ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মর্মান্তিক!

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১২ জুলাই ২০১৫

মর্মান্তিক!

ময়মনসিংহে শুক্রবার জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় আমরা যারপরনাই মর্মাহত, শোকাহত। ঘটনার আকস্মিকতায় নিহতদের স্বজনের মতোই স্তম্ভিত আমরা। এমন মৃত্যুর সান্ত¡নায় শোকাবেগ আরও উথলে ওঠে জেনেও আমরা নিহতের স্বজনদের জানাই সমবেদনা, তাদের সঙ্গেও আমরা সমব্যথী। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত অন্যতম। জাকাতের মুখ্য উদ্দেশ্য ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক দূরত্ব ও বৈষম্য কমিয়ে আনা। এই মহৎ উদ্দেশ্য পালনার্থে এ দেশে কোন কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির মধ্যে প্রতিবছর দেখা যায় আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। এমন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিত্ত-বৈভব প্রদর্শনীর যেন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠে। এ রকম সংস্কৃতি কতটা ধর্মসম্মত সে প্রশ্ন করাই যায়। এমন আয়োজন করতে গিয়ে যে দুর্ঘটনা এই প্রথম ঘটল তা নয়। এর আগে বহুবার এমন ঘটনা ঘটে কয়েক শ’ অমূল্য প্রাণ ঝরে পড়েছে। সেসব ঘটনা দেশজুড়ে হয়েছে আলোচিত। মিডিয়ার কল্যাণে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব খবরও পৌঁছে গেছে। এ নিয়ে হয়েছে তথ্যচিত্র এবং সাময়িক গণসচেতনতামূলক প্রচারণা। তবে এ জাতীয় বড় ধরনের জাকাতের আয়োজকরা কেন নিরাপত্তামূলক আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। যেসব দুস্থ নারী-শিশু রাত জেগে জাকাতদাতার বাড়ির সামনে লুঙ্গি-শাড়ির জন্য অপেক্ষা করে শেষ রাতে এ বিয়োগান্ত ঘটনার শিকার হলেন তারা আর্থিকভাবে যে দারিদ্র্যসীমার নিচেÑ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আনন্দের মিলনমেলা পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর সমাগত। নিহতদের অনেকেই কোন কোন পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী তা সহজেই অনুমেয়। মৃত্যু তো অপূরণীয় ক্ষতি। যিনি পরিবার থেকে, পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন তিনি তো ফিরবেন না। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মানসিক ক্ষতি হয়ত পূরণ সম্ভব নয় কিন্তু আর্থিক ক্ষতি পূরণযোগ্য। স্বজন হারানোর বেদনার অশ্রু যেন ঈদের আনন্দ ম্লান করে না দেয়, তেমন ব্যবস্থা বা উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ আছে। সেদিকে সরকার বা সমাজের বিত্তবান ব্যক্তির দৃষ্টি পড়বে এ আশা করা যায়। পাশাপাশি প্রয়োজন আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজনের সমবেদনা জানিয়ে যে শোকবাণী দিয়েছেন তাতে ঘটনার সবিশেষ গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমরা এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করি। শুধু জাকাতদাতা জর্দা ফ্যাক্টরির মালিককে আটকই যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও দায় এড়াতে পারে না। এতবড় আয়োজনের খবর তাদের বিশেষ শাখা মারফত জানতে পেরেছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। ময়মনসিংহে যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে সবারই সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। পবিত্র রমজান মাসে মানবতা যেন পদদলিত না হয় সেদিকে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জাকাতদাতা-গ্রহীতা সবারই সচেতনতার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার ব্যাপারটি বেশি জরুরী। আরেকটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার- এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। ‘জাকাত বোর্ড’ নামে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের খবর আমরা জানি। সেটার কার্যক্রম মোটেও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
×