ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৬.৭ শতাংশ

সেবা খাতে ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৩ জুলাই ২০১৫

সেবা খাতে ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী ৫ বছরে সেবাখাতে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায় সরকার। এজন্য ২ লাখ ৬২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (২৬২৯ বিলিয়ন টাকা) ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। বলা হচ্ছে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে সেবাখাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের আয় যত বাড়বে সেবাখাত ততই সম্প্রসারিত হবে। এজন্য সেবাখাতে দক্ষতা উন্নয়ন জরুরী। এ বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সেবাখাতের দিকেই নজর দিতে হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা রফতানি ব্যাপক পরিমাণে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে সুযোগও রয়েছে অনেক। তাছাড়া দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে বিদেশে রফতানি বাড়াতে পাড়লে প্রচুর রেমিটেন্স আয় করার অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। জিইডি সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থবছরভিত্তিক সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য হচ্ছে, চলতি ২০১৫ সালের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক আট শতাংশ। এটি থেকে বেড়ে অর্থবছর ২০১৬-তে ছয় দশমিক তিন শতাংশ, অর্থবছর ২০১৭-তে ছয় দশমিক চার শতাংশ, অর্থবছর ২০১৮-এ ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ, অর্থবছর ২০১৯-এ ছয় দশমিক ছয় এবং পরিকল্পনার শেষ বছর অর্থবছর ২০২০-এ ছয় দশমিক সাত শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্য পূরণে আগামী পাঁচ বছরে ব্যয় ধরা হচ্ছে, চলতি অর্থছর এক লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে অর্থবছর ২০১৬-তে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারী ব্যয় ৪০ হাজার ৩০০ কোটি এবং বেসরকারী ব্যয় এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর ২০১৭-তে মোট ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারী ব্যয় ৪৬ হাজার ৪০০ কোটি এবং বেসরকারী ব্যয় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর ২০১৮-এ মোট ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি এবং বেসরকারী খাত থেকে এক লাখ ৭১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থবছর ২০১৯-এ মোট ব্যয়ের লক্ষ্য হচ্ছে দুই লাখ ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৬১ হাজার ২০০ কোটি এবং বেসরকারী খাতের এক লাখ ৭১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনার শেষ অর্থবছর ২০২০-এ মোট ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৬১ হাজার ২০০ কোটি এবং বেসরকারী খাতের এক লাখ ৭১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, সেবাখাতে দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন আত্মীয়স্বজন কেউ এমএ পাস থাকলে আমরা গর্বের সঙ্গে বলি আমার অমুক এমএ পাস, কিন্তু যদি কেউ ভকেশনাল পড়ে বা পাস করেছে তখন লজ্জাবোধ করে বলি সে এ সামান্য কিছু পড়েছে আরকি। এ মানসিকতা বাদ দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ওয়াল্ড ডেভলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস সার্ভে ২০১২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেবাখাত ব্যাপক অবদান রাখছে। যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সেবাখাতের ভূমিকা হচ্ছে ৫৬ ভাগ, যা ভারতের প্রবৃদ্ধিতে সেবাখাতের অবদান হচ্ছে ৫৫ ভাগ। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে সেবাখাতের অবদান ৫৪ ভাগ, উচ্চ আয়ের দেশে সেবাখাতের ভূমিকা হচ্ছে ৭৫ ভাগ, মধ্য আয়ের দেশে সেবাখাতের অবদান ৫৫ ভাগ এবং নিম্ন আয়ের দেশে সেবাখাতের অবদান ৫০ ভাগ। সেবাখাত উন্নয়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেগুলো হলো, সেবাখাতে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনা দেয়া, প্রধান প্রধান সেবাখাতে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী বিনিয়োগ, দক্ষতাভিত্তিক সেবাখাত গড়ে তুলতে দক্ষতা উন্নয়নে নানা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, সেবাখাত সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালাগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও কার্যকর করা, এ খাতে শ্রমিকদের চাকরি নিশ্চয়াতা প্রদান ও সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরির ব্যবস্থা করা এবং সেবাদানদকারীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সেবাখাত সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা, যাতে সেবার মান বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
×