ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক;###;কিছু লাশ গায়েবের অভিযোগ;###;বিহারী কলোনিতে কান্নার রোল;###;যাকাতদাতা শামীমসহ আটক ৮;###;ঈদের খুশি মুহূর্তেই ম্লান;###;তিন সদস্যের আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি

ময়মনসিংহে যাকাত আনতে গিয়ে প্রাণ হারাল ২৭, আহত অর্ধশত ॥ মর্মান্তিক মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১১ জুলাই ২০১৫

ময়মনসিংহে যাকাত আনতে গিয়ে প্রাণ হারাল ২৭, আহত অর্ধশত ॥ মর্মান্তিক মৃত্যু

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ শুক্রবার ভোরে শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক মোহাম্মদ শামীমের বাসায় যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে মারা গেছে নারী ও শিশুসহ ২৭ জন। আহত হয়েছে আরও অর্ধশত। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যাকাতদাতার অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণেই খুশির ঈদের আগে ঘটেছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সেহ্রির পর থেকে কয়েকশ’ দুস্থ নারী শিশু ও পুরুষ অবাঙালী (বিহারী) ব্যবসায়ী শামীমের বাসার সামনে অপেক্ষার একপর্যায়ে গেট খুলে দিলে একসঙ্গে ভেতরে ঢোকার সময় হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হয়ে ঘটে এই প্রাণহানির ঘটনা। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ময়মনসিংহ শহরে শুক্রবার সকাল থেকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে মূহ্যমান অনেকে যাকাতদাতার এমন অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তার শাস্তি দাবি করেছেন। অভিযোগ মাইকিং করে ব্যাপক প্রচারসহ যাকাতের কাপড় নিতে কার্ড বিলি বণ্টনের কারণেই এত বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁর বাসার সামনে ভিড় জমায়। যাকাতের কাপড় বিতরণের বিষয়টি পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হলে হয়ত বা এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জনকণ্ঠকে জানান, অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না যাকাতদাতা শামীম। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহাম্মদ আল মামুন জানান, অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনায় বাসার মালিক শামীম ও তাঁর পুত্র হেদায়েতসহ আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা খাতুনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের আলাদা দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর শুনে শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেককে আরও ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দানের কথা ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছে তার পারিবারিক সূত্র। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর শুক্রবার দুপুরের দিকে পুলিশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। এদের মধ্যে ১৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে। বাকিদের লাশ তাদের বাসাবাড়ি থেকেই পুলিশ বুঝিয়ে দেয়। পরে তাদের দাফন করা হয়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার ভোরের দিকে হাসপাতালে যেসব হতাহতকে নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের অনেকের লাশ স্বজন দাবি করে কে বা কারা সিএনজি অটোরিক্সায় নিয়ে গেছে। ফলে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। প্রচার রয়েছে দুর্ঘটনায় ৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। নিহত যারা ॥ যাকাত ট্র্যাজেডির এই ঘটনায় ময়মনসিংহ পুলিশ ২৪ জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছে। এরা হচ্ছে শহরের পাটগুদাম বিহারী কলোনির বাসিন্দা সাজু বেগম ওরফে সামু (৬০), সামুর মেয়ে সখিনা (৪০), নাতি লামিয়া (৩), সিদ্দিক মিয়া (১২), হাজেরা বেগম (৭০), থানার ঘাট বাস্তুহারা বস্তির বাসিন্দা খোদেজা বেগম (৫০), শহরের বুড়াপীর মাজারসংলগ্ন গোবিন্দ গাঙ্গুলি রোডের বসাকপাড়ার মেঘনা বসাক (৩৫), চরপাড়া এলাকার হামিদা বেগম (৪৫), কালীবাড়ি রোডের সমলা বেগম ওরফে আঙ্গুরি (৪০), ফজিলাতুননেছা (৭০), শহরের আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকার ফাতেমা বেগম (৩৫), ফাতেমা বেওয়া (৬০), নাজমা আক্তার (৬৫), আকুয়া দরগা রোডের জহুরা খাতুন (৫২), রহিমা বেগম (৫৫), আকুয়া শিকদার বাড়ি এলাকার মমতাজ বেগম খুকু (৪০), খাকডহর ঢোলাদিয়া এলাকার রুবিয়া আক্তার (১২), কাঠগোলা এলাকার রেজিয়া আক্তার (৪০), ধোপাখলা মসিজদসংলগ্ন এলাকার জামেলা বেওয়া (৫৫), ধোপাখলা দত্তবাড়ির রীনা রানী দে (৬০), সুতারা রানী সরকার (৪০), ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের সাহারন বেগম (৪০), তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মরিয়ম বেগম (৫৫) ও চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের সুফিয়া খাতুন (৭৫)। এছাড়া রয়েছে বৃষ্টি রানী (১২) ও খোদেজা বেগম (৫৫)। এই ২৬ জনের বাইরে চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের রেণু আরা (৫০) নামে আরও একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর পুলিশ এসব লাশ শুক্রবার দুপুরের দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। হতাহতের কারণ ॥ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অবাঙালী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শামীম প্রতিবছরই রমজানে ময়মনসিংহ পৌরসভা কার্যালয়সংলগ্ন শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের বাসা থেকে যাকাতের কাপড় বিতরণ করেন। শুক্রবার যাকাতের কাপড় বিতরণের জন্য মাইকিংসহ নির্ধারিত দুস্থদের মধ্যে কার্ড বিলি বণ্টন করা হয়। এসব কারণে অন্যবারের তুলনায় এবারের প্রচার বেশি থাকায় বৃহস্পতিবার তারাবির নামাজের পর থেকেই তার বাসার গেটের সামনে লোকজন জড়ো হতে থাকে। শুক্রবার সেহ্রির পর এই জমায়েত আরও বেড়ে যায়। শহরের পাটগুদাম বিহারী কলোনি, চরপাড়া, ধোপাখলা মোড়, থানারঘাট বস্তি, আকুয়া মোড়লপাড়াসহ ময়মনসিংহ সদরের চরঈশ্বরদিয়া এবং ত্রিশাল ও তারাকান্দা উপজেলা থেকে কাপড় নিতে ভিড় জমায় নানা বয়সী নারী ও পুরুষসহ বেশ কিছু শিশু। রাতে বাসার গেট বন্ধ থাকায় এসব মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে রাস্তায়। সরেজমিন দেখা গেছে বাসার সামনের রাস্তাটি বাসার আঙিনা থেকে বেশ উঁচু। সেহ্রি শেষে ফজরের নামাজের পর বাসার গেট খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ রাস্তা থেকে বাসার নিচু আঙিনায় ধপাস করে পড়ে গেলে তাদের পা দিয়ে মাড়িয়ে যায় কয়েক শ’ মানুষ। এ সময় ঘটে এই হতাহতের ঘটনা। ঘটনার পর শুক্রবার সকালে বাসার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাসার সামনে পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাসার গেটের সামনে ও আঙিনায় অসংখ্য ছেঁড়া স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। তবে ভোররাতের এই ঘটনার ব্যাপারে আশপাশের লোকজন অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ সময় তাদের অনেকে ছিলেন ঘুমিয়ে। যে কারণে এত বড় ঘটনা তারা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেনি। প্রত্যক্ষর্দীরা যা বলেন ॥ শহরে যাকাত ট্র্যাজেডির এই ঘটনায় অনেকের সঙ্গে প্রাণ গেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের চিতই পিঠা বিক্রেতা রেণু আরার (৫০)। প্রতিবন্ধী স্বামী লাল মিয়া, পুত্র ও পুত্রবধূসহ পাড়াপড়শি স্বজনদের বাধা-নিষেধ অমান্য করে একখানা কাপড়ের জন্য অন্যদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতেই এই বাসার সামনে ভিড় জমান রেণু। কাপড়ের বদলে বাসায় ফিরেছেন তিনি লাশ হয়ে। রেণুর পুত্রবধূ মাহমুদা (৩০) জানান, বৃহস্পতিবার ইফতারের পর শহরের ধোপাখলা এলাকা থেকে নিকটাত্মীয় মরিয়ম, রীনা ও মনোয়ারাসহ সাতজনকে নিয়ে অতুল চক্রবর্তী রোডের এই বাসার গেটে আসেন। মরিয়ম জানান, ভিড় ঠেলে গেট পার হওয়ার সময় নিচে পড়ে পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান রেণু। স্বামীসহ রেণুর ৩ পুত্র ও ২ মেয়ে রয়েছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে প্রতিদিন এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন আল আমিন। তিনি জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে হতাহতরা হাসপাতালের দিকে আসতে থাকে। এদের বেশিরভাগই তখন আর বেঁচে নেই। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে এ সময় স্বজন পরিচয়ে অনেকের লাশ নিয়ে যেতে দেখছেন তিনি। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাসার মালিকের লোকজনই স্বজন সেজে কৌশলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে অটোরিক্সা, সিএনজি ও রিক্সায় করে লাশ নিয়ে গেছে। নিহতের এই সংখ্যা ত্রিশের কম নয় বলে দাবি এই এ্যাম্বুলেন্স চালকের। শোকস্তব্ধ বিহারী কলোনি ॥ শহরের পাটগুদাম বিহারী কলোনিতে থাকেন কয়েক শ’ পরিবার। ছোট ছোট ঝুপরি ঘরে অমানবিক বাস এসব পরিবারের অনেক দুস্থ নারী ও পুরুষের। বিহারী কলোনির গিঞ্জি কয়েকঘর এগিয়ে সামনে যেতেই ছোট্ট ঝুপরি ঘরে থাকতেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মাতা সাজু বেগম ওরফে সামু, কন্যা সখিনা ও নাতি লামিয়াকে নিয়ে। যাকাতের কার্ড পেয়ে শুক্রবার এই কলোনির অনেকের সঙ্গে দুই বছরের শিশু নাতি আর মেয়েকে নিয়ে ভিড় জমান অতুল চক্রবর্তী রোডের বিত্তশালী শামীমের বাসার গেটে। প্রচ- ভিড়ের সময় অনেকের সঙ্গে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান একই পরিবারে এ ৩ জন। ফলে খুশির ঈদে রঙিন শাড়ি কাপড়ের বদলে শুক্রবার একই পরিবারের এই ৩ সদস্যকে মোড়ানো হয়েছে সাদা কাফনের কাপড়ে। একই পরিবারের এই ৩ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিহারী কলোনিজুড়ে চলছে শোকের মাতম। এ রকম মাতম দেখা গেছে থানারঘাট বাস্তুহারা বস্তি ও আকুয়া মোড়লপাড়াসহ অনেক এলাকাতে। তদন্ত কমিটি ও আর্থিক সহায়তা ॥ ঘটনা তদন্তে পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ১টি ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা খাতুনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট আলাদা ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জনকণ্ঠকে জানান, এই ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে সরকারের পক্ষ থেকে দাফন কাফনের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন বলে জানান ধর্মমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বুলবুল আহমদ। আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা ॥ মর্মান্তিক এই ঘটনায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বাসার মালিক শামীম, পুত্র হেদায়েত, ম্যানেজার ও কর্মচারীসহ ৮ জনকে আসামি করে থানায় শুক্রবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে আটক আটজনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে থানা পুলিশ। আসামিদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শুক্রবার মামলার প্রধান আসামি শামীম অসুস্থ বোধ করলে তাকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।
×