ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্য!

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্য!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘরের মাঠে টানা তিন সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ, বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা এবং পরে পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। এর পেছনে মূল ভূমিকাই রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তবে এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর পর থেকেই অনেক পুরনো চেহারাটা ফিরে এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। সেটা অব্যাহত থাকল শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেও। অভিষেক হওয়া পেসার কাগিসো রাবাদার তোপেই মাথানত করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে নামলেও রাবাদার হ্যাটট্রিকসহ মাত্র ১৬ রানে দখল করা ৬ উইকেটে ধসে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। অভিষেক ওয়ানডেতে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিদেল এডওয়ার্ডস ২২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে। সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিলেন ২০ বছর বয়সী রাবাদা। আর বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ব্যাট চালিয়ে যাওয়া-আসার মিছিলে শামিল হলেন, ব্যর্থতার বিপর্যস্ত চেহারাটা দেখালেন। বৃষ্টির কারণে খেলা সময়মতো শুরু করা যায়নি। তবে টানা দু’দিনের বৃষ্টির পর যখন ৪০ ওভারে খেলা নির্ধারিত হলো, আগেই বোঝা যাচ্ছিল গতিময় বোলাররাই মিরপুরের উইকেটে দাপট দেখাবেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়ঙ্কর পেস আক্রমণে নেই ডেল স্টেইন ও মরনে মরকেলরা। তাই কিছুটা হয়ত আশা দেখা যাচ্ছিল। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ ঠেকাতে আটজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু বৃষ্টিবিঘিœত দিনেও টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। আর সেটাই সম্ভবত কাল হয়েছে। ইনিংসের চতুর্থ ওভার থেকেই শুরু হয় পতন! সেই পতন ঠেকানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থেকেছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও চরম ব্যর্থতার নিদর্শন দেখিয়েছেন। এরমধ্যে রাবাদা হ্যাটট্রিক করে ফেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় বোলার হিসেবে এ গৌরব দেখান তিনি তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে তামিম ইকবালকে (০), পঞ্চম বলে লিটন দাসকে (০) ও ষষ্ঠ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে (০) রানে ফিরিয়ে দিয়ে। তবে দারুণ খেলছিলেন তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার। ২৭ বলে ২৭ রান করার পর তাঁকেও ফাঁদে ফেলেন মিরপুরের বৃষ্টিভেজা ম্যাচে গতির ঝড় তোলা রাবাদা। ৪০ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর এ চারটি উইকেটই শিকার করেন রাবাদা। প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ১৪ রান দিয়েই ৪ উইকেট নেন তিনি। রাবাদাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেয়ার পর বিপর্যয়টা ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। গত তিনটি সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণভাবে ব্যর্থ মুশফিক অবশ্য এদিন বেশ দেখেশুনে ভালই খেলছিলেন। পঞ্চম উইকেটে এ দু’জন ৫৩ রান যোগ করার পর মুশফিক আর ধৈর্য রাখতে পারেননি। তিনিও অহেতুক বড় শট খেলতে গিয়ে জেপি ডুমিনির স্পিনে সাজঘরে ফেরেন ২৪ রান করে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বাংলাদেশকে আশার আলো দেখানো সাকিবও ইমরান তাহিরের স্পিনে কুপোকাত হন সাকিব। তিনিই একমাত্র বড় স্কোর গড়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়ানক বোলিংয়ের সামনে। সাকিব সাবলীল ভঙ্গিতে খেলে ৫১ বলে ৫ চারে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন। পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন সাজঘরে ফেরার প্রতিযোগিতায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় না রেখে ব্যাট চালাতে গিয়ে একে একে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির রহমান (৫), মাশরাফি বিন মর্তুজা ৪ ও জুবায়ের হোসেন ৫। একাই সংগ্রাম চালাচ্ছিলেন নাসির হোসেন। কিন্তু তাঁকেও সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে করুন চিত্রের শেষ আঘাতটা হানেন ক্রিস মরিস। ফিরতি স্পেলে রাবাদা ৩ ওভারে দুই মেডেনসহ মাত্র ২ রানে দুই উইকেট নেন। সব মিলিয়ে ৮ ওভারে ১৬ রানে ৬ উইকেট। অভিষেক ওয়ানডেতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। আর সে বিশ্বরেকর্ড হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বাজে, অপরিকল্পিত ব্যাটিং ব্যর্থতাই বড় ভূমিকা রেখেছে। আর সে কারণেই ৩৬.৩ ওভারে মাত্র ১৬০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
×