ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

বেনারসি পল্লীতে ক্রেতার ভিড়, ভারতীয় শাড়ির কদর

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১০ জুলাই ২০১৫

বেনারসি পল্লীতে ক্রেতার ভিড়, ভারতীয় শাড়ির কদর

রহিম শেখ ॥ ভারত ও পাকিস্তানের জর্জেট, নেট ও ক্যাটালগ শাড়িতে সয়লাব ঈদের বাজার। তুলনামূলক দামে সস্তা এবং নিম্নমানের এ সব শাড়ির কাছে মার খাচ্ছে দেশী বেনারসি, কাতান আর জামদানি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে বেনারসি পল্লীতে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র। ভিনদেশী পোশাকের আধিক্য বাড়লেও এখনও নারীদের প্রথম পছন্দ দেশী শাড়ি। সেই শাড়ি কিনতেই ফ্যাশন সচেতন নারীরা আসছেন বেনারসি পল্লীতে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে গড়ে ওঠা আড়াই শতাধিক দোকানে বাহারি নক্সা ও রঙের শাড়ির পসরা। মিরপুর ১১ নম্বরে অবস্থিত হানিফ সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, আগে যেমন দূরের ক্রেতারা এখানে ছুটে আসতেন। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দূরের ক্রেতারা খুব একটা আসছেন না। বড় বড় রাস্তার ফুটপাত দখলের কারণে চেনা পথ এখন অনেকটাই অচেনা। ছোট-বড় অনেক গলি দখল হয়ে গেছে। যেন দেখার কেউ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরেজমিন মিরপুর বেনারসি পল্লী ঘুরে বেশির ভাগ ক্রেতাকে বিদেশী, বিশেষত ভারতীয় শাড়ি কিনতে দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন রকম কাতান, ক্যাটালগ শাড়ি, বুটিকস, সাউথ ইন্ডিয়ান ও শিফন বিক্রি হচ্ছে বেশি। ব্যবসায়ীদের মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছরও ভারতীয় শাড়ির কদর বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা দেশী বেনারসি শাড়ির জন্য মিরপুরের এ পল্লীতে এলেও হরেক রকমের ডিজাইন ও মনকাড়া রঙের কারণে শেষমেশ ভারতীয় শাড়িই কিনছেন। এর পাশাপাশি ভারতীয় শাড়ি প্রীতির আরেক কারণ হিসেবে মিরপুর বেনারসি পল্লীর আদি ব্যবসায়ী মোঃ জালালউদ্দিন জানালেন, ভারতীয় সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের কথা। তার মতে, এসবের কল্যাণে সে দেশের শাড়ির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তার মতে, ভারতীয় অভিনয় শিল্পীদের পোশাকে উপস্থাপিত ডিজাইনের প্রতি আকর্ষণ থেকেই ক্রেতারা ওইসব শাড়ির প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। গত দুই বছর ধরে তারা শাড়ি তৈরি করছেন সিরিয়ালের নায়িকাদের শাড়ির আদলে। এর পাশাপাশি চোরাই পথে দেশে ঢুকছে বেনারসিসহ হরেক রকম ভারতীয় শাড়ি। ভারতীয় এ শাড়িগুলো বিক্রির জন্য পল্লীর ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এখন অবলম্বন করছেন নতুন নতুন কৌশল। তারা দোকানের নামকরণ করছেন ভারতীয় চ্যানেল, সিরিয়াল এবং নায়িকাদের নামে। এমন একটি দোকানের নাম ‘স্টার প্লাস শাড়িজ’। দোকানটিতে ঢুকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় দোকান মালিক প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহ দেখান। বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর ধরে দেশী শাড়ি শিল্পকে ভারত থেকে আনা শাড়ি ও অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ঐতিহ্যবাহী বেনারসি পল্লীতে দেশী পোশাকের বাজার নষ্টে ষড়যন্ত্র করছে। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীদের ওই শ্রেণিটি ভিনদেশী ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। হানিফ সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হানিফ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরও ভারতীয় শাড়ির কদর বাড়ছে। কিন্তু ভিনদেশী শাড়ির ভিড়ে দেশীয় শাড়ি এখন মার খাচ্ছে। বেনারসি পল্লী ঘুরে দেখা যায়, এখানে যত শাড়ি তত নাম। একেকটি নাম মানে আলাদা নক্সা আর কাজে সুতার মুন্সিয়ানা।
×