ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;জাফরুল্লাহর রায় ১২ জুলাই

কিশোরগঞ্জের হুসাইন ও মোসলেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ জুলাই ২০১৫

কিশোরগঞ্জের হুসাইন ও মোসলেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার সৈয়দ মোঃ হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই দুই আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের পর পরই মোসলেম প্রধানকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের ও বিচারালয় নিয়ে কটূক্তি করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহর রিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশের জন্য ১২ জুলাই রবিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এদিকে ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের পর পরই কিশোরগজ্ঞের রাজাকার মোসলেম প্রধানকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবং তাকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মঙ্গলবার এই দুই রাজাকারের গ্রেফতারে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেন, এ দুই আসামির বিরুদ্ধে ৬টি অপরাধ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তাদেরকে গ্রেফতার করা জরুরী। কেননা তারা সাক্ষীদেরকে ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন। ফলে তদন্ত কাজে বেঘাত ঘটছে। সৈয়দ মোঃহুসাইন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছোট ভাই। হুসাইন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিকলি থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আদালতকে জানান, নিকলির রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হুসাইন (৬৪) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের (৬৬) বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে হত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত এখনও চলছে। আসামি এবং তাদের লোকজন তদন্ত কাজে বাধা ও সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। এ কারণে তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন। হুসাইনের বড় ভাই হাসান আলীকে গত ৯ জুন ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আদালত অবমাননা ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের ও বিচারকে নিয়ে কটূক্তি করায় পুনরায় আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশের জন্য ১২ জুলাই রবিবারদিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ দিন নির্ধারণ করেছেন। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ ও আবেদনকারী মনোরঞ্জন ঘোষাল।শুনানিতে মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, তিনজন বিচারক ও বিচারালয় সম্পর্কে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে আদালতকে অবমাননা করা হয়। এটি আদালতের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। এ নিয়ে ৩য় বারের মতো আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হলো জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এর আগে ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত। শাস্তি হিসেবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদ- দেয়া হয়। পরে জাফরুল্লাহর এক আবেদনে সুপ্রীমকোর্টেরচেম্বার আদালত ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল সাজা ঘোষণার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না। যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এ মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট,কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণœ করা। জাফরুল্লাহ বলেন, বিচারপতিরা আদেশের কোথাও সুস্পষ্টভাবে বলেননি, কোন জায়গাতে আমরা বা বিশেষ করে আমি এ তিনটি বিষয় ভঙ্গ করেছি। তাদের যুক্তি নাই বলেই তিন বিচারপতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন এ মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। পৃথিবীর মধ্যে এটা অভদ্রতাজনিত ব্যবহার। রায়টা অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত দাবি করে ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, সম্পূর্ণ রায়টাই তারা পড়েছেন উষ্মা ও রাগ নিয়ে। এদিকে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবেদনে তাকে দ্বিতীয় দফায় আদালত অবমাননার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ ১৬ জুন স্থগিত রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টেরচেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত। একই সঙ্গে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন আবেদনটি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপীল বেঞ্চে এ আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
×