ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

ঈদের আগেই ঈদের আমেজ, উৎসব প্রস্তুতি সর্বত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জুলাই ২০১৫

ঈদের আগেই ঈদের আমেজ, উৎসব প্রস্তুতি সর্বত্র

মোরসালিন মিজান চোখের সামনে বদলে গেছে চিত্রটা। রাজধানী শহর ঢাকাজুড়ে এখন উৎসব প্রস্তুতি। দুঃখ ব্যথা অভাব সংসারের টানাপোড়েন ছিল। আছে। তবু ঈদে মানুষ একটু হাসতে চায়। সেই হাসিরাশি আনন্দের ঈদ দরজায় কড়া নাড়ছে। আজ শনিবার ২৩ রমজান। আর মাত্র ক’দিন পর ঈদ। সঙ্গত কারণেই সর্বত্র ঈদের আমেজ। বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ঈদ প্রস্তুতি। প্রথম রোজা থেকে চলছিল কেনাকাটা। আর এখন তো কোন মার্কেটে পা ফেলার জায়গা পাওয়া মুশকিল। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দৃশ্যটা বিশেষ চোখে পড়েছে। এদিন সকাল থেকেই ছিল বৃষ্টি। যে সে বৃষ্টি নয়। ভারি বর্ষণ। কখনও সখনও হালকা ছিল বটে। থামেনি। থামেনি বললেও চলে। এ অবস্থায় দুর্ভোগ বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অথচ দুর্ভোগ নিয়ে ভাবতে তেমন দেখা যায়নি কাউকে। বরং বিপুল আগ্রহে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছেন ছেলে বুড়ো সকলে। বিভিন্ন মার্কেট শপিংমল ঘুরে কেনাকাটা করেছেন। এদিন দুপুর ২টার দিকে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা মাথায় নিয়ে শপিংমলে প্রবেশ করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পেছনের রাস্তায় হাঁটু পানি। ময়লা জল ঠেলেই ভেতরে প্রবেশ করছিলেন ক্রেতা। না বিরক্তি নেই। বরং হাসিমুখ। প্রবেশ পথে ভিড়। কেউ গায়ে মাখছেন না। লিফটে ঠাসাঠাসি। কী আসে যায় তাতে? দোকানগুলোতে কোন রকমে ঢোকা যায়। তাতেই সন্তুষ্ট ক্রেতা। পছন্দের পোশাক পণ্য বেছে নিচ্ছেন। সোহেল ও তামান্না দম্পতি এসেছিলেন মিরপুর থেকে। কথা প্রসঙ্গে সোহেল বললেন, অনেক কষ্ট করে বসুন্ধরা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি। অন্য সময় হলে এই বৃষ্টি আর যানজটের মধ্যে কিছুতেই ঘর থেকে বের হতাম না। কেউ বের করতে পারত না। তবে ঈদের ব্যাপারটা আলাদা। নিজের জন্য পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দ করে জামাকাপড় কিনব। এই কাজে ক্লান্তির চেয়ে সুখ বেশি। দিবা ও রাইসা দুই বোন। এসেছিলেন বাবার সঙ্গে। বাসাবো থেকে এসেছিলেন তাঁরা। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল খুব আনন্দে আছেন সবাই। প্রসঙ্গ তুলতেই রাইসা বললেন, ঈদের অল্পদিন বাকি। তাছাড়া শুক্রবার। আগেই অনুমান করেছিলাম ভিড় বেশি হবে। কিন্তু আব্বুর তো শুক্রবারে ছুটি। তাই এদিনটিকেই শপিংয়ের জন্য বেছে নিতে হলো। মানুষের ভিড় দেখে কেনাকাটায় উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরেও দেখা গেছে এমন চিত্র। আর নিউমার্কেট, গাউসিয়ার মতো মার্কেটগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য। সবখানেই মনের আনন্দে কেনাকাটা করছেন রাজধানীবাসী। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও বোঝা যায়, ভিড়টা ঠিক আগের মতো নেই। অনেক বেড়েছে। যেসব রাস্তার ধারে সব সময় দোকান বসে সেসব রাস্তায় এখন বিক্রি বেশি। তারও বেশি আনন্দ। উৎসবের আমেজ। গত কয়েকদিন গুলিস্তান এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এসব দোকানে অপেক্ষাকৃত কম দামে সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষ কেনাকাটা করছেন। তাঁদের অল্প আয় কিংবা আয় বলতে কিছু হয় না। এরপরও ঈদ যে! কেনাকাটা করছেন। ফুটপাথজুড়েও তাই ঈদের রেশ। ঈদ কার্ডের দোকানগুলোতে ঢুকলে তো মনে হয় ঈদ শুরু হয়ে গেছে! অদ্ভুত সুন্দর সব কার্ড। গায়ে যতœ করে লেখাÑ ঈদ মোবারক। বাংলা ইংরেজী এমনকি আরবীতে লেখা হয়েছে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা। পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টস, আইডিয়াল প্রোডাক্টসসহ বেশ কিছু শোরুম ঘুরে দেখা যায়, প্রিয়জনের জন্য ঈদ কার্ড কেনায় ব্যস্ত মানুষ। তবে বেশি ভিড় বিদেশী গিফট শপগুলোতে। হাতিরপুলের আর্চিস গ্যালারির একটি শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টি নন্দন সব ঈদ কার্ড থরে থরে সাজানো। এখানে ওখানে বড় করে লেখাÑ ঈদ মোবারক। ঈদে রাজধানী ঢাকার মোট জনসংখ্যার বড় অংশটি চলে যায় গ্রামের বাড়ি। সেখানে আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে ঈদ করেন তাঁরা। সে প্রস্তুতিটাও চলছে এখন। বাস ও ট্রেনের টিকেট সংগ্রহে গলদঘর্ম সবাই। বিশেষ করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শ্রোতের মতো মানুষ। উপর থেকে দেখলে শুধু মাথা ছাড়া কিছু দেখা যায় না। বাড়ি ফেরার এই তাড়া দেখে আরও একবার বোঝা হয়, ঈদ কত আনন্দের! যে কোন মূল্যে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। এ কারণে এমনকি ভোর রাত থেকে টিকেট কাউন্টারের সামনে লাইন দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। অগ্রিম টিকেট চাই তাঁদের। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন দেয়া হয় ১৩ জুলাইয়ের টিকেট। শুক্রবার ছিল ১৪ জুলাইয়ের টিকেট সংগ্রহের যুদ্ধ। সত্যি যেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ যারা জয় করছিল তাদের আনন্দ সত্যি দেখার মতো। বিশ্বকাপ ট্রফির মতো করে হাতে টিকেট ধরে দেখাচ্ছিলেন বিজয়ীরা। আব্দুল কাদের নামের এক যাত্রী জানালেন, সেহরী খেয়ে তিনি কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সকালে কাউন্টার খোলার ১ ঘণ্টা পর হাতে টিকেট পেয়েছেন। এই যে কষ্ট করে বাড়ি ফেরা, কেন? জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। বলেন, এটা কষ্টের হবে কেন? আনন্দের শুরু বলতে পারেন! কাজে কর্মে যেমন, মানুষের ভাবনায়ও এখন ঈদ শুধু। শুধু ঈদ। যে আলোচনাই হোক, ঘুরে ফিরে আসছে ঈদের প্রসঙ্গ। ঈদ এমনই এক উৎসব!
×