ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজ্ঞাপন জারি ॥ সব জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জনের অবসান

আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী হলেন

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ জুলাই ২০১৫

আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী হলেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নানা জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দফতর হারানোর এক সপ্তাহের মাথায় তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ৩(৪)-এ দেয়া ক্ষমতাবলে মন্ত্রীর দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছেন। দফতরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষরিত এ আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর আগে গত ৯ জুলাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। এলজিআরডি মন্ত্রী করা হয় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। হঠাৎ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে খোদ শাসক দলটিতে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। সৈয়দ আশরাফের মন্ত্রিসভা ও দলের দায়িত্বে থাকা-না থাকা নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন চলে। এরই মধ্যে সৈয়দ আশরাফ সিদ্ধান্ত নেন, ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ১৫ জুলাই সকাল সোয়া দশটায় লন্ডন যাবেন। লন্ডন যাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেন তিনি। যাত্রার আগের দিন এক ইফতার মাহফিলে অভিমানী সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমার বাবা মৃত্যুকে বরণ করেছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করেননি। আমার শরীরে সেই বাবার রক্ত। দফতরবিহীন মন্ত্রী করার আগে ও পরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার দফা একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আপাতত লন্ডনে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৪ জুলাই সৈয়দ আশরাফ তাঁর লন্ডন যাত্রা স্থগিত করেন। এরপর থেকেই সৈয়দ আশরাফকে সরকারে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হচ্ছে, বিষয়টি শাসক দলের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতাও সৈয়দ আশরাফের বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। জানা গেছে, দফায় দফায় এসব বৈঠক ও আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়েরও অফার দেয়া হয় সৈয়দ আশরাফকে। কিন্তু নির্লোভ, বিশ্বস্ত ও ত্যাগী এই নেতাকে কোন লোভনীয় পদের প্রস্তাব দিয়েও টলানো যায়নি। সর্বশেষ বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে সবকিছু ঠিকঠাক হয়। বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন করার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই হচ্ছেন প্রথম এই দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী। দেড় বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এএইচএসকে সাদেকের স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (৬৩) গত সাত বছর ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় একই সময় ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, বিশ্বস্ততা আর সততার প্রশ্নে সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে ঘোরতর শত্রুরাও কোন অভিযোগ তুলতে পারেননি। কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর জেলখানায় সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লন্ডনে চলে যান আশরাফ। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বন্দী হওয়ার প্রেক্ষাপটে দলে সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ভার আসে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সৈয়দ নজরুলের ছেলে সৈয়দ আশরাফের ওপর। পরে ২০০৯ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আশরাফ। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার সরকারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আশরাফ। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে আশরাফকে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
×