ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ জুলাই ২০১৫

ঈদে এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রায় এক কোটি পরিবার ১০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পাচ্ছেন। এবার ঈদে মুসলিম সম্প্রদায় ছাড়াও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ন্যূনতম চারটি শর্তে প্রতিটি পরিবারের মাঝে এই চাল বিতরণ চলছে। এই লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলার ৪৮৭টি উপজেলা ও ৩১৭টি পৌরসভায় প্রায় ৯৮ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচীর মাধ্যমে এই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্রমতে, সারাদেশে ৯৭ লাখ ৯১ হাজার ৪৬২টি পরিবারকে চাল দেয়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে চাল বিতরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে চাল বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের বেশ কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। বিনামূল্যের চাল বিতরণের লক্ষ্যে বারোটি শর্ত নির্ধারণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এসব শর্তের মধ্যে কমপক্ষে চারটি শর্ত পূরণ হলেই কোন ব্যক্তি, পরিবার বা অতিদরিদ্র পরিবার চাল পাবেন। সূত্রমতে, প্রতিবারের মতো এবারও বিনামূল্যের চাল বিতরণ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যূনতম চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল দেয়া হবে। প্রকৃত দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ যেন চাল পান সেজন্যই এই নিয়ম করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় যে বারোটি শর্ত নির্ধারণ করেছে সেসব শর্তের মধ্যে রয়েছেÑ যে পরিবারের মালিকানায় কোন জমি নেই বা ভিটাবাড়ি ছাড়া কোন জমি নেই। যে পরিবার দিনমজুরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যে পরিবার মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণবয়স্ক কোন পুরুষ সদস্য নেই। যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়। যে পরিবারে উপার্জনশীল কোন সম্পদ নেই। যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্ত, বিচ্ছিন্ন বা তালাকপ্রাপ্ত মহিলা। যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা। যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল ও অক্ষম। যে পরিবার কোন ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্ত হয়নি। যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য বা অর্থ সঙ্কটে পড়েছে এবং যে পরিবারের সদস্যরা বছরের অধিকাংশ সময় দু’বেলা খাবার পান না। তবে এসব শর্তের মধ্যে কমপক্ষে চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল পাবেন। সূত্রমতে, ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় এই চাল বিতরণের জন্য আদমশুমারি-২০১১-এর জনসংখ্যা অনুযায়ী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা পুনর্বিভাজন করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দুস্থ, অতিদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি বন্যাক্রান্ত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ পরিবারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে বিনামূল্যে চাল বিতরণের তালিকা ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা ভিজিএফ কমিটি কর্তৃক প্রণীত ও সত্যায়িত হতে হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিজিএফ উপকারভোগীদের তালিকা এমনভাবে প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে যে কোন অবস্থাতেই একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ভিজিএফ বরাদ্দ যেন না পান। এছাড়া জেলা-উপজেলা খাদ্যগুদাম হতে বিতরণ কেন্দ্র পর্যন্ত চাল পৌঁছানোর পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সরকারী খাত থেকে বহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে প্রায় এক কোটি পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ঈদের আগেই চাল বিতরণ কর্মসূচী সম্পন্ন করছেন। মুসলমান সম্প্রদায় বাদেও অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকলেই চাল পাচ্ছেন। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ন্যূনতম চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যরা বিনামূল্যে চাল বিতরণ কর্মসূচী তদারকি করছেন। এদিকে গত সপ্তাহে জরুরী বন্যা ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও ৫০০ টন জিআর ও নগদ সহায়তার জন্য ৪ কোটি টাকা ছাড় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দেশের যে কোন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এ বরাদ্দ থেকে জেলা প্রশাসকদের সহায়তা পাঠাতে এ বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যার্তদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ সহায়তার বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করেছে। কক্সবাজার জেলায় ২৩০ টন চাল ও ১৭ লাখ টাকা, বান্দরবান জেলায় ১৫০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম জেলায় ৫০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিমাসেই নিয়মিতভাবে ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস, টিআর, ভিজিএফ, স্কুল ফিডিং, জিআর কর্মসূচীতে চাল বিতরণ করা হয়। তবে ঈদের সময় ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় প্রায় ৯৮ হাজার টন চাল বিতরণের ফলে এই খাতে বিতরণের পরিমাণ অনেক বাড়বে। মন্ত্রণালয় মূলত দুইটি খাতে চাল বিতরণ করে থাকে। একটি আর্থিক খাত অন্যটি অনার্থিক। ভিজিএফ কর্মসূচী সরকারের সম্পূর্ণ একটি অনার্থিক খাত। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সারা দেশে পরিবারের সংখ্যা তিন কোটি ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ’টি। এসব পরিবারের মধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের সদস্যরা এই চাল পাবেন।
×