ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধারা এখনও অবহেলিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধারা এখনও অবহেলিত

আমাদের মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ভূখ-, বাংলাদেশের সবুজ জমিনের ওপর রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা, বিদেশের আসনে বাংলাদেশের মানমর্যাদার অহঙ্কার, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারী সামরিক-বেসামরিক আমলা-কর্মচারী তথা দেশের মূল অবকাঠামোসহ সকল কিছুরই অস্তিত্ব ও ভিত্তি রচিত হয়েছে ’৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আপোসহীন বীরত্বপূর্ণ অবদানে। অথচ সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিনের ‘রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন’ সংবাদটির শিরোনামের ওপর দৃষ্টিগোচর হলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর সংবাদটি পড়লে মর্মাহত ও ব্যথিত হই। ’৭১-এর একজন সহযোদ্ধার মৃত্যুর সংবাদ হলে তা আরও নিজকে করে নির্বাক, নিথর ও ভারাক্রান্ত। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংবাদপত্রে যখন পড়িÑ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারী উর্ধতন কর্মকতার গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ায় আত্মহত্যার কথা, তাদের নৃশংসভাবে হত্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নিজ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ ও সহায় সম্পদ লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধার বা শহীদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানদের নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম, মুক্তিযোদ্ধার কন্যা অথবা অসহায় পরিবারের নারীর ওপর সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির রাজাকার অথবা তাদের পোষ্যপুত্র, বিষাক্ত বংশধরদের গু-া-বদমাইশ কর্তৃক অপহরণ বা নির্যাতন করে তখন মনটি হয়ে ওঠে ব্যথিত। আরও কষ্ট হয় যখন দেখি ওই সকল সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না। সংবাদপত্রে যখন দেখতে পাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সহায়-সম্বলহীন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেশী কারও দয়ার ওপর ভরসা করে অথবা সরকারের অব্যবহৃত মহাসড়ক, রেললাইন অথবা কোন বস্তির এক কোণে কোনরকম একচালা একটি মাথা গোঁজার ঘুপটি তৈরি করে বসবাস করছেন কিংবা বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ একজন ’৭১-এর বীর লড়াকু যোদ্ধা রিক্সা, ভ্যান অথবা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা অর্জন করে। এ ধরনের হৃদয়বিদারক সংবাদ ও পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির ওপর দৃষ্টি পড়লে আমার হৃদয়ে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থা ও অমানবিক জীবন লড়াইয়ের সংবাদ কি দেশের অর্থশালী, সরকারী প্রশাসন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কোন দানশীল সচেতন মানুষ বা নাগরিকের হৃদয়ে মানবিক কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না? অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আলবদর, আলশামস ও জামায়াতের পাকিস্তানী দালাল ও অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী, ’৭১-এর নরঘাতক খুনীদের স্বাস্থ্য, চেহারা এমন নাদুসনুদুস পোষ্য কুকুরের মতো তরতাজা থাকে কেন? এর সঠিক জবাব খুব সহজেই মনের অজান্তে বের হয়ে আসে। জবাবটি হলো, ১৯৭১ সালে এসব রাজাকার, আলবদর, আলশামস, যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর ও দালালরা ’৭১-এর নয়টি মাস পাকবাহিনীর সঙ্গে একত্রে শহর, গ্রাম-গঞ্জে অগ্নিসংযোগ করে জনগণের টাকা-পয়সা, সোনাদানা লুটপাট করে বিশাল অর্থ ও সম্পদের মালিক বনে যায়। স্বাধীনতার পর এরা কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণকারী জিয়া ও এরশাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রদত্ত আরও আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দ্বারা বলীয়ান হয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি, রফতানি, ব্যাংক, টেলিভিশন, বীমা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসা-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। স্বাধীনতাবিরোধী গোত্রের এই সকল নরপিশাচ, ঘাতক সদস্যরা অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে বিলাসবহুল নামী-দামী গাড়ি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়ি ও গাড়িতে চলাফেরা এবং বসবাস করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে এসে সরকার প্রধানের