ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাশেজ সিরিজ, প্রথম টেস্টে ১৬৯ রানের বড় হার অস্ট্রেলিয়ার, ম্যাচসেরা জো রুট

জয় দিয়ে শুরু ইংলিশদের

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৩ জুলাই ২০১৫

জয় দিয়ে শুরু ইংলিশদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জয় দিয়ে এ্যাশেজ মিশন শুরু করেছে স্বাগতিক ইংলিশরা। চার দিনেই কার্ডিফের প্রথম টেস্টে ১৬৯ রানের বিশাল জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেছে এ্যালিস্টার কুকের দল। জয়ের জন্য ৪১২ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪২ রানে অলআউট হয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩০৮। ইংল্যান্ড করে যথাক্রমে ৪৩০ ও ২৮৯ রান। ১৩৪ ও ৬০ রানের চমৎকার দুটি ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা ইংলিশ তারকা জো রুট। দারুণ জয়ে সন্তোষ ঝরেছে অধিনায়ক কুকের কণ্ঠে। অন্যদিকে নাখোস অসি ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্ক পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াতে চান। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট বৃহস্পতিবার থেকে। চার শ’র ওপরে রান তাড়া করে জিততে হলে এ্যাশেজে নতুন রেকর্ডই গড়তে হতো ক্লার্কদের। সর্বোপরি এত রান তাড়া করে টেস্ট ইতিহাসেই জয়ের রেকর্ড হাতে গোনা। নিঃসন্দেহে কাজটা কঠিন ছিল। তাই বলে, ওয়ানডের চ্যাম্পিয়নরা এত জঘণ্যভাবে, এত দৃষ্টিকটুভাবে হার মানবে, সেটি হয়ত খোদ প্রতিপক্ষ ইংলিশরাও ভাবেনি! এমন লজ্জাজনক হারের পর ক্লার্ক তাই খুব বেশি ব্যাখ্যায় গেলেন না। অসি ক্যাপ্টেন সংক্ষেপে বলে দিলেন, ‘বেশি কথা না বলে ছোট করে সারতে চাই, উই ওয়্যার আউটপ্লেইড! কার্ডিফে তিন বিভাগেই আমরা স্র্রেফ হেরে গেছি।’ সিরিজ শুরুর আগে খোদ ইংল্যান্ড মিডিয়ারও সন্দেহ ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপকে দুবার আউট কারার সাধ্য আদৌ কুকদের রয়েছে কি না? সেখানে চতুর্থ দিনে, ১২ ওভারের এক বৃত্তে পাঁচ অসি ব্যাটসম্যানকে তুলে নিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড-মঈন আলিরা! একদিনেরও বেশি সময় হাতে রেখে কুকরা ম্যাচটা জিতলেন ১৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। বিপরীতে আবার যেখানে মনে করা হচ্ছিল, মিচেল জনসন-মিচেল স্টার্ক আতঙ্কে মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে স্বাগতিক ব্যাটিং-লাইন, সেখানে উল্টো শাসন রুট-মঈনদের। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিলেন রুট (১৩৪), দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ইয়ান বেল (৬০)-মঈন (৬০) অতিথি বোলারদের এমন মার মারলেন, যা দেখে নিশ্চিতই বোঝা যাচ্ছিল নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে এই ইংল্যান্ড আসলেই বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড। বিশাল চাপ মাথায় নিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার যতক্ষণ ছিলেন, মনে হচ্ছিল কিছু একটা হতে পারে। স্বভাবজাত স্টাইলে চালাচ্ছিলেন এই ওপেনার। ৮৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ৫২ রান। কিন্তু বিধিবাম। ওয়াটসন ফেরার পরই পথ হারায় সফরকারীদের ইনিংস। সবচেয়ে বড় কথা, ইংরেজ বোলিং-ফিল্ডিং