ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গ্লোব থিয়েটারের প্রযোজনায় ঢাকায় ‘হ্যামলেট’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৬ জুলাই ২০১৫

গ্লোব থিয়েটারের প্রযোজনায় ঢাকায় ‘হ্যামলেট’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পিতৃহত্যার প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ডেনিশ যুবরাজ। হন্তারক চাচাকে হত্যার সুযোগ পেয়েও যখন সে হত্যা করে না তখন আসে কিছু দার্শনিক জিজ্ঞাসা। কোন্ কারণে হ্যামলেট তার চাচা ক্লডিয়াসকে হত্যা করে না। ক্লডিয়াস প্রার্থনারত ছিল বলে? নাকি তার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, সেও তো তার পিতাকে খুন করতে চেয়েছিল তাই ক্লডিয়াসের ভেতর নিজেরই ছায়া দেখতে পেয়ে হত্যা থেকে নিবৃত্ত হয়? এসব প্রশ্নের দৃশ্যমান উত্তর নিয়েই আবর্তিত ‘হ্যামলেট’ নাটক। শেক্সপিয়রের সবচেয়ে দীর্ঘ বিয়োগান্তক নাটক হ্যামলেট। আবেদনের সামান্য একটুও হানি না ঘটিয়ে নাটকটি আড়াই ঘণ্টায় নামিয়ে আনার কাজটি চমৎকার করেছে ব্রিটেনের গ্লোব থিয়েটার। সঙ্গে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের স্পষ্ট বাচনশৈলী মুখ ও অঙ্গভঙ্গি এবং চরিত্রে নিমজ্জিত হয়ে অভিনয়, অভিনীত প্রত্যেকটি দৃশ্যকে করে তুলেছে অর্থবহ ও উপভোগ্য। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের হাতে গড়া নাট্য সংগঠন গ্লোব থিয়েটার। তার ৪৫০ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্বের ২শ’টি দেশে ‘হ্যামলেট’ নাটকের প্রদর্শনী করছে চার শ’ বছরের পুরনো এই দলটি। এরই অংশ হিসেবে গত ১২ জুলাই ভিয়েতনামে প্রদর্শনীর পর, ঢাকা থিয়েটারের আমন্ত্রণে ১৪ জুলাই প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন গ্লোব থিয়েটারের ১৬ সদস্যের একটি দল। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় দলটির প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয় ট্র্যাজেডি কিং হ্যামলেটের করুণ পরিণতি নিয়ে শেক্সপিয়রের নাটক ‘হ্যামলেট’। ঢাকায় নাটকটির প্রদর্শনীতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল। নাটক প্রদর্শনীর আগে এদিন বিকেলে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের কর্ণধার নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও ‘হ্যামলেট’ নাটকের অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। নাটকে হ্যামলেটের চরিত্রটির কথাই ধরা যাক। এই চরিত্রের বহুমাত্রিকতার চুলচেরা মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ছাড়া ওই চরিত্রে অভিনয় অসম্ভব। সিগমুন্ড ফ্রয়েড হ্যামলেট চরিত্রকে ইডিপাসের সঙ্গে তুলনা করেন। কারণ, মাতা গারট্রুডের প্রতি হ্যামলেটের বাসনা ছিল তাই তিনি পিতাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাহলে কেন হ্যামলেট তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ এত দীর্ঘায়িত করলেন? ক্লডিয়াসের প্রতি তার মায়ের বাসনাকে অনুভব করে কি? মায়ের মৃত্যুর ভেতর দিয়ে সে বাসনার পরিসমাপ্তি ঘটে বলেই কি অন্তদৃশ্যে তিনি ক্লডিয়াসকে হত্যা করেন? এসব মনস্তাত্ত্বিক প্রশ্নের ব্যাখ্যা করেই কেবল এই চরিত্রে অভিনয় সম্ভব। আপাত উন্মাদ হ্যামলেটের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর উদাহরণও নাটকটিতে আছে। হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে হ্যামলেটের ইংল্যান্ড-যাত্রার সফরসঙ্গী দুই বন্ধু রোজেনক্রান্টস ও গিন্ডেনস্টার্নের ভাগ্যে হত্যার সমন ঝুলিয়ে দিয়ে জীবিত ফিরে আসা সেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। হ্যামলেট নাটকের পোশাক পরিকল্পনা সবচেয়ে দুরূহ বলে মনে হলেও এই নাটকে রাজকীয় ধরন বজায় রেখে খুব সাদামাটাভাবে রাজাকে রাজা প্রজাকে প্রজা বানিয়েছেন পোশাক পরিকল্পনাকারীরা। এসব আয়োজনকে একত্রিত করে হ্যামলেট প্রযোজনাকে মঞ্চে দাঁড় করিয়েছেন যে যাজ্ঞিক তিনি হলেন ডমিনিক ড্রমগুল ও বিল বাকহার্স্ট। অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নেয়ার যে নৈপুণ্য তিনি দেখিয়েছেন কারিগরি দিকটাও তিনি একই নৈপুণ্যে ব্যবহার করেছেন। নাটকে দৃশ্যান্তর এবং আলোর বিষয়টি সাদামাটা হলেও অভিনয়শৈলী ছিল চমৎকার। ফলে হল ভর্তি দর্শক পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করেছে নাটকটি। সব মিলিয়ে শেক্সপিয়রের হ্যামলেট গ্লোব থিয়েটারের একটি সফল প্রযোজনা। এতে হ্যামলেট চরিত্রে অভিনয় করেছেন লাডি এমেরুয়া। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এ্যাফেলিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফোবি ফিল্ডস। এছাড়াও নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিথ বার্টলেট, মিরান্ডা ফস্টার, বেরুস খান, জেনিফার লিয়ং, টম লরেন্স, আমান্ডা উইলকিন।
×