দায়িত্ব লাভের পর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কল্যাণার্থে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক-দালালরা ক্ষমতা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সকল সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যত আশা-ভরসা, এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যায়। ১৯৯৬ সালে, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল ও শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা, শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বলবত ছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী দল ও শাসকগোষ্ঠী, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কর্মসূচী ও সুযোগ-সুবিধার কাটছাঁট করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের অনিশ্চিত এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে নিক্ষিপ্ত করে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের ভাতা বৃদ্ধিকরণসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচী ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কতিপয় পদক্ষেপ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এত প্রচেষ্টার পরও শোনা যায় এখনও মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কোন সদস্য অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনে ভর্তি হলে তাদের ভাগ্যে জোটে হাসপাতালের করিডর অথবা বারান্দা। এই বীর সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিছানা, কেবিন অথবা সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল/ ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক, ডাক্তার কেউই সদিচ্ছায় এগিয়ে এসে তাদের মহান কর্তব্যটুকু পালন করেন না। একমাত্র মন্ত্রী, সচিব উচ্চ পর্যায়ের কারও দ্বারা নির্দেশিত হলে তখন তাদের বোধগম্য হয় কিছুটা সদাশয় হতে। ভাবতে অবাক লাগে, ’৭১-এর একজন বীরযোদ্ধা স্বাধীন দেশের সরকারী হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তাচ্ছিল্য, অবহেলা ও অসম্মানের মধ্যে কোনভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করে গৃহে ফিরে যান। ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নামমাত্র একটি কেবিন বা বেড রাখা হয়, যার গুণাগুণ বা ধরন কোনভাবেই মানসম্মত তো নয়ই, বরং ওই সকল নামমাত্র কেবিন বা বেডে মফস্বল বা ঢাকায় বসবাসরত কোন মুক্তিযোদ্ধা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতে চাইলে ২/৩ সপ্তাহ অপেক্ষা করে পরিচালক ও রেজিস্ট্রার সাহেবকে তোষামোদ করেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালগুলোর কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া ভাগ্যে জোটে না। কোনভাবে ভর্তি হতে পারলেও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র খাওয়া-দাওয়া নিজেদের পয়সায় বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয় এবং হাসপাতালকে সরবরাহ করতে হয়। এ অমানবিক ব্যবস্থা, আচরণ কোনভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য কাক্সিক্ষত নয়। সরকারের স্বাস্থ্য বাজেট থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত, প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসা, ওষুধপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও থাকা খাওয়ার ব্যয় ভার বহন করা উচিত। মফস্বল শহর, গ্রামগঞ্জ হতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা বা সরকারী ও ব্যক্তিগত কোন কাজে ঢাকায় সফর করে থাকেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের এই সময় ঢাকায় থাকার মতো হয়তো বা কোন আপনজন অথবা সুবিধা-সুযোগ থাকে না। এই বিশেষ প্রয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য ঢাকায় একটি ‘মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় গেস্ট হাউস’ নির্মাণ করা উচিত, যেখানে তাদের নিরাপত্তা, খাওয়া-দাওয়া থাকার, স্বল্পমূল্যে ব্যবস্থা থাকতে হবে। ’৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক সরকারীভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সরকার প্রদত্ত মাত্র পাঁচ হাজার টাকার সম্মানী ভাতার ওপর নির্ভরশীল যা এই দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির বাজারে খুবই নগণ্য। এই সম্মানী পাঁচ হাজার টাকার দ্বারা একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার-পরিজনের খাওয়া-দাওয়া, ভরণপোষণ, চিকিৎসা ওষুধপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো একটি অসহনীয় কঠিন বিষয়। সদ্য ঘোষিত রাষ্ট্রীয় বাজেট পেশ করার আগে আমরা