যে খুব একটা নিখুঁত দেখিয়েছে তাও নয়। তবে ম্যাচ কখনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেয়নি তারা। স্পষ্ট করে বললে, এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকাটা পালন করেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। অস্ট্রেলীয় টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে তুলে নিয়েছেন একাই। ফিরিয়েছেন ক্রিস রজার্স (১০), অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক (৪), স্টিভেন স্মিথকে (৩৩)। শেষ পর্যন্ত ৭০.৩ ওভার পর্যন্ত খেলে ২৪২ রান করে অস্ট্রেলিয়া হারের ব্যবধান কমাতে পেরেছে মিচেল জনসনের সৌজন্যে! মূলত বোলিংই যার কাজ সেই জনসন আট নম্বরে নেমে করেছেন সর্বোচ্চ ৭৭ রান! ব্রড-মঈন ৩টি, মার্ক উড ও জো রুট নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। এ্যান্ডারসনও কম ভোগাননি। কিন্তু অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের এই নাম্বার ওয়ান বোলার। ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে জনসনের হাফ সেঞ্চুরি অতিথিদের আফসোস বাড়িয়েছে। বলাবালি হচ্ছে, জনসন পারলে ব্যাটসম্যানরা কেন নয়? অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায় তো শেন ওয়াটসন ও ব্রাড হ্যাডিনকে বাইরে রাখতে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে! ওয়াটসন ৩০ ও ১৯, হ্যাডিন ২২ ও ৭ রান করে আউট হন। তবে বাকিরাই বা কি করেছেন? বড় বিষয় হলো সময় মন্দ গেলে যা হয়। ম্যাচে শেষ দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা গেছে পেসার স্টার্ককে। অধিনায়ক ক্লার্ক, ‘বিশ্বকাপের মতো টিম গেম খেলার আহ্বান জানিয়েছেন। লর্ডসে ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সেই সামর্থ্য রয়েছে। ম্যাচসেরা রুট বলেন, ‘আমরা ব্যতিক্রম ক্রিকেট খেলেছি। আমি তো ভীষণ উত্তেজিত। ব্যাটিংয়ের সময় ওরা যখন আক্রমণ করেছে, আমিও পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছি। আর সব সময় বিপরীত দিক থেকে কাউকে না কাউকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। এটা দারুণ কাজে লেগেছে।’ অধিনায়ক কুক বলেন, ‘সবই অতীত নিয়ে কথা বলছিল। এটা কিন্তু ইংল্যান্ডের অন্য দল। সবাই দারুণ পারফর্ম করেছে। রুট-মইন ছিল আসলেই দুর্বার।’ স্কোর ॥ ইংল্যন্ড প্রথম ইনিংস ৪৩০/১০ (১০২.১ ওভার; রুট ১৩৪, ব্যালান্স ৬১, স্টোকস ৫২, মঈন ৭৭, বাটলার ২৭, কুক ২০; স্টার্ক ৫/১১৪, হ্যাজলউড ৩/৮৩, লেয়ন ২/৬৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৮৯/১০ (৭০.১ ওভার; রুট ৬০, বেল ৬০, স্টোকস ৪২, লিথ ৩৭, উড ৩২*, মঈন ১৫; লিয়ন ৪/৭৫, হ্যাজলউড ২/৪৯, স্টার্ক ২/৬০, জনসন ২/৬৯) অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৩০৮/১০ (৮৪.৫ ওভার; রজার্স ৯৫, ক্লার্ক ৩৮, স্মিথ ৩৩, ভোগস ৩১, ওয়াটসন ৩০; এ্যান্ডারসন ৩/৪৩, ব্রড ২/৬০, উড ২/৬৬, মঈন ২/৬১) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৪২/১০ (৭০.৩ ওভার; জনসন ৭৭, ওয়ার্নার ৫২, স্মিথ ৩৩, ওয়াটসন ১৯, স্টার্ক ১৭; ব্রড ৩/৩৯, মঈন ৩/৫৯, রুট ২/২৮, উড ২/৫৩) ফল ॥ ইংল্যান্ড ১৬৯ রানে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ রুট (ইংল্যান্ড) সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।
×