ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে ৩৬ দিন ধরে বলা হচ্ছে ফিরে আসবে

মাদ্রাসায় পড়তে এসে ১০ বছরের এতিম নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৪ জুলাই ২০১৫

মাদ্রাসায় পড়তে এসে ১০ বছরের এতিম নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে বনজসম্পদ দখল করে গড়ে তোলা রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে এক এতিম শিশুকে বেধড়ক মারধর করার পর থেকে ৩৬ দিন ধরে তার কোন হদিস মিলছে না বলে জানা গেছে। অনেকে ধারণা করছেন, হয়ত বেধড়ক মারধরে শিশুর মৃত্যু হওয়ায় প্রশাসনের ভয়ে গোপনে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। আবার কেউ বলছে, ওই শিশু পালিয়েছে, নতুবা বেধড়ক পিটুনিতে আহত হওয়ায় তাকে কোথাও লুকিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ইত্যাদি। গত ৬ জুন রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রখ্যাত কক্সবাজারের বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা জঙ্গী হাফেজ ছালাহুল ইসলাম পরিচালিত মুহুরিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফের বাহারছরার ১০ বছরের এতিম শিশু মামুন উদ্দিন ওই সেন্টারের হেফজ শাখায় অধ্যয়নরত ছিল। নিখোঁজ শিশুর মায়ের অভিযোগ, ৬ দিন ধরে ওই শিশু লাপাত্তা হলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ না জানার ভান করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মা রাশেদা বেগম অভিযোগ জানান, গত ১ জুন থেকে হেফজখানা পাঁচদিনের ছুটি হলে মামুন বাড়িতে এসে যথারীতি ৬ জুন ওই প্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। কিন্তু নির্ধারিত ছুটির একদিন অতিরিক্ত হওয়ায় তাকে শ্রেণী শিক্ষক মিজান বেদম মারধর ও বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। একদিন অনুপস্থিতির জন্য এক হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে তাকে। মামুন এ ঘটনা মোবাইল ফোনে তার মাকে জানালে মা শ্রেণী শিক্ষকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানতে চান। ‘নির্ধারিত ছুটির একদিন বিলম্ব হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে’ বলে জানান শ্রেণী শিক্ষক মিজান। ওই শিশুর মা জরিমানার টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরদিন থেকে তার বুকের ধন শিশু পুত্র মামুনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তিনি। ঘটনার দিন মামুন মোবাইল ফোনে কেঁদে কেঁদে তাকে বলে ‘ধরার জন্য তাড়া করছে’ এতটুকু পর্যন্ত বলতেই লাইন কেটে যায়। মায়ের ধারণা, তার ছেলেকে হয়ত তেড়ে ধরে মারা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামুনের মা বাদী হয়ে ৩০ জুন টেকনাফ থানায় ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তাঁকে কক্সবাজার সদর থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে। জনকণ্ঠের টেকনাফ সংবাদদাতা জানান, নিখোঁজ মামুন বাহারছরা বড় ডেইল গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। মামুনের এক বোনও ওই সেন্টারে এতিমখানায় অধ্যয়ন করছে। টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ আহমদ মেম্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রের কোন খোঁজ দিতে পারেনি বরং বারবার ‘সে ফিরে আসবে’ বলে তার মাকে আশ্বস্ত করে সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছে। জেলা আ’লীগের কতিপয় নেতার সঙ্গে ভয়ঙ্কর এ জঙ্গীর সখ্য থাকার কারণে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েও জঙ্গী ছালাহুল ইসলাম কাউকে তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
×