বুকভরা আশা নিয়ে প্রহর গুনছিলাম যে হয়তো অর্থমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান সম্মানী পাঁচহাজার টাকার ভাতা বৃদ্ধি করে একটা সন্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাজেটোত্তর সংবাদে জানা গেল, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যে সকল মুক্তিযোদ্ধা ৬৫ বৎসর বয়স অতিক্রম করেছেন তারাই এখন থেকে মাসিক দশ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাবেন। সংবাদটি কোনভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুখবর নয়। দশ হাজার টাকার ভাতাপ্রাপ্ত হতে ৬৫ বৎসর বয়সে উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই দেশের অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইহকাল ত্যাগ করতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধারা যদি আরাম-আয়েশে, সুখে-শান্তিতে বসবাস করতেন, তা হলে হয়তোবা অর্থমন্ত্রী সাহেবের হিসাব-নিকাশের ৬৫ বৎসর বয়সে পদার্পণ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর ক্ষমতায় আসীন জিয়া-এরশাদ সামরিক জান্তা সরকার ও তাদের সৃষ্ট ক্যান্টনমেন্টকেন্দ্রিক তথা কথিত বেসামরিক সরকারদ্বয় বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতাকারী ও পাক সামরিক হানাদার ঘাতক বাহিনীর সহায়ক দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর গণধিকৃত নেতা জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নিয়োগ করে তাদের গাড়িতে-বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহারসহ রাষ্ট্রীয় সকল ভিভিআইপি/ভিআইপি সুযোগ সুবিধা প্রদান করে এই সকল সুযোগ সুবিধাকে নির্লজ্জভাবে অপব্যবহার করেছে। জিয়া-এরশাদ কর্তৃক ’৭১-এর রাজাকার, দালাল, আলবদর, খুনী, নরঘাতক নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ভিআইপি সুযোগ-সুবিধার প্রাপ্য ভিআইপি কার্ড ব্যবহার করে দেশের বিমানবন্দর, নৌবন্দর, বঙ্গভবন, ফেরি নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারী রাষ্ট্রীয় স্থানসমূহ অপবিত্র ও কলুষিত করেছে। দেশের শ্রেষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উক্ত ভিআইপি মর্যাদা ফেরত প্রদান করলে তা হবে যথাযথ, যুক্তিসঙ্গত ও মর্যাদাপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী, কুখ্যাত গণধিকৃত দালাল, রাজাকার, আলবদর গং যদি রাষ্ট্রের ভিআইপি হিসেবে দেশের বিমান, নৌবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে তাকে অপবিত্র ও কলুষিত করে যায়, তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেন বঞ্চিত করা হবে- দেশের সকল স্থাপনায় তাদের বীর পদচারণার মাধ্যমে সেগুলোকে পুনরায় পাপমুক্ত ও পবিত্র করণে দোষের কি? দেশের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের যে কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনাবলী সংবলিত প্রজ্ঞাপণ জারি করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যের প্রতি যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা আক্রমণকে রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ বা হামলা হিসেবে বিবেচনা করে তার প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা বা নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নির্দেশাবলী জারি করা দরকার। বাংলাদেশে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর-বাড়িতে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা ব্যবহার করার সুযোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া উচিত। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের গাড়ি ও বাড়িতে জাতীয় দিবসে পতাকা ও সংসদের পতাকা ব্যবহার করার স্থায়ী সুযোগ বা অধিকার সংবলিত আইন ঘোষণা করা উচিত। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী সভা বা আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রধানসহ দু’একজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশ সফরে আগত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ঢাকা বিমানবন্দরের অভ্যর্থনা ও বিদায়ী অনুষ্ঠানে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে ঢাকা বিমানবন্দরে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা করা উচিত। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নেত্বত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিভাবক, সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষী। তিনি উল্লেখিত দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরি সন্তানরা দৃঢ়ভাবে আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা
×