ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অডিটে জাল সনদ প্রমাণিত

কুড়িগ্রামে মাদ্রাসায় পেশী প্রদর্শন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৩ জুলাই ২০১৫

কুড়িগ্রামে মাদ্রাসায়  পেশী প্রদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান মহিলা মাদ্রাসা অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার আসাদুর রহমানকে পেশি শক্তি ও কূটকৌশলে বিতাড়িত করে সহকারী মৌলভী শিক্ষক হারুনুর রশিদ। সকল অপকর্মের হোতা হারুনুর রশিদ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অন্ধকারে রেখে একের পর এক এসব অপকর্ম চালায়। শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠাতা সুপার আসাদুর রহমানের ষাট বছর পূর্তি এবং জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে এমপিওশীট থেকে নাম কেটে নেয়। এরপর আলিম ও ফাজিলের জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিয়মবহির্ভুতভাবে সহকারী মৌলভী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি নিয়ে সুপারের পদ দখল করে। তার এই তুঘলকী কারবারে এলাকাবাসী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ খোদ শিক্ষা বিভাগ হতবাক। শিক্ষা বিভাগের তদন্তে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি প্রমাণিত হলে জেলা শিক্ষা অফিসার ভবো শঙ্কর বর্মা এক মাস পূর্বে অভিযুক্ত হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির জোরে হারুনুর রশিদ এখনও অবৈধভাবে সুপারের পদ দখল করে আছে। প্রতিষ্ঠাতা সুপার আসাদুর রহমান লিখিত অভিযোগে জানান, কুড়িগ্রাম জেলার নাজিমখান মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার হিসাবে ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। তার ইনডেক্স নং-৩৮৩৪৭৭ ও জন্ম তারিখ-০১/০৮/৬৭। ৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রাসায় ২ জন কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা গড়ায়। মামলার রায়ে আসাদুর রহমানের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধ বলে রায় দেয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহকারী মৌলভী শিক্ষক হারুনুর রশিদ পেশি শক্তির জোরে সুপার আসাদুর রহমানকে মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত করে। এখানে শেষ নয়। মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে ৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপার আসাদুর রহমানের ইনডেক্সের বিপরীতে স্টপ পেমেন্ট এবং পরবর্তীতে আমাকে মৃত ও ৬০ বছর পূর্তি দেখিয়ে এমপিওশীট থেকে নাম কর্তন করে। এ ব্যাপারে তিনি প্রতিকার চেয়ে কুড়িগ্রাম জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পর আলিম ও ফাজিলের জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২৬/০২/২০০৯ সালে সুপার পদে পদোন্নতি দেখা। অডিট অফিসার গোলাম মুর্ত্তজা ও সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক নেয়ামত উল্যাহ গত ৩/৮/১১ইং স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পদোন্নতি নিয়ে সুপার হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া হারুনুর রশিদের শিক্ষা জীবনে একটি ৩য় শ্রেণী রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ভবো শঙ্কর বর্মা বলেন, তদন্তে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষক প্যার্টান অনুযায়ী দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী সুপার পদ না থাকায় হারুনুর রশিদের গত ২৮/১২/৯২ইং তারিখে সহকারী সুপার হিসেবে নিয়োগ বাতিল যোগ্য। এমপিওভুক্তির আট বছর পূর্ণ না হলেও ফেব্রুয়ারি ’৯৯ এমপিওতে এরিয়ারসহ টাইম স্কেল গ্রহণ বিধিবহির্ভূত। এমপিওতে সেপ্টেম্বর’২০০৫ সালে পূর্ণাঙ্গ সুপার কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদনে তিনি পদোন্নতিতে সুপার ২৬/০২/২০০৯ইং, যা বড় ধরনের গড়মিল ও বিধিবহির্ভূত। এছাড়া শিক্ষা অফিসে দাখিলকৃত কাগজপত্রে দেখা যায় ‘আলিম’ বাকেরের হাট সিনিয়র মাদ্রাসা ও ‘ফাজিল’ সাতদরগা নেছারীয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাসকৃত সনদ। কিন্তু তার টেবুলেশন শীট ও মার্কশীট যাচাইয়ে দেখা যায় সে রাজমাল্লী হাট সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। যা সনদ জালিয়াতি। এ কারণে তিনি হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে অবহিত করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হারুনুর রশিদ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
×