ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৭ বছর পর আবারও শিরোপা জিতলেন হিঙ্গিস, উইম্বল্ডনের দ্বৈতে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন সানিয়া

সানিয়া-হিঙ্গিস জুটির চমক

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৩ জুলাই ২০১৫

সানিয়া-হিঙ্গিস জুটির চমক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো সানিয়া মির্জা ও মার্টিনা হিঙ্গিস জুটির। উইম্বল্ডনে মেয়েদের ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন এই ইন্দো-সুইস জুটি। শনিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে রাশিয়ান জুটি একাটেরিনা মাকারোভা ও এলিনা ভেসলিনাকে পরাজিত করে উইম্বল্ডন জয়ের স্বপ্ন পূরণ করলেন তারা। সানিয়া মির্জা ও মার্টিনা হিঙ্গিস জুটি এদিন ৫-৭, ৭-৬ (৭-৪) এবং ৭-৫ গেমে পরাজিত করেন মাকারোভা-ভেসলিনাকে। প্রথম সেটে হেরে গিয়েও পরের দুটি সেট জিতে প্রথমবারের মতো উইম্বল্ডনে দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হন তারা। এর আগে তিনবার মিক্সড ডাবলস খেতাব জিতেছে এই জুটি। তবে কখনও মেয়েদের ডাবলসে খেতাব জেতেননি সানিয়া। তাই মেয়েদের ডাবলস উইম্বল্ডন খেতাব জিততে মরিয়া ছিলেন হায়দরাবাদী এই তারকা। এবার সেই স্বপ্নের শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত সানিয়া। তিনবার মিক্সড ডাবলস খেতাবের সঙ্গে একবার ডাবলস খেতাব যুক্ত হলো তার। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সানিয়ার সঙ্গে আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন মার্টিনা হিঙ্গিসও। তবে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান তারা। মার্টিনা হিঙ্গিসের বর্তমান বয়স ৩৪। কিন্তু এই বয়সেও যেন দুর্দান্তভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন টেনিস কোর্টে। বিশেষ করে সানিয়া মির্জার সঙ্গে জুটি বাঁধার পর থেকেই যেন রীতিমতো উড়ছেন তিনি। প্রমাণ করলেন বয়সের ফ্রেমে নিজেকে বেঁধে রাখতে চান না। দীর্ঘ সতেরো বছর পর আবারও উইম্বল্ডনের শিরোপা জিতে আনন্দে-উদ্বেলিত হিঙ্গিস। এ বিষয়ে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এ যেন অন্য এক জীবন। প্রকৃতপক্ষে এটা আমার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কিছু। উইম্বল্ডনে আবারও খেলতে পেরেই আমি আনন্দিত। আর শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসটা যেন তার চেয়ে বেশি। আমি আসলে কখনই ভাবিনি যে এখানে আবারও ফিরে আসব এবং উইম্বল্ডনের ফাইনালে খেলব।’ অন্যদিকে প্রথমবার উইম্বল্ডন ডাবলসের ফাইনালে উঠেই শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। এই জয়ের ফলে উচ্ছ্বসিত সানিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোর্টে প্রথম সেটেই হেরে গিয়েছিলাম আমরা। তারপরও কখনই হাল ছেড়ে দেইনি। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই জয়টা অবিশ্বাস্য।’ সানিয়া পেরেছেন। অন্যদিকে নিজের ১৬তম মেজর শিরোপা থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ভারতীয় টেনিস কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ। সানিয়া এবং লিয়েন্ডার দুই তারকারই পার্টনার একজনই। সুইস টেনিস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিস। হিঙ্গিস আর সানিয়া জুটি বাঁধার পর থেকেই টেনিস কোর্টে দুর্দান্ত খেলছেন। উইম্বল্ডনের আগেই তারা তিন ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছেন। ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মিয়ামি এবং চার্লেসটন জেতা এই জুটি মৌসুমের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্টেও ফেবারিট হিসেবে কোর্টে নামেন। আর শেষ পর্যন্ত সানিয়া-হিঙ্গিস জুটি প্রথম মেজর ট্রফি জেতার কৃতিত্বটাও দেখালেন। সানিয়া এর আগে ডাবলসে গ্র্যান্ডসøাম ফাইনালে উঠেছিলেন একবার। ফরাসী ওপেনে। রাশিয়ান টেনিস তারকা এলেনা ভেসনিনার সঙ্গে জুটি বেঁধে ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু রানার্সআপ হয়েই টেনিস কোর্ট ছাড়তে হয়েছিল তাকে। এবার শিরোপা জিতেই কোর্ট ছাড়লেন তিনি। হিঙ্গিসের সামনে আরেকটি শিরোপা জয়ের সুযোগ রয়েছে। মিশ্র দ্বৈতে লিয়েন্ডার এবং হিঙ্গিসের ক্ষেত্রে উইম্বল্ডন জয় তাদের মুকুটে আরও একটি রঙিন পালক যুক্ত করবে। এ বছরের শুরুর দিকেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয় লিয়েন্ডার-হিঙ্গিস জুটি। গ্র্যান্ডসøামে লিয়েন্ডার পেজের রেকর্ড বেশ প্রশংসনীয়। পুরুষদের ডাবলসে জিতেছেন ৮ গ্র্যান্ডসøাম। মিশ্র দ্বৈতে গ্র্যান্ডসøাম জেতার সংখ্যা ৭। উইম্বল্ডন জিতলেই রেকর্ড হবে সমান সমান। আর টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি মার্টিনা হিঙ্গিস। ৩২ বছর বয়সেই টেনিসের ‘হল অব ফেম’ এ নিজের নাম লেখান তিনি। সুইস টেনিস তারকা হিঙ্গিস। ১৯৯৩ সালে ১২ বছর বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনের জুনিয়র টাইটেল দিয়ে টেনিসে আবির্ভাব ঘটে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। ১৯৯৭ সালে একসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান, উইম্বল্ডন আর ইউএস ওপেন জেতেন তিনি। ১৯৯৮ ও ৯৯ সালে আবারও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন। এছাড়া ‘ডাবল’ থেকে নয় আর ‘মিক্সড ডাবল’ থেকে আরও একটি গ্র্যান্ডসøামের মুকুট যোগ হয় তার ক্যারিয়ারে। ২২ বছর বয়সে ১৫ গ্র্যান্ডসøামের অধিকারী হন বিস্ময়কর এই টেনিস তারকা। এরপরই মারাত্মক এক ইনজুরিতে পড়ে টেনিসকে বিদায় জানান তিনি। অবশ্য চার বছর পর আবার খেলায় ফিরে আসলেও নিষিদ্ধ মাদক কোকেন নেয়ার অভিযোগ উঠে হিঙ্গিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোন আইনী লড়াইয়ে যাননি তিনি। অবসর নেন টেনিস থেকে। তবে টেনিস যে তার প্রাণ, কোর্টে ফিরে আবারও প্রমাণ দেন মার্টিনা হিঙ্গিস। বর্তমানে দুর্দো-প্রতাপে খেলতে থাকা এই তারকার লক্ষ্য এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
×