ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিসবাহর স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৯ জুলাই ২০১৫

মিসবাহর স্বপ্ন পূরণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এটি তার ক্রিকেট জীবনের সেরা সাফল্য। পাল্লেকেলে টেস্ট জিতে ২-১এ সিরিজ পকেটে পোড়া পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! আনন্দে উদ্বেলিত পাক সেনাপতি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘সিরিজ উইন, এ ড্রিম কাম ট্রু।’ এটা স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে আনার সমান আনন্দের। হবেই বা না কেন? এক টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে কত অর্জনেই না ঝুড়ি ভরল ক্রিকেটের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ এ দলটির। গলে ১০ উইকেটের বড় জয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর কলম্বোয় হার ৭ উইকেটে। সিরিজ ফয়সালায় শেষ টেস্টটি তাই হয়ে উঠেছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। যেখানে এক পর্যায়ে তিন দিন পর্যন্ত পিছিয়ে থেকেও জয় ৭ উইকেটে, তাও চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের ইতিহাস বদলে দেয়া ৩৮২ রান করে! দীর্ঘ নয় বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জয়ের আনন্দ। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক লাফে তিন ধাপ ওপরে এসে তৃতীয় স্থান দখলÑ মিসবাহ তো আনন্দে আত্মহারা হবেনই। ‘শেষ তিন সিরিজে আমরা হেরেছিলাম। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এই সাফল্যের জন্য গত নয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সর্বোপরি পিছিয়ে পরেও শেষ পর্যন্ত পাল্লেকেলে টেস্ট জিতে যেভাবে সিরিজ জিতলাম, এটা সত্যি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। যা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই সেরা অর্জন।’ বলেন মিসবাহ। যারা প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়েছিল ২১৫ রানে, সেই তারাই ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৬ রান টপকে গেল ৭ উইকেট অক্ষত রেখে, গড়ল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০.৩১ ওভারে ৩ উইকেটে ৩৮২ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। অপরাজিত ১৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে নায়ক বনে যান অভিজ্ঞ ইউনুস খান। সেঞ্চুরি করেন তরুণ ওপেনার শান মাসুদও (১২৫)। অধিনায়ক মিসবাহ বলেন, ‘আমি এটাকে ফ্যাশনেবল ব্যাটিংই বলব। চতুর্থ ইনিংসে এত রান তাড়া করে জয়ের কথা অনেক দলই ভাবতে পারে না, অথচ সেই কাজটি আমরা অনায়াসে করেছি। এক্ষেত্রে বড় ক্রেডিট অবশ্য ইউনুসের। একেবারে সঠিক সময়ে সেরা ব্যাটিং করে বুুঝিয়ে দিয়েছে কেন সে পাকিস্তান ইতিহাসের অন্যতমসেরা ব্যাটসম্যান। যে কেন দলের জন্য ওর মতো ক্রিকেটার সত্যিকারের আশীর্বাদ। তরুণ মাসুদও চমৎকার খেলেছে।’ তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নেয়া স্বাগতিক পেসার ধাম্মিকা প্রসাদ তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। মিসবাহ বলেন, ‘সিরিজ জয়ে ইয়াসিরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৮ মাসের ক্যারিয়ারে বিশ্বের ভয়ঙ্কর বোলারে পরিণত হয়েছে সে। আমি ওর মাঝে লেগস্পিন কিংবদন্তিদের ছায়া দেখছি। সফরের শুরুতে প্রতিপক্ষ স্পিনার রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে আমরা টেনশনে ছিলাম। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের তিন অফস্পিনারকে সাবলীলভাবে মোকাবেলা করে জয় ছিনিয়ে আনাই মূলত সিরিজে আমাদের মানসিক ভিতটা তৈরি করে দেয়। এরপর হেরাথ তো বাদই পড়েছে, অথচ সেখানে ইয়াসির আরও বেশি করে জ্বলে উঠেছে।’ সিরিজ জুড়ে তরুণরাও যোগ্য সহায়তা দেয়ায় সন্তষ্ট মিসবাহ। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইয়াসির কি করেছে, সেটি সবাই দেখেছে। পাশাপাশি সিরিজ জুড়ে ভাল ব্যাটিং করেছে সরফরাজ আহমেদ। ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ হাফিজ ছিটকে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে বোলিংয়ে ওদের অভাব বুঝতে দেয়নি দুই তরুণ পেসার ইমরান খান ও রাহাত আলি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওরা আরও ভাল করবে। পাকিস্তান র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করবে বলেও আশাবাদী আমি।’ গত বিশ্বকাপ খেলে আরেক তারকা শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে ওয়ানডে থেকে অবসর নেন মিসবাহ। ৪১ বছর বয়সী অধিনায়ক হিসেবে খেলছেন কেবল টেস্ট ম্যাচে। শিবনায়ণ চন্দরপলের সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী টেস্ট ক্রিকেটার তিনি। হয়ত অবসরটা খুব দূরে নয়। এমন সময় এই অর্জন আসলেই আনন্দের। পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল সেই ২০০৬ সালে, ইনজামাম-উল হকের নেতৃত্বে। ‘চতুর্থ ইনিংসে রান চেজ করে জিততে আমাদের দুর্বলতা অনেক দিনের। মিসবাহদের এই সাফল্যে সেটি দূর হবে। দলটি তারুণনির্ভর, সামনে এমন আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং আরও দেখতে পাব।’ বলেন সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম।
×