ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে নৌপথে নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১১ জুলাই ২০১৫

ঈদে নৌপথে নিরাপত্তা

ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। ঈদে নৌপথে ঘরে ফেরার কথা মনে হলেই আনন্দের বিপরীতে মনের ভেতর শঙ্কা জাগে দুর্ঘটনার। এবারের বর্ষা মৌসুমে নদীপথ দুর্যোগপূর্ণ হতে পারে বলে শঙ্কা জাগতেই পারে। তথাপি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নৌপথে গ্রামে ফেরা যাত্রীর ভিড় বাড়বেই। আশঙ্কাজনকভাবে কানায় কানায় পূর্ণ হবে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ, স্টিমারসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নৌযান। সেইসঙ্গে বাড়বে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। প্রায় প্রতিবছরই ঈদের সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মৃত্যুবরণ করে অসংখ্য মানুষ। লাশের মিছিল আর অসহায় স্বজনের কান্নায় নৌপথে বাতাস ভারি হয়ে ওঠার দৃশ্য এ দেশ বারবার দেখে আসছে। গত সাত দশকে দেশে দুই হাজার এক শ’ বাইশটি নৌ-দুর্ঘটনায় সরকারী হিসেবে ছয় হাজার যাত্রী নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় কুড়ি হাজার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র এক শ’ একচল্লিশটি। তাছাড়াও যেসব মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে তাতে কারও কোন শাস্তি হয়নি। লঞ্চগুলো ঈদের সময় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌপথে যাতায়াতে বাধ্য হয়। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। ফিটনেসবিহীন লঞ্চেই ঘটে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা। অধিক যাত্রী পরিবহন মানেই দুর্ঘটনাকে টেনে আনা। এছাড়া নৌপরিবহন খাতে নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে দুর্ঘটনা যেন লেগেই আছে। বর্তমানে দেশে প্রায় আট হাজার আট শ’ ত্রিশ কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। এই পথে বারো হাজার নৌযান চলাচল করে। তবে অনিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা তেইশ হাজার। এর অনেকগুলোই যাত্রীবাহী লঞ্চ। নদীপথে চলাচলকারী নিবন্ধনকৃত নৌযানেরও সময়মতো ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় না। ফলে বছরে প্রায় ছয় কোটিরও বেশি যাত্রী নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এমনিতেই নৌপথে নাব্য হ্রাস পেয়েছে। অনেক নদীতে জেগে উঠেছে বিশাল চর। নৈশকালীন লঞ্চ চলাচলে নাব্য সঙ্কট নিরাপদ নৌ-চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক লঞ্চে পর্যাপ্ত সার্চলাইট ও নদীতে দিকনির্দেশক সিগন্যাল না থাকায় লঞ্চ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। জীবনরক্ষার জন্য লঞ্চে তেমন কোন সরঞ্জাম না থাকাটাও অধিক প্রাণহানির একটি বড় কারণ। তদুপরি যাত্রীদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণেও নৌ-দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নামানোর তোড়জোড় চলছে। বুড়িগঙ্গার তীরে প্রায় ২৭টি ডকইয়ার্ডে পুরোদমে চলছে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ মেরামত। পুরনো লঞ্চগুলো ঈদে যাত্রী বহনে ব্যবহার করা হবে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই না করার কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশ মানা হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। তাই একরকম ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ যায়। সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর কোন কোনটি মাঝনদীতে যাত্রী ওঠায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চড়ে চলন্ত লঞ্চে যাত্রী হয়ে ওঠার প্রবণতা কম নয়। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে। কর্তৃপক্ষ প্রতিবারের মতো এবারও ঘাটে ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করবে। যাত্রী ওঠানামা তদারকি করবেন তারা। ঈদে মানুষ যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন মেলে কম। কর্তৃপক্ষ ১১টি নতুন নৌযান চালু করেছে। অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে এসবে। ফলে এবার যাত্রীরা নিরাপদে নির্বিঘেœ আরামে যেতে পারবে বলে আশা করা যায়। ঈদের ছুটিতে নৌপথে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে-নির্বিঘেœ ঘরে ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়Ñএটাই প্রত্যাশা।
×