ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৃষ্টি আর দুর্ভোগ পেরিয়ে বাসায় ফিরছে রাজধানীবাসী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টি আর দুর্ভোগ পেরিয়ে বাসায় ফিরছে রাজধানীবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফরম ছেড়ে আসতেই হাঁটু পানি। রাতভর বর্ষণ শেষে সকালেও কমেনি মেঘের গর্জন। তাই প্লাটফরম থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই পানি আর পানি। পুরো স্টেশনজুড়ে থৈ থৈ পানির মধ্যে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের বাসায় যেতে যানবাহন সংগ্রহের নিরন্তর চেষ্টা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বড় আকৃতির একটি দীঘি। আছে ছোট ছোট ঢেউও। এর মধ্যে অটোরিক্সা আর টেক্সির দেখা মেলে মাঝে। ভাড়া আকাশছোয়া। অন্তত ৫০০ টাকার নিচে কোন টেক্সি মেলেনি সেখানে। স্বল্প দূরত্বে হলেও অটোরিক্সা মিলেছে কমপক্ষে ২০০ টাকায়। রিক্সা চালকরাও ভাড়া হাঁকাতে কম যাননি। সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালসহ সদরঘাট নদীবন্দরেও বৃষ্টি আর নানা দুর্ভোগ মাড়িয়ে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। এদিকে মঙ্গলবার অফিস খোলা থাকলেও রাজধানী ছিল কার্যত ফাঁকা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ভিড় নেই। অলিগলিও কোলাহলমুক্ত। গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল শুরু হয়নি। সিগন্যাল ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে যানবাহন। যানজটমুক্ত শহরে সৌখিন মানুষদের দাপাদাপি আছেই। শিশুপার্ক, স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে শুরু করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় আছে। বিপণীবিতান, মার্কেট সচল হয়নি। খোলেনি অধিকাংশ সাধারণ দোকানপাট। কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম কম। শুধুমাত্র টার্মিনাল কেন্দ্রিক মানুষের ভিড় আছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরছেন নাড়ির টানে বাড়িফেরা রাজধানীবাসী। মহাসড়কে যানজট না থাকায় স্বস্তিতেই ফিরছেন সাধারণ মানুষ। তবে সড়ক দুর্ঘটনার ভীতি আছেই। একাধিক সড়ক দুর্ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি ভীতি পাবনা-সিরাজগঞ্জ সড়কের যাত্রীদের মধ্যে। ঈদ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জসহ সারাদেশে প্রায় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো সঠিক সময়েই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেছে। ট্রেন ও লঞ্চের সিডিউল খুব একটা হেরফের হয়নি। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ এখনও বাড়েনি। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোপুরি চাপ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অনেক সময় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। কখনও কখনও কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীর চাপ বাড়তে দেখা যায়। চাকরিজীবীরা আস্তে আস্তে ফিরছেন। অনেকে পরিবার পরিজন রেখে আসছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষে ফের বাড়ি ফিরছেন কর্মমুখী মানুষ। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখনও ঢাকামুখী হয়নি শিক্ষার্থীরা। ছুটি শেষে দিনাজপুর থেকে শ্যামলী পরিবহনে ঢাকা ফিরছেন কায়েস মিয়া। তিনি জানান, বেশ কেটেছে ঈদ আয়োজন। হাতে ছুটি থাকলেও একটু আগে ভাগে ফিরে এলাম। রংপুর থেকে আসা যাত্রী পিয়াস জানান, রাস্তায় কোন যানজট নেই। তবে সড়ক দুর্ঘটনার ভয় ছিল। সময়মতো গাড়ি এসেছে। এসআর ট্রাভেলসে আসা বগুড়ার যাত্রী পারুল জানান, শান্তিতে বগুড়া থেকে ফিরলাম। আগামীকাল থেকে অফিস শুরু। গাবতলী টার্মিনালে ঈগল পরিবহন থেকে নামছেন আরেক যাত্রী সাইফুল ইসলাম। তিনি খুলনা থেকে বাড়ি ফিরছেন। তিনি বলেন, ছুটি শেষ এবার কাজ শুরু। বাস কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের বাসের চাপ বেশি ছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে এখনও তেমন যাত্রী আসা শুরু হয়নি। গাবতলী বাস টার্মিনালে দায়িত্বরত মিরপুর র‌্যাব-৪ এর উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, বিভিন্ন বিভাগ থেকে কম বেশি যাত্রী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এখনও তাদের কাছ থেকে তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বেশ স্বস্তি এবং নিরাপদেই ঢাকায় ফিরছেন রাজধানীমুখী মানুষ। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ঢাকায় ফেরা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাস টার্মিনালে বাস কম থাকায় রিক্সা ছাড়া আর কোন যানবাহন মেলিনে বাসায় যেতে। ফলে মালপত্র নিয়ে অনেক যাত্রীকে বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সকালে নেত্রকোনা থেকে আসা যাত্রী পলাশ জানান, বাস থেকে নামার পর মুষলধারে বৃষ্টি। সিএনজি কিংবা টেক্সি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজেও গাড়ি মেলানো সম্ভব হয়নি। মালপত্র নিয়ে বাসায় যেতে পারছি না। এদিকে আজ বুধবার ঈদে ঘরমুখো এবং কর্মস্থলমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে গঠিত মনিটরিং টিমের কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা আহ্বান করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
×