ্রিয় গান ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়।’ এ গানটির সঙ্গে মান্না দে’র ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’ গানটির মিশেল ছিল অসাধারণ। শিল্পী সুবীর নন্দীর সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন বিশ্বজিত সরকার এবং শিল্পী কান্তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম। উভয়ের সঙ্গে যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেনÑ কী বোর্ডে বিনোদ রায়, গিটার মনোয়ার হোসেন টুটুল ও পারকাসনে ছিলেন বিদ্যুৎ রায়।
×