ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছুটতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক নামের কসাইখানায়

কুষ্টিয়ায় খুঁড়িয়ে চলছে মা ও শিশু কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৩ জুলাই ২০১৫

কুষ্টিয়ায় খুঁড়িয়ে চলছে মা ও শিশু কেন্দ্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২২ জুলাই ॥ কুষ্টিয়ায় জরুরী প্রসূতি এবং শিশু ও সাধারণ মানুুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান ‘মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে এনাসথেসিস্ট ডাক্তার ও জরুরী রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীরা এখানে জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতে এসে পড়ছেন মহাবিপাকে। চিকিৎসা না পেয়ে মুমূর্ষু রোগীর স্বজনদের ছুটতে হচ্ছে ‘প্রাইভেট ক্লিনিক’ নামের ‘কসাইখানায়’। সেখানে গিয়ে তারা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। জানা যায়, কুষ্টিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজার অপারেশনের ডাক্তার থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোন এনাসথেসিস্ট ডাক্তার নেই। ফলে প্রসব জটিলতার মুমূর্ষু রোগীর জরুরী সিজার অপারেশন একরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীন এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি একটি সমন্বিত জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নবেম্বর থেকে কুষ্টিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সর্বক্ষণিক কোন এনাসথেসিয়া ডাক্তার নেই। তবে কুমারখালী উপজেলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে একজন এনাসথেসিস্ট ডাক্তারের পোস্টিং দেয়া রয়েছে। অর্ডারে বলা রয়েছে প্রয়োজনে তিনি কুষ্টিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রেও কাজ করবেন। তার জন্য এখানে সপ্তাহে দুই দিন সময়ও নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু অফিস সময়ের বাইরে তিনি সিজার অপারেশনে সময় দিতে পারেন না। তাই প্রয়োজনের সময় এনাসথেসিস্ট ডাক্তার পাওয়া না গেলে শিশুবান্ধব এ হাসপাতালে প্রসবজনিত জটিলতার মুমূর্ষু রোগীর জরুরী সিজার অপারেশন করা সম্ভব হয় না। ফলে এ হাসপাতালে সিজার অপারেশনের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতিমাসে মাত্র ৪/৫টি। কিন্তু এখানে সর্বক্ষণিক এনাসথেসিস্ট ডাক্তার থাকলে সিজার অপারেশনসহ স্বাভাবিক ডেলিভারি রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেত। এছাড়া এ হাসপাতালে অপারেশনের সকল ব্যবস্থা থাকেলেও জরুরী রক্ত সংগ্রহ কিংবা রোগীদের রক্ত দেয়ার জন্য রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ ও জনবলের কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রে এ ব্যবস্থা থাকা অতি আবশ্যক। এখানে কোন প্যাথলজি সেবাও নেই। জরুরী ওষুধ সংরক্ষণের জন্য কোন স্টোর রুমও নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের চক্রান্তে এনাসথেসিয়া ডাক্তারের পোস্টিং ঠেকিয়ে রেখে কুষ্টিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। যাতে এখানে কোন সিজার অপারেশন না হয়। তিনি জানান, এখানে সিজার অপারেশন চালু হলে ক্লিনিক ব্যবসায় ভাটা পড়বে, যার ফলেই চক্রান্তমূলকভাবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উচ্চপর্যায় থেকে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটিতে এনাসথেসিয়া ডাক্তারের পোস্টিং ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে ১ জন মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ও ১ জন এনাসথেসিস্ট ডাক্তারের পদ রয়েছে। এদের মধ্যে মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) থাকলেও এনাসথেসিস্ট ডাক্তার নেই। এখানে কোন ক্লিনার নেই। ২০০৭ সাল থেকে চুক্তিভিত্তিক যে ৪ জন ক্লিনার ছিল অনেক আগেই তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ৫ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রয়েছেন কিন্তু রোগীর চাপে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হলে রোগীরা আরও ভাল সেবা পেতে পারে। প্রতিদিন এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জরুরী চিকিৎসা নিতে ছুটে আসে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের গর্ভবতী মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ শতাধিক রোগী। এসব রোগীর মধ্যে থাকে গর্ভবতী মা, প্রসব জটিলতার সিজার রোগী, নানা সমস্যার শিশু, কিশোর-কিশোরী ও সাধারণ রোগী। তা ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহীতা এবং ভায়া ও সিবিই পরীক্ষা করাতেও আসে অসংখ্য রোগী। কিন্তু শুধু চেকআপ, সাধারণ চিকিৎসা এবং নর্মাল ডেলিভারি ছাড়া প্রসবজনিত জটিলতার অধিকাংশ রোগীকেই এখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। কুষ্টিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ডাঃ মোঃ আযম খান বলেন, এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। লিডোকেইন ইনজেকশনের জন্য হাহাকার নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর থেকে জানান, কেশবপুরসহ আশপাশের উপজেলায় অনুভূতিনাশক বা অবশ করা লিডোকেইন ইনজেকশন সরবরাহ নেই। হাসপাতাল গুলোতেও লিডোকেইন গ্রুপের এই অবশ করা ইনজেকশন সরবরাহ বন্ধ প্রায় নয় মাস। ফলে কাটাছেঁড়া, দাঁতের চিকিৎসা, মুসলমানিসহ ছোট ছোট অপারেশনের রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাত্র ২৮ টাকার লিডোকেইন ইনজেকশন ৬/৭শ’ টাকা দিয়েও রোগীরা পাচ্ছে না। হাসপাতালের ডাক্তার, ওষুধ ব্যবসায়ী ও ওষুধ কোম্পানির লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাটাছেঁড়া রোগীর সেলাই দিতে, দাঁতের বিভিন্ন অপারেশন করতে ওই জায়গা লিডোকেইন ইনজেকশন দিয়ে সাময়িক অবশ করে নিতে হয়। প্রায় এক বছর যাবত এই ইনজেকশন কোন কোম্পানিই পর্যাপ্ত সরবরাহ দিচ্ছে না। কেশবপুর হাসপাতালের সামনে প্রায় সকল ফার্মেসির মালিক জানান, তাদের ফার্মেসিতে লিডোকেইন গ্রুপের কোন ইনজেকশন নেই। বেশি দাম দিয়েও যশোর, খুলনা ও ঢাকায় জেসোকেইন ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। দুই-একটা পাওয়া গেলেও চার শ’ থেকে ছয় শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেশবপুর হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার আবু শাহিন জানান, ৭-৮ মাস ধরে চাহিদা দেয়া হলেও ওপর থেকে কোন লিডোকেইন ইনজেকশন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। এতে জরুরী রোগীর চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
×