ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হার কুলিয়ে উঠতে পারল না মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৮ জুলাই ২০১৫

হার কুলিয়ে উঠতে পারল না মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ মাঠে নামার আগেই কী তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা হার শঙ্কা ভেবে খেলেছেন! তা না হলে শরীরী ভাষাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস চলার সময় কেন কোন ইতিবাচক মনোভাব দেখা যায়নি। ফিল্ডিং মিস হয়েছে কয়েকবার। মুশফিকুর রহীম তো সবাইকে অবাকই করে দিলেন। বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে নিচু হয়ে তার পায়ের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, অথচ উইকেটের পেছনে থেকেও বল ছাড়ার আগে থাকা স্থান থেকে একটুও নড়চড় হলেন না! সাব্বির রহমান দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। অথচ তার সামনে দিয়েই বল চলে যায় সীমানার বাইরে। এতেই কী বোঝা যায় না বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০তে হাল ছেড়ে দিয়েই খেলেছেন। তাতে ফলটাও হয়েছে তেমনই। ৩১ রানের হারই হয়েছে নিয়তি। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ হারও হয়ে যায় বাংলাদেশের। টি২০ সিরিজে কুলিয়ে উঠতেই পারল না বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য যেন আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন। যেখানে বাংলাদেশের কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের অসুবিধা হওয়ার কথা, ধস নামার কথা; সেখানে উল্টো হচ্ছে। দুই স্পিনার অভিষিক্ত এডি লেই (৩/১৬) ও এ্যারন ফাঙ্গিসো (৩/৩০) মিলেই বাংলাদেশকে আটকে দিলেন। ১৭০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে হার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রথম টি২০’র হিসেবে বাংলাদেশ জিতে যাবে, তা কেউই ভাবেনি। তাই বলে স্পিন আতঙ্কে ১৩৮ রানেই অলআউট হয়ে যাবে বাংলাদেশ! ওয়ানডের আত্মবিশ্বাস সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ থেকে নেয়ার কথা জোর গলাতেই ক্রিকেটাররা বলেছেন। কিন্তু উল্টো সেই বিশ্বাসে আঘাতই আসল। ১ থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যানই রাখা হয়। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন, জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলা রনি তালুকদার ও লিটন কুমার দাস। এরপরও এমন ধস নামল। উদ্বোধনী জুটি যা ৪৬ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে দিতে পারলেন। যেই তামিম ইকবাল (১৩) এমন মুহূর্তে আউট হলেন এরপর ৫৫ রানে সৌম্য সরকার (৩৭), ৬৯ রানে সাকিব আল হাসান (৮) সাজঘরে ফিরলেন। ৮২ রানে গিয়ে তো তাসের ঘরের মতো বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস হলো। এ মুহূর্তে গিয়ে একসঙ্গে ৩ উইকেটের পতন ঘটে গেল। সাব্বির রহমান রুম্মন (১) ও মুশফিকুর রহীমকে (১৯) আউট করে হ্যাটট্রিকের আশাই জাগিয়ে ফেলেন লেই। সেটি আর হয়নি। সেই সঙ্গে সাকিবকে আউট করার যে খায়েশ ছিল লেই’য়ের, সেটিও পূরণ হয়নি। কোন রান যোগ হয়নি, নাসির হোসেনও আউট হয়ে যান। প্রথম টি২০’র মতো যেন আবারও হারের ব্যবধান কত কম হয় সেদিকেই তখন সবার নজর থাকে। ১০৩ রানে লিটন কুমার দাসও (১০) আউট হয়ে যান। এরপর মাশরাফি পরপর দুই ছক্কা মেরে একটু দর্শকহীন স্টেডিয়ামে আমেজ আনেন। তা বেশিক্ষণ বজায় থাকেনি। ১২৫ রানে গিয়ে সুইপ করতে গিয়েই বিপত্তিতে পড়েন মাশরাফি (১৭)। কাইল এ্যাবোট লেগ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন। ১৩৭ রানে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রনি তালুকদার (২১) আউট হওয়ার পর আর ১ রান যোগ হতেই মুস্তাফিজুর রহমানও সাজঘরে ফেরেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসও ১৯.২ ওভারে ১৩৮ রানে শেষ হয়ে যায়। আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার কথা বলেছেন। সেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরু থেকেই আক্রমণ চালিয়েছে। উইকেট নিয়ে চিন্তা নেই। টস জিতলেই আগে ব্যাটিং নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। ঠিক সেই কাজটিই দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস করেছেন। সাকিব বলেছেন, ‘টস হেরে ভালই হয়েছে। হারের পর বিশেষ করে টি২০ ক্রিকেটে আগে ব্যাট নিলে ভাল হবে না বল, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।’ তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য তা কঠিন হয়নি। ব্যাটিং নিয়ে ঝলকও দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে এর আগে তিন টি২০ খেলেছে, এবার চতুর্থ টি২০তে খেলতে নেমে চার ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্কোরটিই গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। করেছে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান। ১০ ওভার পর্যন্ত তো দক্ষিণ আফ্রিকার কোন উইকেটই পড়েনি। রানও এর মধ্যে হয়ে গেছে ৯৫। অবশ্য শুরু থেকেই যেভাবে দুই ওপেনার ডি কক ও এবি ডি ভিলিয়ার্স খেলা শুরু করেন, তাতেই বোঝা যায় বড় স্কোরই দাঁড় করাতে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা। শেষে দেখা গেল ১৭০ রানের কাছাকাছিই চলে গেছে দলটি। এর আগে দেড় শ’ রানের বেশি করলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার সেই কৃতিত্ব দেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে যে ডি কক ও ডি ভিলিয়ার্স মিলে ৯৫ রানের জুটি গড়লেন, সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা জুটিও। তাতে মূলত অনেক দূর এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ৯৫ রানে কক (৪৪) আউটের পর ৭ রানের মধ্যে জেপি ডুমিনি (৬), ভিলিয়ার্সের (৪০) উইকেট পতন হয়ে যায়। নাসির ২ বলে দুটি উইকেট নেন। ডুমিনিকে আউট করার পরের বলেই ভিলিয়ার্সকেও আউট করেন। ১৩৬ রানে গিয়ে প্লেসিসকে (১৬) আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৫২ রানে হারা প্রথম টি২০তে উইকেট না পেলেও এবার উইকেট পেলেন মুস্তাফিজ। আর কোন উইকেটই দক্ষিণ আফ্রিকার পড়ল না। এরপর ডেভিড মিলার (৩০*) ও রিলি রুশো (১৯*) মিলে ১৬৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যান। বাংলাদেশ যে হারবে তা তখনই বোঝা যায়। যে দলটি প্রথম টি২০তে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ১৪৮ রানই অতিক্রম করতে পারেনি, তারা ১৭০ রান করবে কিভাবে? শেষপর্যন্ত করতে পারলও না। এত রানের সামনে কুলিয়ে উঠতে না পেরে আবারও তাই হার হলো।
×