ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে থাকার দাবি পূরণ না হলে আত্মহত্যার হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশে থাকার দাবি পূরণ না হলে আত্মহত্যার হুমকি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পরিবারকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট আবেদন ফরমে স্বাক্ষর করার পর পঞ্চগড়ের এক ছিটবাসী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এদেশেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গণনাকারী প্রতিনিধিদল তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় তিনি আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনাটি ঘটে বোদা উপজেলার নাজিরগঞ্জ দইখাতা ছিটমহলে। ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহলের যৌথ গণনার পঞ্চম দিন শুক্রবার নীলফামারীর ডিমলার ছিটমহলের তিন পরিবারের ১৪ সদস্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ২৮ নম্বর বড় খানকিবাড়ী খারিজা ছিটমহলে এক পরিবারের চার সদস্য ও ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ীর দুই পরিবারের ১০ সদস্য ভারতে যেতে নিবন্ধন করেন। কুড়িগ্রামে জনগণনার পঞ্চম দিনে ভারতের নাগরিক হতে নিবন্ধন করেছে পাঁচ পরিবারের ৩২ সদস্য। এদিকে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের ভেতরে থাকা ১৬২ ছিটমহলে পহেলা আগস্ট পর্যন্ত জমি কেনাবেচার ওপর উভয় দেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে ছিটমহল বিনিময় চূড়ান্ত হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে জমি বিক্রি করতে পারবে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। জানা যায়, গত ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া জনগণনার প্রথম দিনেই পঞ্চগড়ের নাজিরগঞ্জ দইখাতা ছিটমহল বাসিন্দা মানিক চন্দ্র বর্মণ (২৩) তার স্ত্রী ময়না রাণী (২০) ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার নির্দিষ্ট আবেদন ফরমে স্বাক্ষর করেন ও ছবি তোলেন। মানিকের বাবা-মা ও স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে এদেশে থাকতে চাইলে মানিক আবেদন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কোন সুযোগ নেই বলে গণনাকারী প্রতিনিধিদল তাকে জানিয়ে দেয়। গণনাকারী প্রতিনিধিদলের এমন কথা শুনে হতাশ হয়ে পড়েন মানিক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভারতে যেতে বাধ্য করা হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। এ ব্যাপারে মানিকের বড়ভাই দীনেশ চন্দ্র বর্মণ জানান, আমরা কেউই ভারতে যেতে চাই না, এদেশেই জন্ম, তাই এদেশেই থাকতে চাই। আমার ছোটভাই লোকের প্ররোচনায় পরিবারের কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে একাই ভারতে যাওয়ার আবেদনে স্বাক্ষর করে। এখন তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের অমতে সেও আর ভারতে যেতে চায় না। নাজিরগঞ্জ-দইখাতা ছিটমহল নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পরিবারটির আর কেউই ভারতে যেতে চাইছেন না। ছিটমহল বিনিময় সমন্বকারী কমিটির পঞ্চগড়-নীলফামারী অংশের সভাপতি মফিজার রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, পরিবারটিকে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার আবেদন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটি করলে তাদের পূর্বের করা ভারতে যাওয়ার আবেদনটি বাতিল করে দেয়া হবে। নীলফামারী ॥ ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের কোন জমি কেউ কেনাবেচা করতে পারবেন না। তবে পহেলা আগস্ট থেকে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত স্ব-স্ব স্থানীয় ডিসি/ডিএমেএর অনুমতিক্রমে জমি বিক্রি করা যাবে। অপরদিকে আরেকটি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ভারতের/বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তবে তাকে ১ আগস্ট-২০১৫ হতে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বাংলাদেশ/ভারতের মূল ভূখ-ে যেতে হবে। এই সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্য এক দেশে থেকে অন্য দেশে যেতে ইচ্ছুক বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহলের যৌথ গণনার পঞ্চম দিন শুক্রবার নীলফামারীর ডিমলার ছিটমহলের তিন পরিবারের ১৪ সদস্য নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে ২৮ নম্বর বড় খানকিবাড়ী খারিজা ছিটমহলে এক পরিবারের চার সদস্য ও ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ীর দুই পরিবারের ১০ সদস্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট জনগণনা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে। শুক্রবার সকালে ছিটমহলের জনগণনার ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, জনগণনায় ছিটমহলবাসীর কাছে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তের বিশেষ বিজ্ঞপ্তির সাতটি পয়েন্ট হাতে হাতে দেয়া হয়। যাতে তারা নিজেদের পছন্দ মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে যৌথ জনগণনায় অংশ নিতে পারেন। কুড়িগ্রাম ॥ জেলার ১২ ছিটমহলে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দলের গণনার কাজ শুক্রবার পঞ্চম দিন পাঁচ পরিবারের ৩২ সদস্য ভারতীয় নাগরিক হতে নিবন্ধন করেছে। এ নিয়ে পাঁচ দিনে ১২ পরিবারে ৮৩ সদস্য ভারতীয় নাগরিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করল। জনগণনার পঞ্চম দিনে ১৪৩ পরিবারের মধ্যে ৭০১ সদস্যের ফরম পূরণ করা হয়। এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলায় ৬৯৩ জন এবং ভুরুঙ্গামারীতে আটজন।
×