ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্কুলবালক থেকে সেনসেশন

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১২ জুলাই ২০১৫

স্কুলবালক থেকে সেনসেশন

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ‘পেস আক্রমণে স্টেইন-মরকেলের পাশাপশি সেরা স্পিনার তাহিরকে পাওয়া যাবে না। কাইল এ্যাবোট-ডেভিড ওয়াইজের সঙ্গে তরুণ কাগিসো রাবাদার জন্য সুযোগ এটি। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা।’ টি২০ সিরিজ শুরু আগে বলেছিলেন অতিস্বল্পদের্ঘৈ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসিস। সেই আশাটা এভাবে বাস্তবে রূপ নেবে, এমনটা রাবাদা নিজেও আশা করেননি। ঠিক ভারত সিরিজে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের বেলায় যেমনটা ঘটেছিল। দুটি ম্যাচের ব্যবধানে বদলে গেল জীবন। এক লহমায় স্কুলবালক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের জাতীয় তারকা বনে গেলেন ২০ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ পেসার! জোহানেসবার্গ থেকে ট্রান্সভিল, জিওফ্রে টয়ানা থেকে এ্যালান ডোনাল্ড সর্বত্র আলোচনার বিষয় একটাই। রাবাদা। পুরো নামা কাগিসো রাবাদা। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেকেই যিনি বদলে দিয়েছেন ইতিহাস। অভিষেকে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই করেছেন হ্যাটট্রিক, পরে আরও তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ৮-৩-১৬-৬! গড়েছেন অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের নতুন রেকর্ড। ভাগ্যিস, বৃষ্টিতে খেলা ৪০ ওভারে নেমে এসেছিল, ১০ ওভারের পুরো কোটা বল করলে না জানি কি হতো? ৮ উইকেটের বিশাল জয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচের পর প্রথম টি২০ হয়ে ওয়ানডেÑ বাংলাদেশে এসে তিন ম্যাচে রাবাদার বোলিং ১/১০, ২/২৮ ও ৬/১৬! আজ তাহলে কত? মাশরাফি-বিন মর্তুজাদের জন্য এর চেয়ে ভয়ঙ্কর প্রশ্ন আর কিছু হতে পারে না। ওয়ানডে অভিষেকে সেরা বোলিং করে ক্রিকেট বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিলেও রাবাদা-প্রতিভা কিন্তু আকাশ থেকে পড়েনি। দক্ষিণ আফ্রিকা অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে গত অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে ও একাধিক সফরেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্ব কাঁপাতে আসছেন তিনি। ঘরোয়া দল লায়ন্স কোচ জিওফ্রে টয়ানা সেটি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, পেরেছিলেন অনুর্ধ- ও একাডেমি দলে খ-কালীন বোলিং কোচের দায়িত্বে থাকা সাবেক গ্রেট এ্যালান ডোনাল্ডও। ‘রাবাদাকে সেই স্কুল থেকে চিনি। চাইছিলাম কবে ও বড় হয়ে উঠবে, আর আমি ওকে দলে ভেড়াব!’ শিষ্য সম্পর্কে এমন অদ্ভুদ কথাই শুনিয়েছেন লায়ন্স কোচ টয়ানা। তিনি আরও যোগ করেন,‘আজ রেকর্ড গড়া অভিষেকের পর অনেকে অবাক হলেও আমি হইনি! কারণ জানতাম একদিন ঠিকই বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেবে ও। ভয়ঙ্কর গতির সঙ্গ নিখুঁত লাইন-লেন্থই ওর বড় অস্ত্র।’ ডোনাল্ডের অভিজ্ঞতাটাও দারুণ। “অনুর্ধ-১৯ দলে পরামর্শ দিতে গিয়ে ওর প্রথম প্রশ্নই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। রাবাদা জানতে চেয়েছিল, ‘বল হাতে আমার গতি পেতে একদমই সমস্যা নেই, তুমি কি একটু পরামর্শ দেবে, আমি কিভাবে মাথাটাও খাটাতে পারি?’ জবাবে বলেছিলাম, আত্মবিশ্বাসই তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে। ও আসলে সহজাত প্রতিভা” অস্বীকারের উপায় নেই। রতনে রতন চেনে। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ২৫ রানে ৬ উইকেট নেয়ার পর লায়ন্সের হয়ে প্রথমশ্রেণীর অভিষেকেও দক্ষিণ আফ্রিকা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন রাবাদা। গত ফেব্রুয়ারিতে ডলফিন্সের বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট! লায়ন্সের ১০ উইকেটের বিশাল জয় এনে দিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। চমকের পর চমকে যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিভায়-বর্ণে মাখা এনটিনির এই যোগ্য উত্তরসূরি। রাবাদা নিজেও এতটা আশা করেননি। ‘সত্যি বলতে আমি ভাবতেও পারিনি। এমন কিছুর স্বপ্নও দেখিনি। ম্যাচের আগে প্র্যাকটিসের সময় ভাল লাগছিল, এই যা। মাঠে নামতে তাই মুখিয়ে ছিলাম। বোলিং করলাম, একের পর এক উইকেট আসতে থাকল। পরিকল্পনা করে হয়নি। এভাবে শুরু করতে পারব, কল্পনাও করিনি।’ বলছিলেন প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক। রাবাদার পরিকল্পনায় ছিল কেবল লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিজের মতো বোলিং করে যাওয়া,‘আমি স্রেফ ভাল লেন্থে বোলিং করতে চেয়েছিলাম। সঙ্গে মাঝে-মধ্যে দু-একটি বাউন্সার দেয়া। এই তো!’ ১০ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেলে নিশ্চই উইকেট আরও বাড়তে পারত? এমন প্রশ্নে রাবাদার উত্তর,‘আরও ২ ওভার পেলে হয়ত দু-একটি উইকেটও পেতে পারতাম। তাহলে দারুণ লাগত।’ আজ দ্বিতীয় ম্যাচে সেই অপেক্ষায় প্রোটিয়া সেনসেশন!
×