ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টাইগারদের সিরিজ জয়ের হাতছানি

দৃষ্টি এখন পয়মন্ত সাগরিকায়

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৪ জুলাই ২০১৫

দৃষ্টি এখন পয়মন্ত সাগরিকায়

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার লড়াইটা জমবে বেশ ভালভাবেই। একটা সময় মনে হচ্ছিল অন্য সময়ের মতো এবারও একতরফাভাবেই সিরিজ জিতে দেশে ফিরে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। কারণ একের পর এক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ম্যাচ জিতে যাচ্ছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু ভিন্নতর ঘটনা দেখল সবাই রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ সমানে-সমান। আর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে চট্টগ্রামে হওয়ার কারণে স্বপ্নটা আরেকটু বেশিই দেখছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কারণ চট্টগ্রাম বরাবরই বাংলাদেশ দলকে খালি হাতে ফেরায়নি। সাগরিকায় অবস্থিত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জন্য বেশ পয়া ভেন্যু হিসেবেই পরিচিত। এ মাঠে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে খেলে ৯ ম্যাচেই জয় দেখেছে টাইগাররা। পরিবর্তে হেরেছে ৬টিতে। এবার সেখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জয়ী দল সিরিজ নিজেদের করে নেবে। সাগরিকায় পয়া ভেন্যু হিসেবে অনেক আগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। এ ভেন্যুতে সর্বশেষ খেলা ৭ ম্যাচের মধ্যে একটিতে পরাজিত হয়েছে টাইগাররা। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ মাঠে একমাত্র মোকাবেলার ইতিহাসটা মোটেও তেমন সুখকর নয়। সেটা অবশ্য আজ থেকে ৭ বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। ২০০৮ সালের ৯ মার্চ স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছিল সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত সাগরিকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই একটি ওয়ানডেই খেলেছে প্রোটিয়ারা। তবে গত সাত বছরে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। সবচেয়ে বেশি পাল্টেছে টিম বাংলাদেশ। সাত বছর আগের সেই ম্যাচে যে একাদশ নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ সেটার ম্যাচে দুই ক্রিকেটার টিকে আছেন বর্তমান দলে। সেই দু’জন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। আর দলগতভাবেই আগের চেয়ে সুশৃঙ্খল ও গোছানো দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। সে ম্যাচে ৮২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন চট্টলার ছেলে তামিম। এবার অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে এখন পর্যন্ত তার ব্যাটে সেভাবে রান দেখা যায়নি। কিন্তু সাগরিকায় তিনিও ফুঁসে উঠতে পারেন অতীতের মতোই। তার সামর্থ্যটা বরাবরই প্রতিপক্ষের জন্য ভীতির কারণ। সেই ভীতিটা সত্য হতে পারে প্রোটিয়াদের জন্য বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতেই। এখন মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে একের পর এক সাফল্যে উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। কারণ ঘরের মাঠে টানা তিন সিরিজে জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে জিতেছে টাইগাররা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ হার এবং প্রথম ওয়ানডেতে অসহায় আত্মসমর্পণের পর ওই আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে যায় বাংলাদেশের। এমন চ্যালেঞ্জ অনেকবার মোকাবেলা করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘দেশের অধিনায়কত্ব করা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ বেশি যখন একটা দল হারের ভেতর ঢুকে যায়। ব্যক্তিগতভাবে বললে আমি এর আগে এরচেয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এটা নিয়ে আমি এত ভীত না।’ আসলেও ভয়ডরহীন ক্রিকেটই উপহার দিচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে টি২০ ও প্রথম ওয়ানডেতে কিছুটা ভীতি ও শঙ্কা ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে প্রভাব ফেলেছিল। বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের ডেকে অনুপ্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই মন্ত্রেই বুঝি কাজ হয়ে গেল। আবার ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দাঁড়াতেই দেয়নি দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। সমতা এনেছে। কঠিন সময়ে পতিত হওয়া শুরু করতেই আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘কঠিন সময় এসেছে। এটাও ঠিক এখনও সময় আছে নিজেকে প্রমাণ করার। হ্যাঁ একটা দুটি ম্যাচ খারাপ করেছি, আমরা ক্যামবেক করতে পারি। যা পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। এটা স্বীকার করতে কোন সমস্যা নেই।’ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অবশ্য গত বছর প্রায় অর্ধমাস অবস্থান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচ না খেললেও টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের সব ম্যাচই খেলেছে। সে কারণে সাগরিকার পরিবেশ, উইকেট এবং পরিস্থিতির সঙ্গে বেশ পরিচয় আছে তাদের। এছাড়া ২০০৮ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ওয়ানডে এ মাঠে খেলেছিল প্রোটিয়া শিবির সেই দলটিতে ছিলেন বর্তমান দলের দুই অন্যতম সদস্য অধিনায়ক হাশিম আমলা ও মিডলঅর্ডার ব্যাটিং অলরাউন্ডার জেপি ডুমিনি। এরচেয়ে বড় বিষয় বর্তমানে দলের সঙ্গে বোলিং কোচ হিসেবে আছেন চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট। সাবেক এ পেসার ওই ম্যাচ খেলে দারুণ বোলিং করে দুই উইকেটও নিয়েছিলেন। এবার তিনি শিষ্যদের পূর্ব অভিজ্ঞতা জানিয়ে ভালভাবেই সবক দিতে পারবেন। তবে সম্প্রতি পরিসংখ্যান বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা যতই শক্তিশালী হোক সাগরিকায় টাইগারদের সামনে পরাস্ত হওয়ার সব সম্ভাবনাই প্রকট!
×