ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপেক্ষা চাঁদ রাতের

রাজধানীজুড়ে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ জুলাই ২০১৫

রাজধানীজুড়ে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

রহিম শেখ ॥ ঈদ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। তাই ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি এবার চাঁদরাত ঘিরে। ওই রাতের জন্য অনেক ব্যবসায়ী সারা মাস অপেক্ষার প্রহর গোনেন। অনেকেই কেনাকাটা করেন ঈদের চাঁদ দেখার পর। সারারাত মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল আর ফুটপাথ ঘুরে ঈদের কেনাকাটা করেন। কেনাকাটায় প্রায়ই বিশেষ ছাড় কিংবা স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলছে রাজধানীজুড়ে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমলে যাওয়া কোন মানুষকেই খালি হাতে ফিরতে দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে সারারাতই তাদের মার্কেট খোলা থাকবে। গত কয়েক বছরের বেচাকেনার হিসাব করলে দেখা যায়, চাঁদরাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা কেনাকাটা করে থাকেন। নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছেন মানুষজন। ইতোমধ্যে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে রাজধানী ছেড়েছেন বহু মানুষ। যারা এখন নগরীতে অবস্থান করছেন তারাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারছেন। যারা ঢাকায় ঈদ করবেন তাদের জন্য চাঁদরাতের কেনাকাটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে পুরনো ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দার কাছে চাঁদরাতে ঈদবাজার করা বিশেষ রীতিতে পরিণত হয়েছে। তারা চাঁদরাতে দুই হাতে শুধু কিনবেন। তাদের কাছে দরদাম কোন বিষয় নয়। পছন্দ হলেই তার ঠিকানা সোজা প্যাকেটে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের হাদি ফ্যাশনের ম্যানেজার আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের চাঁদরাত মানে অন্য রকম আনন্দ। ওই রাতে বেচাকেনা হয় সবচেয়ে বেশি। ক্রেতার ভিড় সামলাতে প্রতিটি দোকানদারকে হিমশিম খেতে হয়। কেনাকাটা চলে ভোর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এলিফ্যান্ট রোড, গাজীভবন, মৌচাক মার্কেট, কর্ণফুলী শপিং কমপ্লেক্স, বেইলি রোড এলাকা, আনারকলি মার্কেট, ফরচুন শপিংমল ও পলওয়েল মার্কেটে বিক্রেতাকেও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দিনভর ছিল ক্রেতার ভিড়। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর, ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরায় সব ধরনের মার্কেটে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়। আজ চাঁদ দেখা গেলে এসব মার্কেটের দোকানপাট সারারাত খোলা থাকবে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রোজার মাঝামাঝি সময় থেকে বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে। শেষ মুুহূর্তে নারী এবং শিশুদের পোশাকের কাটতি বেশি। দুপুরের পর থেকে পুরো এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন দোকানে বেশিরভাগ ক্রেতাকে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি কেনার জন্য। নিউমার্কেট এলাকায় ছেলেদের শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট, জুতো, কসমেটিকস ও গহনা এবং ব্যাগ ও ঈদকার্ড, ঈদ গিফট সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। সকাল থেকে গাউছিয়া মার্কেটে ছিল নারীদের প্রচ- ভিড়। বুধবার বৃষ্টির বাগড়ায় কেনাকাটায় মন্দাভাব ছিল। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গাউছিয়া-নিউমার্কেট এলাকায় ক্রেতার ভিড় ছিল ঠাসা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার চাপে গুলিস্তান, ফার্মগেট, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাথ ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় জনারণ্য ও যানজট দুই-ই সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বেচাবিক্রি চলে সমানতালে। ফুটপাথগুলোতেও অনেকেই কেনাকাটা করেছেন এটাসেটা দেখেশুনে। বিক্রেতারা বলেছেন, এখন আর দরদামের সময় নেই। সামান্য লাভে তারা ছেড়ে দিচ্ছেন সবধরনের মাল। ক্রেতারা বলেছেন, পছন্দ হলেই সেই পণ্য কিনে নিচ্ছে মানুষ। কারণ ঘুরেফিরে কেনার সময় আর হাতে নেই। দোকানিরা বলেছেন, শেষ বাজারে এখন কিছুটা সুলভ মূল্যের পণ্যের বিক্রি চলছে বেশি। ফুটপাথ থেকে শুরু করে মধ্যমশ্রেণীর মার্কেট, অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মানুষ কেবল কিনছে। চূড়ান্ত পর্বের কেনাকাটা করে লঞ্চ-ট্রেন-বাস ধরার তাগিদ থেকে ক্রেতারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মার্কেটে মার্কেটে। মিরপুর-১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর শাহআলী মার্কেট পর্যন্ত গড়ে ওঠা শতাধিক মৌসুমি মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও দম ফেলার ফুরসত ছিল না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এসব মৌসুমি দোকান। এছাড়া এ এলাকার বাংলার মেলা, তাঁত, গ্রামীণমেলা, অন্যমেলা, গ্রামীণ কালেকশন, গ্রামীণ বাজার, গ্রামীণ নকশা, অন্য আলো, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে প্রচুর পরিমাণে বৈচিত্র্যময় শাড়ি, থ্রিপিস, ছোটদের পোশাক, পাঞ্জাবি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড, ভাসাভি, নাবিলা শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন নামীদামী মার্কেটেও চাঁদরাত ঘিরে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন।
×