ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৯৬ জন ফিরলেন মালয়েশিয়া থেকে

মানবপাচারে নারী সিন্ডিকেট ॥ ৫ জন আটক

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৮ জুলাই ২০১৫

মানবপাচারে নারী সিন্ডিকেট ॥ ৫ জন আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানব পাচারকারীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে র‌্যাব। একের পর এক আস্তানায় হানা দিয়ে আটক করছে পাচারকারী চক্রের সদস্যদের। র‌্যাবের এ সব অভিযানে দেখা যায়- এতে শুধু পুরুষরাই জড়িত নয়, নারীদেরও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ অপরাধে জড়িত। এমনই একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব-২। রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-২ মানব পাচারের অভিযোগে ৩ নারীসহ ৫ জনকে আটক করে। এদিকে মানবপাচারের শিকার হওয়া আরও ৯৬ জন বাংলাদেশী মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। মঙ্গলবার তাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে-এতদিন শুধু মানবপাচারের দায়ে পুরুষদেরই আটক করা হতো, এখন দেখা যাচ্ছে এ অপরাধে নারীদের সমন্বয়ে গড়া একটি বড় সিন্ডিকেটও জড়িত। সোমবার গভীর রাতে তুরাগ থানার কামারপাড়ার (রোড নং-৬, ওয়ার্ড নং-২ ) একটি চারতলা ভবন থেকে আটক করা হয় ৫ জনকে। তাদের মধ্যে তিনজনই নারী। আটককৃতরা হলেন- রিনা বেগম (৩০), সীমা আক্তার মৌসুমী (১৯), শিল্পী আক্তার (২২), মোঃ আব্দুল লতিফ ও শহিদুল। আটকের পর তিন নারীই জানায়- এ পাচার চক্রের মূল হোতার নাম শাহিন খন্দকার। উত্তরার ১০নম্বর সেক্টরে তার একটি অফিস রয়েছে। পরে ওই অফিস থেকেই আটক করা হয় বাকি দুজনকে। এ সময় ১৯৫টি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ওই কোম্পানির ম্যানেজার মোঃ লতিফ জানান-সম্প্রতি সৌদি আরব শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হতে গৃহকর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ জন্য উভয় দেশের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারের নজরদারি ও তদারকির মাধ্যমে সৌদি আরবে বে-সরকারী রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সৌদিতে নতুন করে নারী কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাহিন বড় ধরনের নারী পাচারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। এ কাজে সহায়তা করার জন্য নুরুল ইসলাম (খুলনা), আবুল হোসেন(ঢাকা), এনামুল (চট্টগ্রাম) ও কামরুল(বগুড়া)সহ আরও কয়েকজন দালাল দেশের বিভিন্ন স্থানে তৎপর হয়। তারা গ্রামের গরিব ও সহজ সরলমনা মেয়েদের উন্নত জীবন যাত্রা ও উচ্চ বেতনের চাকরিতে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে সংগ্রহ করে। তাদের ফুসলিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। তারপর পাসপোর্টসহ বিদেশ গমনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র কোম্পানি জমা নেয়। ম্যানেজার আরও জানায়- ওই প্রতিষ্ঠানটির রিক্রুটিং এজেন্সির কোন লাইসেন্স নেই। মূলত প্রতারণা করে বিদেশে বিক্রয়ের উদ্দেশে তারা নারীদের পাচারের উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সংগ্রহ করে উত্তরার কামারপাড়ায় শাহিনের ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। এখানে রেখেই তাদের ধাপে ধাপে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের প্রস্তুতি চলে। ঠিক এমন সময় র‌্যাব-২ একটি দল তৎপর হয়ে হানা দেয় মঙ্গলবার। এ সময় ৯ জন নারী ভিকটিমকেও উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিম দৌলতুন নেছা (২৮) জানান, তার বাড়ি বগুড়া। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আগে দালাল কামরুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই দালাল সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানোর অজুহাতে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ঢাকায় এনে ভাষা শিক্ষা ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করার কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে এনে আটকে রাখে। কদিন কাটানোর পরও মেডিক্যাল ও ভাষা শিক্ষার কোন সাড়া মিলেনি। এতে দৌলত নিজেই দালাল কামরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার দেখা পাননি। বার বার ফোন করেও তার কোন সাড়া না পেয়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অন্যান্য ভিকটিমও জানান, তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অফিসটিতে বেশ কিছু প্রোফাইল পাওয়া যায়, যেখানে টাকার লেনদেনের বিষয়টিও র‌্যাবের নজরে আসে। এদিকে মঙ্গলবার মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা আরও ৯৬ জন বাংলাদেশীকে নিজ নিজ স্বজনদের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এপিবিএন এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের প্রত্যেকের পরিচয় শনাক্ত করার পরই নিজ নিজ অভিভাবকদের কাছে সোপর্দ করা হয়। তারা পাচারের নির্মম কাহিনী বর্ণনা করে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা জানিয়েছে কিভাবে কার মাধ্যমে পাচারের শিকার হন।
×