ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় যে ইউনিয়নে কেউ ট্যাক্স দেয় না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ জুলাই ২০১৫

কুষ্টিয়ায় যে ইউনিয়নে কেউ ট্যাক্স দেয় না

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২৪ জুলাই ॥ কুষ্টিয়ার একটি ইউনিয়নে সরকারী ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ অপ্রতুল। খাতা পত্রে এই আদায় ৬০ ভাগ দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ঠিকমতো ট্যাক্স আদায় না হওয়ায় এ ইউনিয়নে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এই ইউনিয়নটির নাম ১ নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ। খুব বেশি দিনের কথা নয়। ২০১১ সালেও এই ইউনিয়নের নাগরিকরা কেউ ট্যাক্স দিত না। আদায় হতো না বসতবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স বা ট্রেড লাইসেন্স ফি, নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট ফি। ট্যাক্স আদায় না হওয়ায় ইউনিয়নটিতে তেমন উন্নয়ন কাজও নেই। তবে সেই দৃশ্যপট কিছুটা হলেও এখন পাল্টেছে বলে দাবি করলেন বর্তমান চেয়ারম্যান এম মুস্তাক হোসেন মাসুদ। তিনি জানান, হাট্শ হরিপুর ইউনিয়নের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া হওয়ায় ইউনিয়নটির গুরুত্বও অপরিসীম। পদ্মা ও গড়াই নদী বেষ্টিত হরিপুর ইউনিয়নকে জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে গড়াই নদী। ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঐতিহ্যবাহী এ জনপদটি জেলার আদিপীঠ পুরনো কুষ্টিয়া এই হাট্শ হরিপুর ইউনিয়নেরই একটি অংশ। এখানে মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে গড়ে উঠেছিল শহর। এই হরিপুরে জন্মেছেন অনেক কবি-সাহিত্যিক, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ। এদের মধ্যে রয়েছেন, আইন বিজ্ঞানী ডা. রাধা বিনোদ দাস, জার্মান ভাষার সুপ-িত রসায়ন বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ডা. হরগোপাল বিশ্বাস, কবি ও সাহিত্যিক আজিজুর রহমান, হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রুহুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিল্পপতি (সিআইপি) কুষ্টিয়ার বিআরবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, পল্লীকবি রওশন আলী, কবিয়াল সম্রাট আফাজ উদ্দিন প্রমুখ নদী ভাঙ্গনে এলাকা বিলীন হলে ১নং পুরনো কুষ্টিয়া ও ২নং হাট্শ হরিপুর ইউনিয়নকে একীভূত করে ১৯৬৬ সালে গঠিত হয় ১নং হাট্শ হরিপুর ইউনিয়ন। বর্তমানে এখানে অর্ধলাখ মানুষের বাস। এখানে গড়ে শিক্ষিতের হার শতকরা ৯০ ভাগ। হাইস্কুলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫/২৬টি। ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুষ্টিয়া শহরের ৭৫ ভাগ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এই হরিপুরবাসী। অথচ এ ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স পরিশোধ করে না। চেয়ারম্যান এম মুস্তাক হোসেন মাসুদ বলেন, ২০১১ সালের আগে এই ইউনিয়নে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্সসহ কোন ট্যাক্সই আদায় হতো না। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যপট কিছুটা পাল্টেছে। আমরা নাগরিকদের ট্যাক্স প্রদানে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ট্যাক্স আদায় না হলে ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজেও কোন বরাদ্দ পাওয়া যায় না। রাস্তাঘাট, টিউবওয়েল ও ছোট ছোট কালভার্ট নির্মাণে এলজিএসপির বরাদ্দ পেতে হলে অবশ্যই ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে।
×