ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরবাসে ক্যাসিয়াস-শোয়েনস্টেইগার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ জুলাই ২০১৫

পরবাসে ক্যাসিয়াস-শোয়েনস্টেইগার

ঘর ছেড়ে পরবাসে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবলের দুই সুপারস্টার ইকার ক্যাসিয়াস ও বাস্টিয়েন শোয়েনস্টেইগার। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে পর্তুগালের এফসি পোর্তোতে ক্যাসিয়াস ও জার্মান পরাশক্তি বেয়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে ইংলিশ ক্লাব ম্যানইউতে নোঙর ফেলেছেন শোয়েইনি। ঘরের ছেলে যাকে বলে। ক্যাসিয়াস রিয়াল মাদ্রিদে তেমনই ছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পোর্তোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতেই ছিলেন স্পেন জাতীয় দলের তারকা এই গোলরক্ষক। দুর্দান্ত ধারাবাহিক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে দীর্ঘদিন ধরে স্পেন ও রিয়ালের অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করেছেন। একের এক এক স্বর্ণসাফল্যে ভাসা সেই ক্যাসিয়াসই অনেকটা অপাংক্তেয় হয়ে গ্যালাক্টিকো শিবির ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন! অর্থাৎ গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে অবশেষে। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ক্যাসিয়াস অধ্যায় শেষ হয়েছে। বার্নাব্যু ছাড়া নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন ঠিকানাও খুঁজে নিয়েছেন তারকা এই গোলরক্ষক। আসছে মৌসুম (২০১৫-১৬) থেকে ক্যাসিয়াস খেলবেন পর্তুগালের ক্লাব পোর্তোতে। রিয়ালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদ ও পোর্তো ক্যাসিয়াসের ছাড়পত্রের ব্যাপারে একমত হয়েছে। কিংবদন্তি এই গোলরক্ষক ক্লাব ও স্প্যানিশ ফুটবলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। সে ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে তার অবদান আজীবন রয়ে যাবে। তার দলের হয়ে ৭২৫টি ম্যাচ আমাদের দলের জার্সিকে আলোকিত করেছিল। নতুন জীবনের জন্য আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাই। ক্যাসিয়াস রিয়ালের হয়ে টানা ২৫ বছর খেলেছেন। এ সময় তিনি লা গ্যালাক্টিকোদের হয়ে পাঁচটি লা লীগা, দুটি কোপা ডেল রে ও তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয় করেন। এছাড়া স্পেনের হয়ে জিতেছেন একটি বিশ্বকাপ ও দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের মধ্য দিয়ে এই কৃতিত্ব দেখান তিনি। অর্থাৎ ২০০৮ সালে ইউরো, ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১২ সালে ফের ইউরো জয় করেন ক্যাসিয়াস। প্রতিবারই স্পেনের অধিনায়ক ছিলেন ক্যাসিয়াস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যাসিয়াস উজ্জ্বলতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেন। যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। রিয়ালের এক সময়ের নায়ককে সমর্থকরা নিয়মিত দুয়ো দিতে থাকেন। গত মৌসুমে রিয়ালের বড় কোন শিরোপা না জেতার দায়ও অনেকেই তাকে দিয়ে থাকেন। চারদিকে গুঞ্জন চলছে রিয়াল ক্যাসিয়াসের শূন্যতা পূরণ করতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ২৪ বছর বয়সী গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়াকে দলে ভেড়াতে পারে। স্পেন দলেও ক্যাসিয়াসের জায়গাটা তিনিই নিতে যাচ্ছেন। রিয়ালের হয়ে ৭২৫টি ম্যাচে গোলবার আগলেছেন ক্যাসিয়াস। রাউল গঞ্জালেসের পর রিয়ালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় তিনিই। বিদায়বেলায় রিয়ালের ওয়েবসাইটে ক্যাসিয়াসকে ক্লাবটি আর স্পেন জাতীয় দলের ইতিহাসে সেরা গোলরক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে খেলার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারের আত্মপ্রকাশ ঘটে ক্যাসিয়াসের। যুব দলে টানা নয় বছর খেলার পর ১৯৯৮ সালে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদের ‘সি’ টিমে। সেখানে এক বছর খেলার পর ১৯৯৯ সালে সুযোগ পান ‘বি’ টিমে। সেখানে দুর্দান্ত ক্যারিশমা দেখিয়ে ওই বছরই জায়গা করে নেন রিয়াল মাদ্রিদের মূল দলে। সেই থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে চলেন সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর দলটিকে। একাধারে ২৫ বছর খেলে চলা স্প্যানিশ অধিনায়ক কখনই ক্লাব ছাড়ার চিন্তা করেননি! মাঝেমধ্যে লোভনীয় প্রস্তাব যে আসেনি তা নয়। কিন্তু ক্যাসিয়াস তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। যে কারণে অনেকের ধারণা ছিল, সুদর্শন এ তারকা হয়ত ক্যারিয়ার শেষ করবেন সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটির হয়েই। একবার এক সাক্ষাতকারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে ক্যাসিয়াস বলেছিলেন, ‘আরও আট বছর রিয়ালেই থাকতে চাই আমি’। কিন্তু ইচ্ছাপূরণ আর হলো কই। তাঁকে প্রাণের ক্লাব ছাড়তে হলো অনেকটা অপমাণিত হয়েই! কিংবদন্তি এই গোলরক্ষক রিয়াল ছাড়বেন এটা ভাবতেও পারেননি রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা। ক্যাসিয়াসকে হারিয়ে তাই বাকরুদ্ধ রোনাল্ডো, রড্রিগুয়েজরা। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এরই বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন তারা। সবাই ক্যাসিয়াসকে উদ্দেশ করে বিদায়ী বার্তা লিখেছেন। রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলো বলেন, আট বছর ধরে ক্যাসিয়াসের সঙ্গে সতীর্থ হিসেবে খেলতে পেরে নিজেকে সম্মানিত মনে করছি। তার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। আশা করছি, সব সময়ই সে ভাল থাকবে। তার চলে যাওয়াটা ভীষণ কষ্টের। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী কলম্বিয়ান তারকা জেমস রড্রিগুয়েজ বলেন, ক্যাসিয়াসের পাশে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। তার নতুন ক্যারিয়ারের জন্য শুভ কামনা রইল। শুধু রিয়ালই নয়, অন্যান্য ক্লাবের ফুটবলাররাও শুভ কামনা জানিয়েছেন ক্যাসিয়াসকে। ইতালি জাতীয় দল ও জুভেন্টাসের অধিনায়ক এবং গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন বলেন, ক্যাসিয়াস একজন অসাধারণ গোলরক্ষক। সেরা পর্যায়ে নিজেকে ধরে রাখাটা কঠিন। কিন্তু রিয়ালের হয়ে সে অনেক ধারাবাহিক ছিল। আমরা দুজন দুরকম। তবে তাকে আমার চেয়েও এগিয়ে রাখছি। সাবেক বার্সিলোনা তারকা জাভি হার্নান্দেজও ক্যাসিয়াসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তার নতুন পথ চলায় শুভ কামনা জানিয়েছেন। অন্যদিকে গুঞ্জনের ডালি সরিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন বাস্টিয়েন শোয়েনস্টেইগার। ম্যানইউর সঙ্গে তিন বছরের চুক্তিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে নতুন করে ঠিকানা গড়েছেন জার্মান অধিনায়ক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বেয়ার্ন মিউনিখ। মূলত ম্যানইউ কোচ লুইস ভ্যান গালের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণেই তার এই ঠিকানা বদল। ৭.২ মিলিয়ন ইউরোতে শোয়েনস্টেইগার ম্যানইউতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিন বছরের চুক্তিপত্র সাক্ষর ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে খুব শীঘ্রই ওল্ডট্রাফোর্ডের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। বেয়ার্ন মিউনিখ চেয়ারম্যান কার্ল-হেইঞ্জ রুমিনিগে সংবাদ সম্মেলনে শোয়েনস্টেইগারের ম্যানইউতে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রুমিনিগে জানান, ২০০২ সালে অভিষেক হওয়ার পর বেয়ার্নের হয়ে ৫৩৬ ম্যাচ খেলা এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে ইতোমত্যেই বেয়ার্ন ও ইউনাইটেড একমত হয়েছে। তবে ট্রান্সফার ফির বিষয়ে কিছু জানাননি বেয়ার্ন চেয়ারম্যান। শোয়েনস্টেইগারের দল ত্যাগে অবাক হয়েছেন বেয়ার্নের ফুটবলাররা। তারা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, কি হলো! যে খেলোয়াড়টি তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়টাই বাভারিয়ানদের সেবা করেছেন, যে খেলোয়াড়টি পাঁচশোর ওপর ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, সে খেলোয়াড়টিই এখন নেই বেয়ার্নের খেলোয়াড় তালিকায়! ফিলিপ লাম, ম্যানুয়াল নিউয়েরা কিছুতেই মানতে পারছেন না বিষয়টি। শোয়েনস্টেইগারকে খুব মিস করছেন গোলরক্ষক নিউয়ের। তিনি বলেন, এটা সত্যিই অদ্ভুতুরে এক অনুভূতি।
×