ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিক্ষোভের মুখে মন্ত্রীর ঘোষণা

মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যার ঘটনায় কাউকে ছাড় নয়

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১০ জুলাই ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যার ঘটনায় কাউকে ছাড় নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের পর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার বিষয়টি অতি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন এবং আগামী রবিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা রবিবারের আলোচনা শেষে সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচীর ঘোষণা করেছেন। মন্ত্রী বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মিজানুর রহমানকে দিয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যেই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর বের করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী বলেন, ঘটনার সঙ্গে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালালের (বিচ্ছু জালাল) নেতৃত্বে সচিবের পদত্যাগ চেয়ে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ১৫-২০ জনের একটি পুলিশ দল উপস্থিত ছিল। পুলিশের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবের তদন্ত বাতিল করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে মিছিল করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী সিকদার বলেন, আমরা সচিবের চাকরিচ্যুতি চাই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিক্ষোভ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা পরিবহন পুল ভবনের পঞ্চম তলায় সচিবের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আইয়ুব খান নামের একজন ষাটোর্ধ মুক্তিযোদ্ধা ঢাকার একটি হোটেলে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি এক চিঠিতে লিখে যান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নান তাঁকে বাসা থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন। এই অপমান সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট কমান্ড ঘোষণার জন্য সচিবকে মাছ, শুঁটকি, টাকা দিয়েছেন বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তবে বুধবার সচিব এক প্রতিবাদপত্রে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জানিয়েছেন, আইয়ুব খানকে তিনি চেনেনই না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, আত্মহত্যাকারী মৃত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমিটি অনুমোদনের জন্য এসেছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু বিষয়টি আমাদের মন্ত্রণালয়ের নয়। কমিটি গঠনের দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের। কমান্ড কাউন্সিল আমাদের অধীনস্থ কোন সংস্থাও নয়। তারপরও সচিব বা অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে আগামী রবিবার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করব। এছাড়াও ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলে তাকে সাহায্য করার চিন্তা রয়েছে। আত্মহত্যার সঙ্গে সচিবের সম্পর্ক আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই একটি মামলা হয়েছে, যা সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় গঠিত এক সদস্যের কমিটিও বিষয়টি তদন্ত করছে। মৃত্যুর কারণ, সচিব বা কাউকে কোন ঘুষ প্রদান করা হয়েছে কি-না এবং লেখা চিঠিটি তাঁর হাতের লেখা কি-না তাও পরীক্ষা করবে সিআইডি। তবে তদন্তের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে বা ঘুষ গ্রহণ কিংবা এ বিষয়ে সচিব বা অন্য কোন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
×