ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি মাদারীপুরের দু’জনের মৃত্যু ॥ পরিবারে মাতম

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩১ আগস্ট ২০১৫

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি  মাদারীপুরের দু’জনের  মৃত্যু ॥ পরিবারে  মাতম

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৩০ আগস্ট ॥ বৃহস্পতিবার লিবিয়া থেকে ইউরোপগামী নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাদারীপুরের দু’জনের পরিচয় মিলেছে। এরা হলেন রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের হাকিম উদ্দিন খালাসীর ছেলে গনি খালাসী (৪১) এবং ফজল খালাসীর ছেলে কামরুল খালাসী (১৯) তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। এছাড়া ওই ঘটনায় একই উপজেলার আরও ৩ জন জীবিত উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আহত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের হাকিম উদ্দিন খালাসীর ছেলে গনি খালাসী (৪১) ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক বছর চার মাস আগে লিবিয়া যায়। এর কিছুদিন পর তার বড় ভাই ফজল খালাসীর ছেলে কামরুল খালাসীকে (১৯) লিবিয়া নিয়ে যায় তার চাচা। সেখানে তারা একত্রে ছিলেন। কয়েকদিন আগে গনি খালাসীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ঐ দেশের দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পর সে ইতালি যাওবার চিন্তা করে। পরবর্তীতে ভাতিজা কামরুলসহ গণি খালাসী বৃহস্পতিবার নৌকায় করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়। সমুদ্রে নৌকা ডুবে গেলে গনি খালাসী ও কামরুল ফরাসী মারা যায়। ওই নৌকায় থাকা অপর ৩ জন একই গ্রামের ছলেমান খালাসীর ছেলে নিলু খালাসী (৩২), ধনী মুন্সির ছেলে উজ্জ্বল মুন্সি (২৭) ও পাশের গ্রাম তাঁতীকান্দার গ্রামের তৈয়ব আলী মেম্বরের ছেলে শরীফ হোসেন (৩৫) বেঁচে যায়। এর মধ্যে নিলু খালাসীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঐ দেশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে উদ্ধারকারীরা। মৃত গনি খালাসীর স্ত্রী তানজিলা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ করে লিবিয়াতে গিয়েছিল। সেখানের অবস্থা ভাল না থাকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু সমুদ্র আমাদের সব কেড়ে নিল। ঋণের টাকাও শোধ করতে পারিনি। এখন আমরা কোথায় যাব’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের দাবি লাশ দুটি যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। যাতে এই বাচ্চাগুলো ওর বাবার কবরটা দেখতে পায়’। নিহত গনির ভাবি নিহত কামরুলের বড় চাচি আলেয়া বেগম বলেন, ‘কামরুল খালাসী পড়াশোনায় ভাল ছিল। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফোর পেয়েছিল। গত বছর রেজাল্ট পেয়েই সে লিবিয়াতে গিয়েছিল। ওর বাবা-মা হজে গেছে। তারা এখনও এ খবর পাইনি। তাদের জানানো হয়নি।’ কামরুলের চাচাত বোন সালমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা তাদের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নিলু খালাসী, উজ্জ্বল মুন্সি ও শরীফ মোবাইল ফোনে জানিয়েছে। এখন শুধু লাশ ফিরে আসার অপেক্ষা।’ উদ্ধার হওয়া শরীফের বাবা তৈয়ব আলী মেম্বর বলেন, ‘মোবাইল ফোনে আমার ছেলে শরীফের সঙ্গে কথা হয়েছে। ও ভাল আছে। তবে ও জানিয়েছে গনি খালাসী ও তার ভাইয়ের ছেলে কামরুল খালাসী মারা গেছে।’
×