সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন প্রাঙ্গণেমোর। রবীন্দ্র নাট্য প্রযোজনা নিয়মিত মঞ্চায়ন করে ইতোমধ্যে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে তারা। দলের অন্যতম জনপ্রিয় প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’। নাটকটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বোদ্ধা-দর্শকদেরও মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি দেশের বাইরেও প্রশংসিত হয়েছে প্রযোজনাটির মান। এরই ধারাবাহিকতায় দলের এই অনন্য প্রযোজনাটি নিয়ে আবারও ভারতে যাচ্ছে দলটি। দল সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার বিখ্যাত নাট্যদল পূর্ব-পশ্চিম আয়োজিত এক নাট্যোৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছে প্রাঙ্গণেমোরের ‘রক্তকরবী’ নাটকটি। আগামী ১ আগস্ট কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই ভারত যাচ্ছে প্রাঙ্গণেমোর। রবীন্দ্রনাথের নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, রামিজ রাজু, আউয়াল রেজা, শিশির রহমান, পলাশ, জসিম, সরোয়ার সৈকত, সাগর, রিগ্যান, সুমী, শুভেচ্ছা, মনির, শুভ, সুজয়, চৈতী, সোহাগ প্রমুখ। এদিকে ভারত যাওয়ার আগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘রক্তকরবী’ নাটকের একটি মঞ্চায়ন করবে প্রাঙ্গণেমোর। দল সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ জুলাই রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির মঞ্চায়ন হবে।
‘রক্তকরবী’ নাটকের ঘটনার স্থানটির প্রকৃত নামটি কী, সে সম্বন্ধে ভৌগোলিকদের মতভেদ থাকা সম্ভব; কিন্তু সকলেই জানেন, এর ডাকনাম যক্ষপুরী। প-িতরা বলেন, পৌরাণিক যক্ষপুরীতে ধনদেবতা কুবেরের স্বর্ণসিংহাসন; কিন্তু এ নাটকটি একেবারেই পৌরাণিক কালের নয়, একে রূপকও বলা যায় না। যে জায়গাটার কথা হচ্ছে সেখানে মাটির নিচে যক্ষের ধন পোঁতা আছে। তাই সন্ধান পেয়ে পাতালে সুড়ঙ্গ-খোদাই চলছে, এ জন্যই লোকে আদর করে একে যক্ষপুরী নাম দিয়েছে। এই নাটকে এখানকার সুড়ঙ্গ-খোদাইকরদের সঙ্গে যথাকালে আমাদের পরিচয় হবে।
যক্ষপুরীর রাজার প্রকৃত নাম সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতের ঐক্য কেউ প্রত্যাশা করে না। এটুকু জানি যে, এর একটি ডাকনাম আছেÑ মকররাজ। যথাসময়ে লোকমুখে এই নামকরণের কারণ বোঝা যাবে। রাজমহলের বাহির-দেয়ালে একটি জালের জানালা আছে। সেই জালের আড়াল থেকে মকররাজ তার ইচ্ছামতো পরিমাণে মানুষের সঙ্গে দেখাশোনা করে থাকেন। কেন তার এমনতরো অদ্ভুত ব্যবহার, তা নিয়ে নাটকের পাত্ররা যেটুকু আলাপ-আলোচনা করেছেন তার বেশি আমরা কিছু জানি না। এ রাজ্যের যারা সর্দার তারা যোগ্য লোক এবং যাকে বলে বহুদর্শী। রাজার তারা অন্তরঙ্গ পর্ষদ।
তাদের সতর্ক ব্যবস্থাগুণে খোদাইকরদের কাজের মধ্যে ফাঁক পড়তে পারে না এবং যক্ষপুরীর নিরন্তর উন্নতি হতে থাকে। এখানকার মোড়লরা একসময়ে খোদাইকর ছিল, নিজগুণে তাদের পদবৃদ্ধি এবং উপাধি লাভ ঘটেছে। কর্মনিষ্ঠতায় তারা অনেক বিষয়ে সর্দারদের ছাড়িয়ে যায়। যক্ষপুরীর বিধিবিধানকে যদি কবির ভাষায় পূর্ণচন্দ্র বলা যায়, তবে তার কলঙ্ক বিভাগের ভারটাই প্রধানত মোড়লদের পরে। জেলেদের জালে দৈবাৎ মাঝে মাঝে অখাদ্য জাতের জলচর জীব আটকা পড়ে। তাদের দ্বারা পেট-ভরা বা ট্যাঁক-ভরার কাজ তো হয়ই না, তারা জাল ছিঁড়ে দিয়ে যায়। এই নাট্যের ঘটনাজালের মধ্যে নন্দিনী নামক একটি কন্যা তেমনিভাবে এসে পড়েছে। মকররাজ যে বেড়ার আড়ালে থাকেন, সেটাকে এই মেয়ে টিকতে দেয় না বুঝি। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী।
শীর্ষ সংবাদ: